বাংলা ও ইংরেজি ভাষার ‘মাতৃভাষাপিডিয়া’ প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট (আমাই)। আগামী দু’বছরের মধ্যে এই দুই ভাষার ৫টি করে দশটি খণ্ড প্রকাশ করা হবে। বুধবার এই কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
এ উপলক্ষে আমাই মিলনায়তনে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান।
আমাই মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. হাকিম আরিফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মাতৃভাষাপিডিয়ার উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, আমাই’র সাবেক মহাপরিচালক ও ‘মাতৃভাষা পিডিয়া’ সম্পাদনা পরিষদের সদস্য অধ্যাপক ড. জীনাত ইমতিয়াজ আলী, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. শিশির ভট্টাচার্য্য, অধ্যাপক ড. স্বরোচিষ সরকার, ভাষাবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. সিকদার মনোয়ার মুর্শেদ, ড. রেজাউল করিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অতিথিরা হাতে হাতে মাতৃভাষাপিডিয়ার থিমপোস্টারের মোড়ক উন্মোচন করেন।
পরে ড. হাকিম আরিফ যুগান্তরকে জানান, ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি প্রদান করে। এই স্বীকৃতি পৃথিবীর সব মাতৃভাষা সংরক্ষণে বাংলা ভাষাকে দায়বদ্ধ করে তুলেছে। সেই দায়বদ্ধতা থেকে মাতৃভাষার বিশ্বকোষ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ২০২৪ সালের মধ্যে ‘মাতৃভাষাপিডিয়া’ রচনার কাজ শেষ করা হবে। ওইবছর ২১ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী এটির উদ্বোধন করবেন।
জানা গেছে, দুই ভাষায় প্রকাশিতব্য এই কর্মের একটির নাম দেওয়া হয়েছে মাতৃভাষাপিডিয়া আর ইংরেজি সংস্করণের নাম দেওয়া হবে ‘মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ পিডিয়া’। এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর পৃষ্ঠপোষক হিসাবে থাকছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী।
মাতৃভাষা পিডিয়া কী: মাতৃভাষা মানে মায়ের ভাষা। মানুষ যে ভাষাটি তার পিতামাতা বা অভিভাবকের কাছ থেকে ছোটবেলায় শিখে থাকে। যে ভাষাটি কোনো একটি অঞ্চলে বহুল প্রচলিত এবং যে ভাষায় ব্যক্তির মনোজগতের বিকাশ ঘটে।
মাতৃভাষাপিডিয়া সাধারণ বিশ্বকোষ নয়। এটি হবে প্রধানত প্রত্যেকের মাতৃভাষায় ব্যবহৃত ধ্বনি, শব্দ, বাক্য, শব্দের ব্যুৎপত্তি, শব্দ ও বাক্যের অর্থ ও প্রয়োগ, ভাষার ব্যাকরণসহ ভাষা-সংশ্লিষ্ট সামগ্রিক আলোচনাসমৃদ্ধ একটি বিশ্বকোষ। দীর্ঘমেয়াদি এই কার্যক্রম দুটি পর্যায়ে সম্পাদিত হবে।
মাতৃভাষা পিডিয়ায় পৃথিবীর সকল দেশের সকল জাতির মাতৃভাষা স্থান পাবে। তবে প্রথমে এটিতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ব্যবহৃত মাতৃভাষাগুলোর শব্দ স্থান পাবে। একইসঙ্গে সূচনা হিসেবে বর্তমানে শব্দ-তথ্য সংগ্রহ এবং সম্পাদনা করা হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক- এই দুই প্রেক্ষাপটে মাতৃভাষাপিডিয়া রচনা জরুরি বলে জানান অধ্যাপক হাকিম আরিফ। বৈশ্বিক অন্যান্য আগ্রাসনে মতো ভাষাও আগ্রাসনে পড়েছে। এতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ব্যবহৃত বিভিন্ন ভাষা ক্রমশ বিলীন হতে শুরু করেছে। আবার বাংলা ভাষার প্রভাবে দেশের নৃ-ভাষাগুলোও হারিয়ে যাচ্ছে। এই দেশীয় বাস্তবতায় ভাষা সংরক্ষণের জন্য মাতৃভাষাপিডিয়া রচনা করা প্রয়োজন।