নিউজ ডেস্ক:
বিশ্বের ২০টি দেশকে টার্গেট করে ওই দেশগুলোতে বাংলাদেশের ১৭টি সম্ভাবনাময় পণ্য রপ্তানির উদ্যোগ পর্যালোচনা করছে সরকার, যেটি বাস্তবায়ন হলে দেশের রপ্তানি আয় বেড়ে দ্বিগুণ হতে পারে বলে মনে করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, দুটি চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখে রপ্তানি আয় বাড়ানোর এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যার একটি হচ্ছে চলমান কভিড-১৯ এবং অন্যটি স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনা মহামারীতে দেশের রপ্তানি আয় ধরে রাখার পাশাপাশি নতুন দেশে নতুন পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে। এ ছাড়া এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর প্রাপ্ত জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহার হলেও যেন বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই রপ্তানি সম্প্রসারণে ২০ দেশকে টার্গেট করা হয়েছে।
টার্গেটে যে ২০ দেশ : বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের যেগুলোতে কমার্সিয়াল উয়িং রয়েছে, সেই দেশগুলোকেই রপ্তানি সম্প্রসারণে টার্গেট করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দেশগুলো হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, রাশিয়া, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, স্পেন, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিয়ানমার। সম্ভানাময় ১৭ পণ্য : সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে রপ্তানি বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশের যে ১৭টি পণ্য বাছাই করা হয়েছে সেগুলো হলো- ওষুধ, প্লাস্টিক, খেলনা, আইটি, এন্টিবায়োটিক, মেডিকেল ইকুইপম্যান্ট, ইলেকট্রনিক্স, বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেল, ফার্নিচার, সিরামিক, চামড়া, ফুটওয়্যার, হিমায়িত মাছ, ওভেন ফেব্রিক্স অব জুট ইয়ার্ন এবং পাটের তৈরি ব্যাগ ও হাতমোজা, পেপার এ্যান্ড কার্ডবোর্ড ও স্পোর্টসওয়্যার পণ্য। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, রপ্তানি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে প্রথমে ২০টি দেশকে বাছাই করা হয়। এরপর ওই দেশগুলোতে কর্মরত কমার্সিয়াল কাউন্সিলরদের নির্দেশ দেওয়া হয়, তারা যেন সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে রপ্তানি করা যায় এমন ৫টি পণ্যের তালিকা করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। কমার্সিয়াল কাউন্সিলরগণের সেই তালিকা যাচাই-বাছাই শেষে বাংলাদেশের এই ১৭টি পণ্যকে আগামী দশকের জন্য সম্ভাবনাময় পণ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কর্মকর্তারা জানান, এখন প্রতিটি পণ্য ধরে ওই পণ্য কোন কোন দেশে রপ্তানি করা যায়, এক্ষেত্রে কী ধরনের নীতি সহায়তার প্রয়োজন এসব পর্যালোচনা করা হচ্ছে। গত সোমবার এ সংক্রান্ত এক সভায় ভারত ও রাশিয়া এ দুটি দেশে সম্ভাবনাময় রপ্তানি পণ্য নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই দেশ দ’ুটিতে বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স পণ্য বিশেষ করে সেলফোন, রেফ্রিজারেটর, কিচেন এপ্লায়েন্স, টোস্টার কেটলি এবং পাটজাত পণ্য রপ্তানির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সিনিয়র সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন বলেন, চলমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে রপ্তানি আয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে আমরা একটি সামগ্রিক কৌশল পর্যালোচনা করছি। এক্ষেত্রে ২০টি দেশকে টার্গেট করে বাংলাদেশের ১৭টি সম্ভাবনাময় পণ্যের বাজার সৃষ্টি করাই এই কৌশলের মূল লক্ষ্য। তিনি বলেন, এমন হতে পরে ২০ দেশের কোনো একটিতে চিহ্নিত পণ্যগুলোর ২টি বা ৩টির সম্ভাবনা রয়েছে; সে ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট ওই পণ্য সংশ্লিষ্ট দেশটিতে রপ্তানিতে যে ধরনের নীতি সহায়তা নেওয়া দরকার, তাই নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের মতামতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। চলতি অর্থবছরে ৪১ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা প্রাক্কলন করেছে ইপিবি। এরমধ্যে জুলাই-মার্চ প্রান্তিকে ৯ মাসে কৌশলগত রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩০.২ বিলিয়ন ডলার প্রায়। আলোচ্য সময়ে রপ্তানি আয় হয়েছে ২৮.৯ বিলিয়ন ডলার। এটি লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ কম। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর ২য় ঢেউ ছড়িয়ে পড়ায় ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ পুনরায় লকডাউন কার্যক্রম শুরু করেছে। এর ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের প্রধান গন্তব্য পশ্চিমা দেশগুলোর চাহিদাও কমেছে। এ অবস্থায় এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত পরবর্তী ৩ মাসে রপ্তানি আয় বাড়াতে না পারলে চলতি অর্থবছরের টার্গেট পূরণ নিয়ে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০টি দেশকে টার্গেট করে ১৭ পণ্যের রপ্তানি বাড়ানোর জন্য সরকারের এই উদ্যোগ শুধু চলতি অর্থবছর নিয়ে নয়, এটি দীর্ঘমেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য একটি কৌশল, যেটি আগামী দুই বা তিন দশকে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতকে একটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।