নিউজ ডেস্ক:
গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। দুই দেশের সীমান্তবর্তী মানুষ তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান, উৎসব ও পালা-পার্বণে অংশগ্রহণের জন্য এই কার্ড ইস্যু করা যেতে পারে।
সোমবার (১০ জানুয়ারি) নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার খাজুর এলাকায় বিজিবি’র শীতকালীন প্রশিক্ষণ পরিদর্শন শেষে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিভিন্ন পালা পার্বণ ও উৎসবে এসব এলাকার মানুষের যাতায়াত আদিকাল থেকে। এখন সীমানা হয়েছে। পাসপোর্টে ভিসা ছাড়া কেউ পারাপার হলে, সেটা হয়ে যায় অবৈধ অনুপ্রবেশ। এ বিষয়টাকে অনুধাবন করে বিজিবি ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিএসএফকে অনুরোধ করা হয়েছে যে এসব ক্ষেত্রে সাময়িক কার্ড ইস্যু করা যায় কি না। এ বিষয়টা নিয়ে বিজিবি যাচাই-বাছাই করছে। হয়তো ভবিষ্যতে এ বিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।
প্রতিরক্ষা নীতিমালা অনুযায়ী যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে বিজিবি সেনাবাহিনীর অভিযানিক পরিকল্পনা অনুযায়ী যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। ২০১৯ সাল থেকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিজিবি শীতকালীন মহড়ায় অংশগ্রহণ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৯ ডিসেম্বর থেকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিজিবি’র রাজশাহী সেক্টরের ৫টি ব্যাটালিয়ন ও ১টি কোম্পানি শীতকালীন যৌথ প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করছে।
এমজি পরিখা (বাংকার)।
মহাদেবপুর উপজেলার খাজুর এলাকার ক্ষেতের ধান কৃষকরা ঘরে তুলেছে। বরেন্দ্র অঞ্চলের উঁচু-নিচু জমিতে সবজি চাষ খুব একটা হয় না। যেদিক চোখ যায়, কাটা ধানের ইঞ্চি চারেক শুকনা গাছ। পুরো মনে হয় ফ্যাকাসে হলুদের চাদর বিছিয়ে দিয়েছে। এই বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে চলছে যৌথ প্রশিক্ষণ। খাজুর এলাকার সড়ক ধরে যেতেই একটি ছোট কালভার্ট। সেটি পেরিয়ে মাঠে নামতেই দেখা গেল সরিষা খেতের পাশে বিজিবি সদস্যরা পরিখা খনন করে রকেট লাঞ্চার তাক করে আছে শত্রুপক্ষের দিকে। একটু দূরে দেখা গেলে একজন বিজিবি সদস্য ঘাড় অবধি গভীরতার পরিখায় ঢুকে রাইফেল তাক করে আছেন। তার মাথার হেলমেট শুকনা খড় দিয়ে এমনভাবে ঢেকে দেওয়া হয়েছে যে দূর থেকে শত্রুপক্ষ বুঝতে পারবে না। আরেকটু দূরে এলএমজি পরিখা (বাংকার)।
প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী একজন বিজিবি সদস্য জানালেন, এটিকে প্রতিরক্ষা অবস্থান বলে। শত্রুপক্ষ যদি সড়ক দিয়ে যানবাহন করে অতিক্রম করতে থাকলে, সেক্ষেত্রে তারা কালভার্টের নিচ থেকে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জবাব দিবে।
শীতকালীন যৌথ প্রশিক্ষণ পরিদর্শনে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম বলেন, এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিজিবি সদস্যদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বিজিবির মধ্যে বিভিন্ন আভিযানিক, প্রশাসনিক এবং সাংগঠনিক সমন্বয় নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। বিজিবি এখন ত্রিমাত্রিক বাহিনীর সক্ষমতা অর্জন করেছে। আমাদের পার্বত্য এলাকার সীমান্ত এলাকার অনেক অংশ এখনও অরক্ষিত। তবে সম্প্রতি আমরা বিওপিগুলোর মধ্যে দূরত্ব অনেক কমিয়ে এনেছি। সীমান্তবর্তী সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। এটি সম্পন্ন হলে আমাদের পার্বত্য এলাকার সীমান্ত সুরক্ষা সম্ভব হবে।
সীমান্তে হত্যা জিরো টলারেন্সে এখনো আসেনি-এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বিজিবির ডিজি বলেন, যারা ভিসা ছাড়াই সীমান্তে অনুপ্রবেশ করছে, তাদেরকে আমরা আটক করছি। দিনের বেলায় এ ধরনের অনুপ্রবেশ ঘটলে তাদেরকে আটক করে আইনের হাতে সোপর্দ করা হচ্ছে। কিন্তু রাতের বেলায় সীমান্ত অতিক্রম করছে অসৎ উদ্দেশ্যে। অনেক ক্ষেত্রে সীমান্তের ওপারে ৫ কিলোমিটার ভিতরে হত্যার ঘটনা ঘটছে। সেগুলোকে তো সীমান্ত হত্যা বলা যায় না। আমরা তারপরও চেষ্টা করছি সীমান্ত হত্যা কমিয়ে আনতে। বিএসএফও আমাদের আশ্বাস দিচ্ছে।
বিজিবি মহাপরিচালকের পরিদর্শনের সময় বিজিবি রাজশাহী সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, জিওসি ১১ পদাতিক ডিভিশনসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।