নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগাতিপাড়া:
নাটোরের বাগাতিপাড়া পৌরসভার মেয়র এ.কে.এম শরিফুল ইসলাম লেলিন। প্রটোকল না মেনে নিজ কার্যালয়ে লাগিয়েছেন নতুন এসি।
জানা গেছে, বিশ্বব্যাপী জ্বালানির দাম বৃদ্ধির কারণে সরকার যখন বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হচ্ছে, তখন প্রটোকল না মেনে উল্টোপথে হেঁটে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পরেই চলতি মাসের ৭ তারিখে তার নিজ দপ্তরে ৫টন শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র (এ.সি) বসিয়ে বিদ্যুৎ অপচয় করছেন। কাউন্সলর, কর্মচারীদের সম্মানী ভাতা ও বিদ্যুৎ বিল বকেয়া অবস্থায় পৌরসভায় এ.সি’র ব্যবহার রীতিমতো বাস্তবতা ও বিবেক-বর্জিত হলেও পৌর মেয়র লেলিন কাজটি করেছেন বলে নিশ্চিত করেন পৌরসভার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রকৌশলী ফেরদৌস ইসলাম।
এদিকে পৌর এলাকায় তার এই উদ্ধত্যপূর্ণ কাজের জন্য ইতিমধ্যেই ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম হয়েছে।
পৌরবাসীরা বলছে, সমগ্র দেশে যখন সরকার বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে তখন মেয়র লেলিনের এই এসি বিলাশ সরাসরি সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান বলে মনে করছেন বিশিষ্ট জনরা।
এ ব্যাপারে সাবেক পৌর মেয়র মোশাররফ হোসেন দাবী করেন, বাগাতিপাড়ার মতো সি ক্যাটাগরীর পৌরসভাতে এসি লাগানো শুধু বিদ্যুৎতের অপচয় না এটা নতুন মেয়রের ক্ষমতার অপব্যবহার এবং ঔদ্ধত্য প্রকাশ। কেননা এসি’র বিদ্যুৎ বিলটা পৌরসভার জনগণের ট্যাক্সের থেকে দিতে হবে, বিধায় আলটিমেটলী এর ভোগান্তিতে পড়বে পৌরবাসী। তাই মেয়রের নিজ ঘরে এসি লাগানো বিলাসীতা বৈকী।
নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর বাগাতিপাড়া সাব-জোনাল অফিসের দায়িত্বে থাকা এ.জি.এম প্রকৌশলী মুনজুর রহমান জানান, পৌরসভার প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা বিল বকেয়া আছে। মেয়র সাহেব আবার লোড বৃদ্ধি করে এ.সি বসানোয় যে কোন মুহুর্তে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে এবং আরো অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলও আসবে। ফলে বকেয়ার পরিমাণও বেড়ে যাবে। দেশের এই বিদ্যুৎ ঘাটতি সময়ে বকেয়া কালেকশন নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন বলেও জানান তিনি। এদিকে এলাকাবাসী বলছেন এতো বিপুল অংকের বিল বাঁকি থাকা সত্তেও পৌরসভার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করা একটা বড় অন্যায়। অবিলম্বে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা না হলে পৌরসভার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার দাবীও জানান তারা।
কাউন্সলর-কর্মচারীদের সম্মানী ভাতা ও বিদ্যুৎ বিল বকেয়া সহ বাগাতিপাড়া পৌরসভা প্রায় ১ কোটি টাকার দেনার কথা স্বীকার করে মেয়র এ.কে.এম শরিফুল ইসলাম লেলিন বলেন, সেবা গ্রহীতারা আমার রুমে এসে গরমে অনেক কষ্ট পোহায় এবং বিভিন্ন সময় মিটিং করতে আমাদের অনেক সমস্যা হয় তাই পরিষদের সিন্ধান্ত নিয়েই এ.সি লাগিয়েছি। এটা বিলাসীতা নয়, অনেক প্রয়োজনীয় বলেও দাবি করেন তিনি। তবে এসি যন্ত্র বসানো ও বিদ্যুৎ বিল খরচ কিভাবে জোগাড় করবেন জানতে চাইলে বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।
উপজেলা মডেল প্রেসক্লাব’র সভাপতি কুতুব-উল-আলম বলেন, ইন্টেরিয়র ডেকোরেশনের সৌন্দর্য রক্ষা আরাম-আয়েশ ও বিলাসীতার জন্য পৌরভবনে যদি এভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র বসানো না হয় তাহলে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। তা দিয়ে প্রত্যন্ত এলাকার বিপুল পরিমাণ মানুষকে বিদ্যুৎ দেয়া সম্ভব হবে।