নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগাতিপাড়া:
মাচায় পটল চাষে লাভবান হচ্ছেন নাটোরের বাগাতিপাড়ার কৃষকরা। সারা বছর চাহিদা থাকায় এবং অন্য ফসলের তুলনায় অধিক লাভবান হওয়ায় পটল চাষে ঝুঁকেছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। এদিকে চলতি বছর পুরো মৌসুমজুড়ে দাম ভালো পাওয়ায় চাষিরা অনেক খুশি ।
স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছেন, সেক্স ফেরোমন ট্র্যাপ (কীটনাশক ফাঁদ) ব্যবহার করে নিরাপদ সবজি উৎপাদন কৃষকদের মাঝে বেশ সাড়া জাগিয়েছে। কারণ এতে কীটনাশকের ব্যবহার প্রায় অর্ধেক হ্রাস পায়। এছাড়াও পটলের আবাদ বাড়াতে সব সময় আধুনিক পদ্ধতিতে পটল উৎপাদন এবং পোকা-মাকড় ও রোগ দমনে আইপিএম পদ্ধতিসহ বিভিন্ন কার্যকর পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন কৃষি বিভাগ।
স্থানীয় পটল চাষীরা জানায়, চাষ উপযোগি মাটির পাশাপাশি সময় মতো সেচ ও সার প্রয়োগসহ সব ধরণের যত্ন ঠিকমত করায় এই এলাকার পটল চাষিরা ভালো ফলন পাচ্ছেন। জমি তৈরি থেকে শুরু করে বীজ, সার, মাচা তৈরিসহ সব মিলিয়ে পটলের আবাদে বিঘা প্রতি খরচ হয় প্রায় ৩২ থেকে ৩৪ হাজার টাকা। এক বার কট সুতা দিয়ে মাচা তৈরি করলে ৩ থেকে ৪ বছর পর্যন্ত পটল চাষ করা যায়। প্রতি বছর সবখরচ বাদ দিয়ে বিঘায় প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা লাভ হয়।
জিগরী গ্রামের পটল চাষী আবু রায়হান বলেন, নিজস্ব কোন জমি না থাকায় মানুষের বাড়িতে দিনমজুরের কাজ করেন তিনি। গত কয়েক বছর থেকে জমি লিজ নিয়ে মাচায় পটল চাষ করছেন। এতে সংসারে এসেছে স্বচ্ছলতা। এবছরও এক বিঘা দুই কাঠা জমি ১৪ হাজার টাকায় লিজ নিয়ে পটল চাষ করেছেন। চলতি মৌস‚মে এখন পর্যন্ত প্রায় ৮৫ হাজার টাকার পটল বিক্রি করেছেন। আশা করছেন সব খরচ বাদ দিয়ে এবছর ওই জমি থেকে ৬৫ হাজার টাকা লাভ হবে।
বসুপাড়া গ্রামের পটল চাষি শহিদুল ইসলাম বলেন, এবছর নিজ জমির পাশাপাশি লিজ নেয়া চার বিঘা জমি থেকে সপ্তাহে প্রায় ৮ থেকে ১০ মণ পটল উঠছে তাঁর। এদিকে গত চৈত্র মাস থেকে চলতি মাস পর্যন্ত প্রতি কেজি ১০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৬০ টাকা কেজি দরে পাইকারী দামে পটল বিক্রি করেছেন। চলতি বছরে বেশিরভাগ সময় দাম ভালো থাকায় অধিক লাভের আশা তাঁর।
পাইকার ব্যবসায়ী বোরহান উদ্দিন হিরন বলেন, এখন পটলের দাম ভালো। গত শনিবার পাইকারী প্রতিমণ পটল ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায় কিনেছেন। আর এই উপজেলা থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৭০০ থেকে ৭৫০ মণ পটল ঢাকা, রংপুর, ইশ্বরদী, ভেড়ামারাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোমরেজ আলী বলেন, বাগাতিপাড়া উপজেলায় এ বছর প্রায় ১ হাজার ২০০ বিঘা জমিতে পটলের চাষ হয়েছে। বিপনন সহজ ও কম পরিশ্রমে অধিক লাভবান হওয়ায় এই এলাকায় পটল একটি সম্ভাবনাময় ফসল হিসেবে দেখা দিয়েছে।