শনিবার , ডিসেম্বর ২১ ২০২৪
নীড় পাতা / জেলা জুড়ে / বাগাতিপাড়া / বাগাতিপাড়ায় মৃত মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে পিতা দেখিয়ে ভাতা উত্তোলন করে ভাতিজা

বাগাতিপাড়ায় মৃত মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে পিতা দেখিয়ে ভাতা উত্তোলন করে ভাতিজা

 নিজস্ব প্রতিবেদক:  
নাটোরের বাগাতিপাড়ায় মুক্তিযোদ্ধা সম্মানি ভাতা পেতে কাগজে কলমে অবিবাহিত মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে পিতা দেখিয়ে ২০১৮ সাল থেকে ভাতা উত্তোলন করছে ভাতিজা বাবলু হোসেন। সে এই ভাতার লোভে নিজের পিতাকে বাদ দিয়ে মায়ের নাম ঠিক রেখে মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে পিতা দেখিয়ে জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরি করে প্রতারণার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধার সম্মানি ভাতা উত্তোলন করে আসছে। সোনালি ব্যাংক বাগাতিপাড়া শাখা থেকে বাবলু হোসেনের নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধার সম্মানী ভাতা উত্তোলনের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এদিকে কোন ব্যক্তি মৃত হওয়ায় ৬ বছর পরেও কিভাবে পুত্র সন্তানের বাবা হলেন? এই প্রশ্নও উঠেছে নানা মহলে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা আয়ুব আলী শেখ ১৯৭৯ সালে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। সে সময় তিনি অবিবাহিত ছিলেন। তার মৃত্যুর ছয় বছর পর ১৯৮৫ সালে জন্ম হয় বাবলু হোসেনের। অথচ সেই চাচাকে পিতা দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় ৬ বছর ধরে মুক্তিযোদ্ধা সম্মানি ভাতা উত্তোলন করে আসছে প্রতারক বাবুল হোসেন। এই বাবুল হোসেন (৩৯) বাগাতিপাড়া উপজেলার দায়ারামপুর ইউনিয়নের ডুমরাই (ঢাকাপাড়া) গ্রামের মোঃ তৈয়ব আলী (৭৭) ও মোছা জরিনা বেগম (৬০) দম্পতির ছেলে।

স্থানীয় অনেকেই আক্ষেপ করে জানান, বাগাতিপাড়ার ডুমরাই (ঢাকাপাড়া) গ্রামের মৃত অশোল আলী প্রামানিকের ছেলে ও বাবলু হোসেনর চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা আয়ুব আলী শেখ ১৯৭৯ সালে অবিবাহিত অবস্থায় সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু বরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর ৬ বছর পরে বাবলু হোসেন এর জন্ম হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা আয়ুব আলী শেখ ব্যক্তি জীবনে অবিবাহিত ও তাঁর কোন ওয়ারিশ না থাকায় তাঁর প্রাপ্য সম্মানি ভাতা পাওয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাবলু হোসেন এই জালিয়াতির অশ্রয় নেয়।

উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, মোঃ বাবলু হোসেন এর জন্ম ১৯৮৫ সালে। ২০০৮ সালে ভোটার হয় সে। জন্ম সনদ ও জাতীয় পরিচয় পত্র হতে পাওয়া তথ্য মতে ২০০৮ সালে তার পিতার নাম ছিল মোঃ তৈয়ব আলী এবং মাতা জরিনা বেগম। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা সম্মানি ভাতা নিজে নামে পাওয়ার লোভে ২০১৮ সালে সে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করে তার পিতা মোঃ তৈয়ব আলীর নাম পরিবর্তন করে চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা আয়ুব আলী শেখকে পিতা হিসেবে সংযোজন করে। জাতীয় পরিচয় পত্র ও জন্ম নিবন্ধনে মাতার নাম তার নিজ মা জরিনা বেগমেরই নাম রাখে।

স্থানীয় বসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা (বাংলাদেশ রেলওয়ের অবসর প্রাপ্ত অ্যাটেনডেন্ট) আনোয়ার হোসেন (৭৫) জানান, তিনি এবং আয়ুব আলী ছোটবেলা থেকেই একই সাথেই লেখাপড়া করেছেন। তাঁরা উভয়েই ভারতের মিত্রবাহিনীর অধিনে ট্রেনিং করেছিলেন এবং ৭ নং সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধও করেছিলেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা আয়ুব আলী অবিবাহিত অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন। আয়ুব আলীর মৃত্যুর অনেক বছর পরে বাবলু হোসেন এর জন্ম হয়। আর বাবলু হোসেন আয়ুব আলীর ভাই তৈয়ব আলীর ছোট ছেলে।

ওই এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধ সুরুজ আলী (৭৫) জানান, আয়ুব আলী সড়ক দুর্ঘটনায় ঢাকায় মৃত্যু বরণ করেন। আয়ুব আলীর কোনো স্ত্রী, সন্তান ছিলনা। তিনি ১৯৭৯ সালে মৃত্য বরণ করেন। মৃত্যুর সময় তিনি আয়ুব আলীকে দাফন করার জন্য ওই সময় ঢাকায় যান। তিনি আরও জানান, বাবলু হোসেন আয়ুব আলীর ভাতিজা । বাবলু হোসেন ভাতার লোভে পড়ে জাতীয় পরিচয় পত্র পরিবর্তন করেছে বিষয়টি এলাকার অনেকেই জানেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আক্কাস আলী ঘটনার সত্যাতা নিশ্চত করে বলেন, বাবলু হোসেন জাতীর পরিচয় পত্রে তার পিতার নাম পরিবর্তন করেছে। সেই সময় সংশোধনীর কাগজপত্র ডিজিটাল না হওয়ায় হাতে লিখেই পাঠানো হতো। মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা আয়ুব আলীর কোনো স্ত্রী, সন্তান না থাকায় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা অফিস এর লোকজনের সুপারিশেই সংশোধনী কাগজপত্র পাঠানো হয়েছিল।

এ বিষয়ে মোঃ বাবলু হোসেন বলেন, ছোট বেলায় তার চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা আয়ুব আলী শেখ তাকে পালক পুত্র হিসেবে নেন। তার প্রথম জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয় পত্রে জন্মদাতা পিতার নাম তৈয়ব আলী ভুল করে দিয়ে ফেলেন। পরে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারদের সঙ্গে পালক পুত্রের বিষয়টি কথা বলে তাদের সহায়তায় পিতার নাম তৌয়ব আলী পরিবর্তে আয়ুব আলী শেখ নামে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করে।

বাগাতিপাড়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এর ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান জানান, বাবলু হোসেন এর বিষয়টি তিনি জেনেছেন। বাবলু হোসেন জাতীয় পরিচয় যখন সংশোধন করেন সেই সময় অজাদ হোসেন উপজেলা ডেপুটি কমান্ডার এর দাযিত্বে ছিলেন। তিনিই সেই সময় ভগিযোগী করে বাবলু হোসেন এর কাজপত্র সংশোধনে সাহায্য করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান আরও জানান, সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আজাদ হোসেন আর মুক্তিযোদ্ধা নেই। ২০১৯ সালে তার নামের গেজেট বাতিল হয় এবং ২০২৩ সালে তার ভাতা বন্ধ হয়ে যায়।

এ বিষয়ে সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আজাদ হোসেনকে তার মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার শরীর খারাপ, কথা বলতে পারছেন না। আর সেই সময় তিনি দ্বায়িত্বে ছিলেন-না।

বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনামিকা নজরুল বলেন, এ বিষয়ে তিনি আবগত না। কাগজপত্রাদি দেখে ব্যবস্থা নেবেন

আরও দেখুন

লালপুরে কুরেছান বেগমের ইন্তেকাল 

নিজস্ব প্রতিবেদক লালপুর,,,,,,,,,,,,,,দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার নাটোরের লালপুর প্রতিনিধি ও মডেল প্রেসক্লাবের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য সাহীন …