নিউজ ডেস্ক:
ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ হয়ে জামালপুর পর্যন্ত একটি মিটার গেজ রেলপথ রয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের। জামালপুর থেকে রেলপথটি শেরপুর-বকশীবাজার হয়ে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার দাঁতভাঙ্গা পর্যন্ত সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে সংস্থাটির। এ অংশে নতুন একটি ডুয়াল গেজ রেলপথ নির্মাণের জন্য সমীক্ষা ও নকশা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে ঢাকার জয়দেবপুর থেকে নতুন আরেকটি ডুয়াল গেজ রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে সংস্থাটির। রেলওয়ের এ পরিকল্পনার মধ্যে রুটটিতে বিদ্যুচ্চালিত ট্রেন প্রবর্তনের একটি প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে এসেছে চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন লিমিটেড (সিএসসিইসি) নামের একটি কোম্পানি। জিটুজি ভিত্তিতে তারা এ রুটে বিদ্যুচ্চালিত ট্রেন চালুর প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করে দিতে চায়।
চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিএসসিইসি বর্তমানে টাঙ্গাইল-রংপুর চার লেন মহাসড়ক প্রকল্পের তিন প্যাকেজের কাজ বাস্তবায়ন করছে। পূর্বাচলে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী কেন্দ্র নির্মাণেও কাজ করেছে এ প্রতিষ্ঠান। চলমান ও সম্পন্ন করা এসব কাজের উদাহরণ দিয়ে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে সিএসসিইসি জানিয়েছে, তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ-জামালপুর-রৌমারীর মধ্যে ইলেকট্রিক ট্রেন প্রবর্তনের জন্য একটি প্রকল্পে কাজ করতে চায়। প্রস্তাবে চীনে ও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রেলপথসহ বিভিন্ন ধরনের যোগাযোগ অবকাঠামো তৈরির অভিজ্ঞতার কথাও উল্লেখ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ঢাকা-রৌমারীর মধ্যে বিদ্যুচ্চালিত রেলপথ তারা জিটুজি পদ্ধতিতে করে দিতে চায়।
২০১৭ সালে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে জারি করা এক পরিপত্রে বলা আছে, চীন সরকারের অর্থায়নে জিটুজি ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা প্রকল্পের ক্ষেত্রে সীমিত দরপত্র পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। যেহেতু এখন পর্যন্ত সরাসরি দরপত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশ রেলওয়ে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন করেনি, সেহেতু চীনের প্রস্তাবিত প্রকল্পটি নিয়ে আরো যাচাই-বাছাই করতে চায় তারা।
এরই মধ্যে ইলেকট্রিক ট্রেন চালুর প্রস্তাবের ওপর একটি মতামত তৈরি করেছে রেলওয়ে। এতে বলা হয়েছে, সিএসসিইসির দাখিল করা প্রস্তাবটির বিষয়ে বাংলাদেশে চীনা দূতাবাসের অবস্থান অর্থাৎ চীন সরকারের অবস্থান কী তা জানা যেতে পারে। সিএসসিইসির প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অর্থায়নে চীন সরকারের সংশ্লিষ্টতা কতখানি তা জানা যেতে পারে। সেই সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অর্থায়নের বিষয়ে চীন সরকারের পক্ষ থেকে কীভাবে গ্যারান্টি দেয়া হবে তাও নিশ্চিত হতে হবে।
রেলওয়ের মতামতে আরো বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানের প্রকল্পে অর্থায়নের ক্ষেত্রে ঋণের শর্তগুলো কী ধরনের হয়, সে সম্পর্কে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের মতামত নেয়া যেতে পারে। আলোচ্য প্রতিষ্ঠানের দাখিল করা প্রস্তাবে ঋণ পরিশোধের হার, অন্যান্য প্রকৃতির ঋণের তুলনায় এ পদ্ধতিতে ঋণ গ্রহণের সুবিধা ও ঝুঁকির বিষয়টি সুস্পষ্ট হতে হবে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে কীভাবে গ্যারান্টি দেয়া হয়, তাও জানা প্রয়োজন বলে মত দিয়েছে রেলওয়ে।
ঢাকা-ময়মনসিংহ-রৌমারী রুটে বিদ্যুচ্চালিত ট্রেন প্রবর্তনের জন্য চীনা প্রতিষ্ঠানের আগ্রহের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বর্তমান সরকার ধারাবাহিকভাবে রেলের উন্নয়ন করছে। আমরা পর্যায়ক্রমে দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ রেলপথকে ব্রড গেজে রূপান্তর করব। বিদ্যুচ্চালিত ট্রেনও গুরুত্বপূর্ণ রেল রুটগুলোয় প্রবর্তনের জন্য আমরা কাজ করছি। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থা বাংলাদেশ রেলওয়ে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। আমরা উন্নয়ন সহযোগীদের সবসময় স্বাগত জানাই। তাদের প্রস্তাবগুলো সরকার যাচাই-বাছাই করে দেখছে।’
প্রসঙ্গত, এর আগে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের মধ্যে হাইস্পিড রেলপথ নির্মাণের জন্য একই ধরনের প্রস্তাব দিয়েছিল চীনের দুই কোম্পানি। চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিআরসিসি) ও চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশনের (সিসিইসিসি) প্রস্তাব ছিল, ঢাকা-চট্টগ্রামের মধ্যে হাইস্পিড রেলপথ নির্মাণের জন্য তারা প্রথমে নিজেদের মালিকানাধীন একটি কোম্পানি গঠন করবে। এ কোম্পানি গঠন করা হবে বাংলাদেশের প্রচলিত আইন-কানুন মেনে। রেলপথটি নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থানও করবে এ কোম্পানি। সুদসহ রেলপথটির নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও ট্রেন পরিচালনার ব্যয় এবং কোম্পানির লাভসহ যে অর্থ খরচ হবে, তা ঋণ হিসেবে দেয়া হবে। সিআরসিসি ও সিসিইসিসি স্বল্প সুদে ব্যাংকঋণেরও ব্যবস্থা করে দেবে। তবে এ ঋণ শোধ করতে হবে বাংলাদেশ রেলওয়েকে। ঋণ শোধ করার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে সময় পাবে ২০ বছর। প্রতি বছর দুটি করে মোট ৪০টি কিস্তিতে ঋণ শোধ করতে হবে। ঋণের জামিনদার হবে বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়।
পরবর্তী সময়ে একই রেলপথ নির্মাণের জন্য চীনেরই আরেক প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ডিজাইন করপোরেশন (সিআরডিসি) একই রুটে হাইস্পিড রেলপথ নির্মাণের প্রস্তাব দেয়। এ প্রস্তাবে প্রতিষ্ঠানটি রেলপথ তৈরি করে দেয়ার বদলে সেটির ৮০ শতাংশ মালিকানা দাবি করে।