নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগাতিপাড়া:
নাটোরের বাগাতিপাড়ায় কাদিরাবাদ ক্যান্টনমেন্ট স্যাপার কলেজের পরিচ্ছন্নতা কর্মী বরাত আলী (৪৬) এর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পূর্বে উপজেলার তালতলা গ্রামে নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান। পুলিশ তার বাড়ি থেকে মরদেহ উদ্ধার করে পরদিন বুধবার সকালে ময়না তদন্তে পাঠিয়েছে। তবে নিহতের পরিবারের দাবি বরাত আলীকে তার তৃতীয় স্ত্রী কানিজ ফাতিমা নির্যাতন করে হত্যা করেছে। অন্যদিকে তার স্ত্রীর পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে দাবি করা হয়েছে, বরাত আলী গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পুলিশ জানায়, প্রায় দুই বছর পূর্বে বরাত আলীর প্রথম স্ত্রী মারা যান। এর কিছুদিন পর তিনি একই জেলার সিংড়া উপজেলায় দ্বিতীয় বিয়ে করেন। অল্পদিনের মধ্যেই বরাত আলী দ্বিতীয় স্ত্রীকে তালাক দেন। সবশেষে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি তৃতীয় স্ত্রী হিসেবে পার্শ্ববর্তী লালপুর উপজেলার ধুপইল গ্রামের কানিজ ফাতেমাকে বিয়ে করেন।
এদিকে বরাত আলীর প্রথম স্ত্রীর দুই সন্তান রয়েছে। এক ছেলে আলমগীর হোসেন ও এক মেয়ে খালেদা আক্তার। তারা উভয়েই বিবাহিত। তৃতীয় বিয়ের পর থেকেই বরাত আলীর ও তার স্ত্রীর মধ্যে বিবাদ লেগেই থাকতো। গত ২২সেপ্টেম্বর স্ত্রী কানিজ ফাতিমার বাবার বাড়িতে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে হাতা-হাতির ঘটনা ঘটে। এরপর বরাত আলীকে অসুস্থত অবস্থায় ওই দিন সকালে সিএমএইচে নেয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে ওই দিনই তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে গত ২ অক্টোবর ছাড় দেওয়া হয়। পরে বাড়ি নেয়া হলে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পূর্বে তিনি মারা যান।
নিহতের মেয়ে খালেদা আক্তার বলেন, বিয়ের পর থেকেই সৎমা সন্তানদের সাথে তার বাবার সম্পর্ক রাখতে দিতে চাননি। বিভিন্ন সময় জমিজমা সৎমা নিজের নামে লিখে নিতে চাইতেন। এসব নিয়ে সৎমা ও বাবার মধ্যে কলহ লেগেই থাকতো। এর জেরে ঘটনার দিন ২২ সেপ্টেম্বর সৎমা বাবার বাড়িতে ডেকে নিয়ে তার বাবা বরাত আলীকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে। পরে গুরুত্বর অবস্থায় ক্যান্টনমেন্টের সিএমএইচে ভর্তি করে। নির্যাতনের শিকার হয়ে তার বাবা ১২ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে মারা যান। তিনি অভিযোগ করে বলেন, তার সৎ মা কানিজ ফাতিমা তার বাবাকে নির্যাতন করে হত্যা করেছেন। তিনি হত্যাকারির ফাঁসি দাবি করেন।
দয়ারামপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাহাবুর ইসলাম মিঠু বলেন, বরাত আলী তার ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ছিলেন। তার মৃত্যুর পর খবর পেয়ে তাদের বাড়িতে গিয়েছিলেন।
বাগাতিপাড়া মডেল থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে নিহতের সুরতহাল করা হয়েছে। সেখানে মরদেহের পায়ে, কানের পাশে, মাথায় এবং নিতম্বে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। পরে মঙ্গলবার রাতে মরদেহ উদ্ধার করে পরদিন বুধবার সকালে ময়না তদন্তের জন্য নাটোর সদর আধুনিক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পেলে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ইতোমধ্যে লালপুর পুলিশের সহায়তায় অভিযুক্ত কানিজ ফাতিমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এদিকে এঘটনায় নিহতের ছেলে আলমগীর হোসেন একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছেন।
তিনি আরও বলেন, নিহতের পরিবারের সদস্যদের দাবি বরাত আলীকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। তবে অভিযুক্তদের পরিবার থেকে পুলিশকে জানানো হয়েছে, বরাত আলী ঘটনার দিন গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন।