নিজস্ব প্রতিবেদক:
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনার টিকা কোভিশিল্ড বাংলাদেশে রপ্তানির প্রক্রিয়া শুরু করেছে। প্রথম চালানে যে টিকা পাঠানো হবে তার জন্য এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সে দেশের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এরপর আরো কিছু প্রক্রিয়া শেষে ইন্ডিয়া কাস্টমসে যাবে কাগজপত্র।
এদিকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে দ্বিতীয় ধাপের টাকা ছাড় করার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর প্রস্তুত হয়ে আছে ওই টিকা দেশে এসে পৌঁছার পর সেগুলোর ব্যাচভিত্তিক যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে আরেক দফা ছাড়পত্র দেওয়ার জন্য। ছাড়পত্র দেওয়ার পরই মূলত এই টিকা ব্যবহার করা যাবে।
সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে যুক্ত একটি সূত্র কালের কণ্ঠকে জানায়, বাংলাদেশ থেকে প্রয়োজনীয় নথিপত্র সেরামে পৌঁছানোর পর ভারত সরকারের তরফ থেকেও ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এর পর থেকেই শুরু হয় প্রস্তুতি। সেদিক থেকে বাংলাদেশে ২৫ জানুয়ারি টিকা পাঠানোর যে কথা রয়েছে তা আরো এগিয়েও আসতে পারে। অর্থাৎ তার আগে যেকোনো দিন অল্প পরিমাণে হলেও বাংলাদেশে করোনার টিকা আসতে পারে। ২৫-২৬ জানুয়ারি বড় চালান আসার প্রস্তুতিও রয়েছে। সে জন্য নিয়মিত ফ্লাইটের পাশাপাশি বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে ওই সূত্র থেকে। এদিকে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে করোনাভাইরাসের টিকা প্রয়োগ ও বিতরণ সংক্রান্ত এক বৈঠকে জানানো হয়, দেশে একসঙ্গে ১৪-১৫ কোটি ডোজ টিকা সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রথমে দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতেই করোনার টিকা দেওয়া হবে। জেলা পর্যায়ের প্রতিটি হাসপাতালে সংরক্ষিত কোল্ড রুমে প্রায় চার লাখ ২৫ হাজার ডোজ টিকা রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি হাসপাতালে ৫-১০টি আইস ফ্রিজার আছে, যেখানে অন্তত ৭১ হাজার ডোজ টিকা র১াখা যাবে।
তবে জেলা পর্যায়ের অনেক স্টোর যথাযথভাবে এখনো প্রস্তুত করা হয়নি। গত শনিবার স্বাস্থ্যসচিব মো. আব্দুল মান্নান ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম গাজীপুর মেডিক্যাল কলেজ পরিদর্শনে গিয়ে সেখানে টিকা ব্যবস্থাপনাও ঘুরে দেখেন। এ সময় তাঁরা কিছুটা অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন বলেও জানায় ওই সময় উপস্থিত থাকা একাধিক সূত্র।
এ ছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে জানানো হয়, প্রাথমিকভাবে সারা দেশে সাত হাজার ৩৪৪টি টিম টিকা দেওয়ার কাজ করবে। প্রতিটি টিমে ছয়জন স্বাস্থ্যকর্মী থাকবে। এরই মধ্যে টিম প্রস্তুত করা হয়েছে।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অক্সফোর্ডের টিকা আমদানি ও জরুরি ব্যবহারের অনুমতি আমরা আগেই দিয়েছি। এখন দেশে টিকা আনতে আর বাধা নেই। যখন দেশে টিকা আসবে তখন আমাদের কাছে আমদানিকারক চালানভিত্তিক ব্যাচের কাগজপত্র নিয়ে আসবে। সেগুলো আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখে যদি সব কিছু বিধি অনুসারে থাকে, তবে ওই টিকা দেশে ব্যবহারের জন্য আরেক ধাপের অনুমোদন দিয়ে দিব। এ জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।’
মহাপরিচালক আরো বলেন, ‘অক্সফোর্ড ছাড়া এখন পর্যন্ত আর কোনো টিকা দেশে আনার আবেদন আমাদের কাছে জমা নেই। তবে ট্রায়ালের জন্য বিএমআরসিতে (বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ) ভারত, চীন ও বাংলাদেশের তিনটি প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র জমা পড়েছে বলে জানি।’
সেরাম থেকে অক্সফোর্ডের টিকা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাব্বুর রেজা গত সপ্তাহের শেষ দিকে কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, বিমানবন্দর থেকে টিকা নামানোর পর অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষ করে টিকা তাঁদের নিজস্ব সংরক্ষণাগারে নেওয়া হবে। এরপর তাঁরা আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের কাছে তা বুঝিয়ে দিবে। তবে সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুসারে বেক্সিমকো তাদের নিজস্ব বিশেষায়িত পরিবহনের মাধ্যমে জেলায় জেলায় স্বাস্থ্য বিভাগের স্টোরে টিকা পৌঁছে দেবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (টিকা) ডা. সামসুল হক বলেন, ‘এখন আমাদের অপেক্ষা কেবল টিকা দেশে এসে পৌঁছানোর। এরপর বেক্সিমকো ফার্মার নিজস্ব পরিবহনে তালিকাভুক্ত এলাকায় সির্ভিল সার্জনদের কাছে তা পৌঁছে দেওয়া হবে।’