নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাইরে ফিটফাট ভিতরে সদরঘাট। এমনি এক প্রবাদের সঙ্গে মিল রয়েছে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতাল। ২০২২ সালে ভবনটি উদ্বোধন হলেও এর ভেতরের বহু যন্ত্রপাতি এখনো পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গভাবে স্থাপন করা যায়নি। ফলে ১০০ শয্যা বিশিষ্ট থেকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের কোনো সুবিধাই পাচ্ছে না নাটোরবাসী। আড়াইশ শয্যার হাসপাতাল হলেও জনবল কাঠামো ৫০শয্যারও নেই। এতে যে সকল প্যাথলজিকাল যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে তার অধিকাংশই বিকল হয়ে পড়ে আছে অথবা এটি চালানোর মতো দক্ষ জনবলও নেই। যে কারণে রোগীদের বাইরে ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করাতে হয়। এতে যেমন বারে খরচ তেমনি হয়রানির শিকার হতে হয় রোগীর আত্মীয়-স্বজনদের। সাড়ে ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পাঁচ তলা ভবনে শয্যা স্থাপন করলেও পুরাতন এবং নতুন ভবনে রোগীর এত বেশি চাপ থাকে যে অনেক মুমূর্ষু রোগীকেও মেঝেতে পড়ে থেকে চিকিৎসা নিতে হয়। প্রতিদিন বহির্বিভাগে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার রোগী চিকিৎসা নেন। হাসপাতালে ভর্তি থাকেন ৩০০ থেকে সাড়ে তিনশ রোগী। এত বিপুল সংখ্যক রোগী একসঙ্গে হাসপাতালে ফাঁকায় স্যানিটেশনের ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক। হাসপাতালের সর্বত্র নোংরা অপরিচ্ছন্ন হয়ে পড়ে আছে। এমন অবস্থা দেখার কেউ নেই। হাসপাতালের আশেপাশের এলাকায় রয়েছে অনেকগুলো ডায়গনস্টিক সেন্টার এবং ক্লিনিক। হাসপাতালের অধিকাংশ ডাক্তার এবং কর্মচারীরা এই সকল ডায়গনস্টিক এবং ক্লিনিক এর মালিকানার অংশ থাকায় হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম চরমে। নাটোর সদরের হালসা ইউনিয়নের এক রোগীর অভিভাবক জানালেন, চিকিৎসক পরীক্ষা করার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন তার রুম থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দালালরা সেই পরামর্শপত্র নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু করে দিয়েছে আমরা তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছি। সাংস্কৃতিক কর্মী রফিকুল ইসলাম নান্টু জানান, নাটোর হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্তদের কোনো চিকিৎসা হয় না। কেউ হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগীর ভাব দেখেই চিকিৎসক সঙ্গে সঙ্গে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে থাকেন। তিনি আরো জানান, এর ফলে অনেক রোগী প্রাথমিক চিকিৎসা না পেয়েও রাজশাহী যাওয়ার পথেই মৃত্যুবরণ করেন। এটি আমাদের জন্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক। হাসপাতালে একটি জেনারেটর থাকলেও খরচের অর্থ না থাকায় সেটি বন্ধ হয়ে পড়ে আছে অনেক দিন ধরে। ফলে অপারেশন থিয়েটার চলাকালীন সময়ে বিদ্যুৎ চলে গেলে টর্চের আলোতে অপারেশন চালাতে হয় চিকিৎসকদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালে কর্মরত এক চিকিৎসক জানালেন, জেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির কোনো সভা অনুষ্ঠিত হয়নি ১৫ বছর ধরে। হাসপাতালে কী কী অভাব রয়েছে কী করা দরকার এই সংক্রান্ত পরামর্শ দেয়ার কোনো জায়গা নেই। ফলে চিকিৎসকদের সেবা গ্রহীতাদের এবং নাগরিকদের পরামর্শ গ্রহণ করা হয়নি। সচেতন নাগরিক কমিটি নাটোরের সাবেক সভাপতি ও সাংবাদিক রমেন রায় জানান, এর আগে হাসপাতালে চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে মতবিনিময় সভায় হাসপাতালের নানা সমস্যার কথা নাগরিকরা তুলে ধরতে পারতেন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা না পাওয়ায় এই ধরনের সভা আহ্বান করা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাওয়ার জন্য হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এবং সিভিল সার্জন ডাঃ মসিউর রহমানকে বারবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।