নিউজ ডেস্ক:
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেনের রাষ্ট্রীয় ডিনার পার্টিতে যোগ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় (বাংলাদেশ সময় বুধবার ভোর ৫টা) নিউইয়র্ক সিটির ম্যানহাটনে ‘দ্য মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্ট’র মিলনায়তনে এ অভ্যর্থনা হচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন জানান, নয়াদিল্লি সফরকালে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে কিছু কথা হয়েছে। তার জের হিসেবে বাইডেনের ডিনার পার্টিতে আরও কথা হওয়ার সুযোগ রয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। সে সূত্রে আমরা পরস্পরের সহযোগিতার দিগন্ত আরও প্রসারিত করতে চাই এবং মানবতার সার্বিক কল্যাণে যুক্তরাষ্ট্র তার সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। এক্ষেত্রে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সবচেয়ে বেশি অর্থ সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রস আধানম গ্যাব্রিয়াসের সঙ্গে ১৮ সেপ্টেম্বর সোমবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে এক বৈঠক করেন। এ সময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক বাংলাদেশের সার্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নতকরণ এবং সবার জন্য সহজ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য গৃহীত পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের থিম্যাটিক অ্যাম্বাসাডর এবং অটিজম ও নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার সম্পর্কিত জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ পুতুলও সেখানে ছিলেন। জাতিসংঘের চলতি ৭৮তম সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে নিউইয়র্কে এসেছেন। জাতিসংঘ সফরের প্রথম দিনের কর্মসূচির আলোকে সোমবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর হোটেলে স্থাপিত কন্ট্রোল রুমে সংবাদ সম্মেলন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। পাশে ছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত এম এ মুহিত, উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি তৌফিক ইসলাম শাতিল, নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদা, প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি নূর এলাহি মিনা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ইমদাদ চৌধুরী।
জাতিসংঘে এসডিজি সম্পর্কিত শীর্ষ বৈঠকে বাংলাদেশের বক্তব্য উপস্থাপন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে মোমেন। তিনি জানান, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য তথা এসডিজি অর্জনে উন্নত দেশগুলো প্রতি বছর ১ বিলিয়ন ডলারের অনুদান প্রদানের অঙ্গীকার করলেও এখন পর্যন্ত একটি ডলারও দেয়নি। এর ফলে অনেক দেশ কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম না হলেও উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এসডিজি বা টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট বাস্তবায়নে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ড. মোমেন বলেন, বাংলাদেশ সবার অংশগ্রহণে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে কাজ করে যাচ্ছে। দারিদ্র্য এবং ক্ষুধা নিরসনে বাংলাদেশের প্রচেষ্টার ফলাফলস্বরূপ বাংলাদেশের অতি দারিদ্র্যের হার ২০২২ সালে ৫.৬ শতাংশে নেমে এসেছে, যা ২০০৬ সালে ছিল ২৫.১ শতাংশ। কিন্তু এসডিজি বাস্তবায়নে বৈশ্বিক অংশীদারির ক্ষেত্রে বড় ধরনের ফারাক বিদ্যমান। ড. মোমেন বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, আমরা চাই, ‘দোহা প্রোগ্রাম অব অ্যাকশন ফর এলডিসির অধীনে প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন। আমরা চাই নিয়মভিত্তিক বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থা। অর্থায়ন ইস্যুতে আমাদের বক্তব্য হলো, রেয়াতি ঋণ এবং জীবন রক্ষাকারী প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ন্যূনতম শর্তাদি আরোপ। সরকারি খাতের পাশাপাশি বেসরকারি খাত যাতে এসডিজি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতে পারে সে জন্য যথেষ্ট প্রণোদনা থাকা দরকার বলে আমরা মনে করি।
এ দিন বাংলাদেশ এবং হাঙ্গেরির মধ্যে তিনটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এগুলো হলো- অর্থনৈতিক সহযোগিতা বিষয়ক চুক্তি, ২০২৪-২০২৬ সালের জন্য স্টাইপেনডিয়াম হাঙ্গারিকাম প্রোগ্রামের কাঠামোর মধ্যে সহযোগিতার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক এবং একই সময়ের জন্য স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক। বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন এবং হাঙ্গেরির পক্ষে দেশটির পররাষ্ট্র ও বাণিজ্যবিষয়ক মন্ত্রী এসব চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন। চুক্তি স্বাক্ষরের পর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে খাদ্য নিরাপত্তা, জ্বালানি নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তনসহ দ্বিপক্ষীয় অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা হয়। সে সময় রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে হাঙ্গেরির সহযোগিতা কামনা করি। এ পরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে মিয়ানমারের ওপর হাঙ্গেরি চাপ অব্যাহত রাখবে বলে হাঙ্গেরির পররাষ্ট্র ও বাণিজ্যমন্ত্রী আশ্বস্ত করেন। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চাপ অব্যাহত রাখার অংশ হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অধীনে প্রদত্ত ইবিএ সুবিধা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ যাতে না পায় সে বিষয়ে হাঙ্গেরি সরকারের চেষ্টা থাকবে বলেও তিনি জানান। বৈঠকে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর নিয়ে আলোচনা হয়। প্রস্তাবিত সফরে দ্বৈত কর পরিহার, বিনিয়োগের নিরাপত্তা বিষয়ক চুক্তি এবং পানি সহযোগিতা চুক্তি স্মারক স্বাক্ষর হবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করা হয় বলে উল্লেখ করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ঘানার পররাষ্ট্রমন্ত্রী শালি আয়োরকর বচিইয়ির সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের সৌজন্য সাক্ষাৎ হয় এ দিন। এ সময় বাংলাদেশ এবং ঘানার মধ্যে বিদ্যমান সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রসারণের বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা করেছেন ড. মোমেন। বিশেষত, বাণিজ্য সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন এবং এতে দুই দেশই লাভবান হবে বলে একমত হয়েছেন উভয় মন্ত্রী-এ তথ্য জানিয়ে ড. মোমেন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ঝুঁকিপূর্ণ দেশসমূহের একসঙ্গে কাজ করা জরুরি বলে আমরা অভিমত ব্যক্ত করেছি এবং আগামী কপ সম্মেলনে আমাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ তুলে ধরার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছি। ড. মোমেন জানান, সোমবার সন্ধ্যায় তিনি জার্মানির চ্যান্সেলরের আমন্ত্রণে আয়োজিত নৈশভোজে যোগদান করেন। সেটি ছিল জার্মানির জাতিসংঘে সদস্য হওয়ার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে। সামনের বছর বাংলাদেশেরও ৫০ বছর পূর্তি উৎসব হবে। তাই জার্মানির অনুষ্ঠানে গিয়ে কিছুটা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করলেন বলেও মন্তব্য করেন ড. মোমেন।
এদিকে শেখ হাসিনাকে নাগরিক সংবর্ধনার হোস্ট কে হবেন তা নিয়ে চরম উত্তেজনা চলছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ পরিবারে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার অভিমত জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের নেত্রী যখন যে দেশেই যান, সেখানেই গণসংবর্ধনা অথবা নাগরিক সংবর্ধনা হয়ে থাকে। নিউইয়র্কেও হবে। তবে সেখানে কে সভাপতিত্ব করেন আর কে সঞ্চালনা করবেন-সেটি একান্তভাবেই নেত্রীর নির্দেশের ওপর নির্ভর করছে। তাই উত্তেজনার কোনো অবকাশ থাকতে পারে না।