নিজস্ব প্রতিবেদক:
নাটোরের বাগাতিপাড়ায় সালাইনগর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।অভিযোগ রয়েছে সরকারি নির্দেশনার তোয়াক্কা না করে প্রকল্পের বিভিন্ন খাতে নির্ধারিত বরাদ্দের কম খরচ করে টাকা বাঁচিয়ে পকেট ভরছে প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। গরিবের ওই সকল ঘর নির্মাণে ব্যবহৃত হচ্ছে মানহীন সব উপকরণ। তবে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও ইউএনও কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন এসব ঘর নির্মাণে তারা সরকারি বরাদ্দের চেয়েও বেশি অর্থ খরচ করছেন।
তবে বেশি অর্থের যোগান কোথায় থেকে আসছে তার সঠিক উত্তর তারা দিতে পারেননি।বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় উপজেলার সালাইনগরে পুরাতন জরাজীর্ণ সিআইসিট ব্যারাকের স্থানে সেমি পাকা একক গৃহ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ৪০টি একক গৃহ নির্মাণাধীন রয়েছে। সেখানে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এ প্রকল্পে প্রতিটি একক গৃহ প্রতি সরকারি বরাদ্দ ২ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। ৪০টি ঘরের বিপরীতে মোট ব্যায় ধরা হয়েছে ১ কোটি ১৪ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সহায়তায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাগাতিপাড়া উপজেলা প্রশাসন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকল্প এলাকার একাধিক বাসিন্দারা জানান, নির্মাণাধীন আশ্রায়ণ প্রকল্পের এসব ঘরের জন্য দরজা-জানালা তৈরি করা হয়েছে নির্ধারিত ওজনের চেয়ে কম ওজনের। প্রতিটি জানালার ওজন রয়েছে ২২-২৩ কেজি। দায়সারা রং দিয়ে চলছে এসব দরজা জানালায় রঙের কাজ। ঘরের চালা নির্মাণের কাঠামো তৈরির জন্য রাখা নি¤œমানের কাঠ রং করতে ব্যবহার করা হচ্ছে রঙের নামে মানহীন ভুসি কালি। নি¤œমানের উপকরণ ব্যবহার করা ও ওজনে কারচুপি করে নির্ধারিত বরাদ্দের টাকা হাতিয়ে নিতেই প্রকল্পের এমন বাস্তবায়ন বলে দাবি তাদের। নি¤œমানের উপকরণ ব্যবহার ও দরজা-জানালার ওজনের কারচুপির বিষয়ে জানতে চাইলে বাগাতিপাড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মুমিনুল হক জানান, আশপাশের যেকোনো উপজেলার চাইতে আমাদের কাজের মান ভালো হচ্ছে।
প্রতিটি বড় দরজায় সরকারি বরাদ্দ ৪ হাজার ৩শ টাকা। ভ্যাট, আইটি ও কন্ট্রাক্টর প্রফিট বাবদ ২০ শতাংশ বাদ দিলে নির্ধারিত বরাদ্দ থাকে ৩ হাজার ৪শ ৪০ টাকা। প্রতিটি বড় দরজা দেওয়া হচ্ছে ৪০ কেজি ওজনের। যার প্রতি কেজির মূল্য ১২০ টাকা। প্রতিটি বড় দরজায় সরকার নির্ধারিত বরাদ্দের চেয়ে ১ হাজার ৩শ ৬০ টাকা বেশি খরচ হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতিটি ছোট দরজায় নির্ধারিত বরাদ্দের চেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে ৭০০-৮০০ টাকা। আবার প্রতিটি জানালা তৈরিতে বরাদ্দ থাকা ৩ হাজার ২শ টাকায় প্রতি কেজি ১২০ টাকা হিসেবে সাড়ে ২৬ কেজি ওজনের জানালা তৈরি করা সম্ভব। তবে খরচ বাঁচাতে প্রতিটি জানালায় ২ কেজি করে ওজনে কম দিচ্ছেন বলেও জানান এ কর্মকর্তা।নিজের খেয়াল-খুশি মত সরকার নির্ধারিত বরাদ্দের কমবেশী করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করার যৌক্তিকতা নিয়ে জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি এ কর্মকর্তা।
বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের উপসহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা (সংযুক্ত) বজলুর রশিদ বলেন, কাজ ভালো হচ্ছে। কয়েকটি জানালার ওজনে একটু সমস্যা ছিলো সেগুলো আমরা ফেরত দিয়েছি। জানালা নিয়ে বেশি ঝামেলা হয় বলে আমি এটার দায়িত্ব নেইনি।
ইউএনও স্যার নিজেই দরজা জানালার বিষয়টি দেখছেন। দরজা-জানালা তৈরিতে নির্ধারিত বরাদ্দের চেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে। খরচের এই অতিরিক্ত টাকার জোগান দিতে অন্যান্য নির্মাণ ব্যয় বাঁচানো হচ্ছে বলেও দাবি বজলুর রশিদের। তিনি আরো বলেন, আমরা যে রেটে কাজ করাচ্ছি অন্য কেউ এই রেটে কাজ করাতে পারছে না। যেখানে ১০ হাজার খরচ হওয়ার কথা সেখানে আমরা ৮ হাজার টাকা দিয়ে কাজ করাচ্ছি।এ বিষয়ে বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাইমেনা শারমীন বলেন,স্পেসিফিকেশন অনুযায়ীই কাজ করা হচ্ছে। আমাদের কাজ দেখে সকলেই প্রশংসা করছে।