রবিবার , নভেম্বর ২৪ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের মডেল ॥ কোবিন্দ

বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের মডেল ॥ কোবিন্দ

নিউজ ডেস্ক:
বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিন দিনের সফর শেষে শুক্রবার দুপুরে নিজ দেশে ফিরেছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। যাওয়ার আগে ভারতীয় সম্প্রদায় এবং ঢাকায় ভারতীয়দের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় বলেছেন, ঢাকা সফরে এসে বাংলাদেশের জনগণের উষ্ণতা ও ভালবাসা গভীরভাবে ছুঁয়েছে তাকে। বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বকে ভারত মূল্যায়ন করে উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের মডেলে পরিণত হয়েছে। ভারতীয়দের হৃদয়ে বাংলাদেশের একটি বিশেষ স্থান রয়েছে। আমাদের রয়েছে আত্মীয়তা, ভাগাভাগি করা ভাষা এবং সংস্কৃতির প্রাচীন বন্ধনের ভিত্তি করে রচিত এক অনন্য ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এদিন সকালে রাজধানীর রমনা কালী মন্দিরের নতুন ভবনও উদ্বোধন করেন তিনি।

শুক্রবার দুপুর একটা চার মিনিটে ভারতের উদ্দেশে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন রামনাথ কোবিন্দসহ তার সফরসঙ্গীরা। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন তাদের বিদায় জানান। বিমানে উঠার আগে হাত নেড়ে সবাইকে বিদায়ী সম্ভাষণ জানান বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের সম্মানিত এই অতিথি।

এদিন সকালে ভারতীয় সম্প্রদায় এবং ঢাকায় ভারতীয়দের সঙ্গে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় রামনাথ কোবিন্দ আরও বলেন, ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্বের এই ঐতিহাসিক ৫০তম বছরে ঢাকায় আসতে পেরে আমি আনন্দিত। একজন ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশীর সঙ্গে দেখা করার আনন্দ ও সম্মানের পাশাপাশি বাংলাদেশের জনগণের উষ্ণতা এবং ভালবাসা আমাকে গভীরভাবে ছুঁয়েছে। আমি বাংলাদেশে আমাদের বন্ধুদের আবারও আশ্বাস দিচ্ছি যে, ভারত আপনাদের অসাধারণ সদিচ্ছা এবং বন্ধুত্বকে মূল্যায়ন করে। আমরা ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত থাকার, যৌথভাবে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অর্জন এবং আমাদের জনগণের আশ-আকাক্সক্ষা পূরণের প্রত্যাশা করছি।

মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের জনগণের লড়াই ন্যায়সঙ্গত ছিল উল্লেখ করে রামনাথ বলেন, আমাদের সম্পর্ক দুই দেশের বিচক্ষণ নেতৃত্বের দ্বারা লালিত হচ্ছে। বিশ্ববাসীর কাছে প্রমাণিত হয়েছে যে, বাংলাদেশের জনগণের লড়াই ন্যায়সঙ্গত ছিল। এই লড়াই ছিল মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য এবং বাংলাদেশের অভ্যুদয় ছিল প্রকৃতপক্ষে ক্ষমতার শক্তিকে পরাজিত করে অধিকারের শক্তির জয়।

ভারতের রাষ্ট্রপতি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারীর পর এটাই আমার প্রথম বিদেশ সফর। আমি এই সফরকে সবচেয়ে সঠিক বলে মনে করছি, কারণ আমার প্রথম বাংলাদেশ সফর এই বিশেষ বছরে ঘটছে। যখন আমরা যৌথভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার এবং আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী উদ্যাপন করছি। স্বৈরাচার থেকে স্বাধীনতা অর্জনে বাংলাদেশের জনগণের বিপুল ত্যাগের প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাই। ভয়ঙ্কর প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য আপনাদের অদম্য সাহসিকতাকে আমরা অভিনন্দন জানাই।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক পরিবর্তন হয়েছে জানিয়ে কোবিন্দ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বড় ধরনের আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে। ভারতও এই প্রশংসনীয় প্রবৃদ্ধির সাক্ষী হয়েছে। আমাদের দুই দেশের জনগণের মধ্যে যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক যোগসূত্র তৈরি হয়েছে সেটিও এই প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের যৌথ গল্পে অবদান রেখেছে। আমি আনন্দিত যে, উভয় দেশের নেতৃত্বই জানেন আমাদের প্রবৃদ্ধির গতিপথ পরস্পর সংযুক্ত এবং সম্পদ ও অভিজ্ঞতার আদান-প্রদান হলো টেকসই উন্নয়নের মূলমন্ত্র। আমি সবুজ শক্তি এবং পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও জোরদার করার বিশাল সম্ভাবনা দেখছি।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভারতের রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ভারত বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী অর্থনীতির দিকে তার যাত্রায় সহায়তা করতে এবং বৃহত্তর সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় অংশীদার হতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমি উভয়পক্ষের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে, বিশেষ করে বাংলাদেশ এবং আমাদের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সংযোগ নতুন উচ্চতায় নেয়ার জন্য এই সুযোগটি কাজে লাগাতে অনুরোধ করছি। তিনি বলেন, তরুণরাই আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ। আমাদের অবশ্যই এই জনসংখ্যাগত সুফল কাজে লাগাতে হবে, যাতে এটি জাতি গঠনে অবদান রাখতে পারে। কোবিন্দ বলেন, একটি গতিশীল, অন্তর্ভুক্তিমূলক, গণতান্ত্রিক ও সম্প্রীতিপূর্ণ সমাজের বাংলাদেশের মৌলিক মূল্যবোধ বজায় রাখা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অন্যতম প্রধান অবদান। আমি রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করেছিলাম যে, ভারত এমন একটি বাংলাদেশকে সমর্থন করবে যা এ দেশের স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে আবির্ভূত মূল্যবোধগুলোকে তুলে ধরে।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আগে রমনা কালী মন্দির উদ্বোধন প্রসঙ্গে রামনাথ বলেন, আপনাদের সঙ্গে দেখা করার আগেই আমি ঐতিহাসিক রমনা কালী মন্দির থেকে ফিরেছি, যেখানে আমার সংস্কারকৃত মন্দির উদ্বোধন করার সৌভাগ্য হয়েছে। আমি একে মা কালীর আশীর্বাদ হিসেবে দেখি। বাংলাদেশ-ভারতের সরকার ও জনগণ মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী বাহিনী কর্তৃক ধ্বংসকৃত মন্দিরটি পুনরুদ্ধারে সহায়তা করেছে। এই মন্দিরটি ভারত ও বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধনের প্রতীক।

সম্প্রতি ভারতের অর্থায়নে রমনা কালী মন্দিরের সম্প্রসারিত নতুন ভবনের সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার পর উদ্বোধনের অপেক্ষা ছিল। যেটি এদিন উদ্বোধন করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি। সকাল ১০টার দিকে তিনি স্ত্রী সবিদা কোবিন্দ ও মেয়ে স্বাতী কোবিন্দকে নিয়ে রমনা কালী মন্দিরে আসেন। এ সময় কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান তাদের অভ্যর্থনা জানান। ভবনটির উদ্বোধন শেষে ভারতের রাষ্ট্রপতি মন্দিরে পূজা অর্চনা ও প্রার্থনা করেন। পরে তিনি মন্দির কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কুশলবিনিময় করেন।

রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের আমন্ত্রণে গত বুধবার (১৫ নবেম্বর) বেলা ১১টা ২০ মিনিটে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে সস্ত্রীক ঢাকায় আসেন ভারতের রাষ্ট্রপতি। ঢাকায় পৌঁছানোর পর বিমানবন্দরে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ কোবিন্দকে স্বাগত জানান। সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতিকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। বিমানবন্দর থেকে মোটর শোভাযাত্রার মাধ্যমে রাজধানীর উপকণ্ঠে সাভারে জাতীয় শহীদ স্মৃতিসৌধে যান ভারতের রাষ্ট্রপতি। সেখানে তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের নয় মাসব্যাপী স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এছাড়া একটি চারাগাছ রোপণ ও দর্শনার্থী বইয়ে সই করেন। স্মৃতিসৌধের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ধানম-ি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন তিনি।

ওইদিনই বিকেলে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ভারতীয় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বৈঠক করেন। সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের সঙ্গে ভারতের রাষ্ট্রপতির বৈঠক ও দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। এরপর বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির আয়োজনে নৈশভোজে অংশ নেন রামনাথ কোবিন্দ ও শেখ হাসিনা।

সফরের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) ভারতীয় রাষ্ট্রপতি ন্যাশনাল প্যারেড গ্রাউন্ডে বাংলাদেশের বিজয় দিবসের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ‘সম্মানিত অতিথি’ হিসেবে যোগ দেন। বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ‘মহাবিজয়ের মহানায়ক’ প্রতিপাদ্যে অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে যোগ দিয়ে ভাষণ দেন তিনি।

আরও দেখুন

মিথ্যা মামলা থেকে খালাস বাগাতিপাড়ার দুই সাংবাদিক

নিজস্ব প্রতিবেদক বাগাতিপাড়া,,,,,,,,নাটোরের বাগাতিপাড়ায় মারামারি ও চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলা থেকে খালাস পেলেন দুই সাংবাদিক। রবিবার …