নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশের পাসপোর্ট থেকে ইসরায়েল প্রসঙ্গ বাদ দেওয়ার বিষয়ে সরকারের যুক্তি মেনে নিলেও এই সময়ে এই খবর শুনে ব্যথিত বোধ করার কথা জানিয়েছেন ঢাকায় ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ সালেহ ওয়াই রামাদান।
‘ইসরায়েল ব্যতীত বিশ্বের সব দেশের ক্ষেত্রে বৈধ’- বাংলাদেশের পাসপোর্টে লেখা এই বাক্যটি থেকে ‘ইসরায়েল ব্যতীত’ কথাটি বাদ পড়ার খবর সম্প্রতি গণমাধ্যমে আসে।
সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকায় নিজ বাসভবনে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানান রামাদান; যিনি দুদিন আগেই ফিলিস্তিনিদের সংগ্রামের প্রতি অব্যাহত সমর্থনের জন্য বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটা অগ্রহণযোগ্য, নিশ্চিতভাবে অগ্রহণযোগ্য। এটা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
“কিন্তু শেষ কথা হল, বাংলাদেশ একটি সার্বভৌম দেশ, এটাকে আমরা সম্মান করি। যদি আপনি আমি এবং অধিকাংশ ফিলিস্তিনি জনগণের অনুভূতির বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছেন, তাহলে আমার অনভূতি হচ্ছে এটা অগ্রহণযোগ্য।”
“সার্বভৌম দেশ হিসাবে হিসাবে যে কোনো সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ নিতে পারে। আমরা কেবল সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের অনুরোধ জানাতে পারি এবং আশা করি তারা তা করবে,” বলেন ফিলিস্তিনি দূত।
গাজায় সাম্প্রতিক ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের মধ্যে বাংলাদেশের পাসপোর্টে এই পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে গত দুদিন ধরেই আলোচনা চলছে। ইরসায়েলের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে কোনো পরিবর্তন এসেছে কি না- সেই প্রশ্নও তোলা হচ্ছে।
পাসপোর্ট থেকে ইসরায়েল প্রসঙ্গ বাদ: যা বলছে সরকার
এমন প্রেক্ষাপটে এক বিবৃতিতে সরকার বলেছে, পাসপোর্ট থেকে ইসরায়েল প্রসঙ্গ বাদ দেওয়া হলেও বাংলাদেশিদের সে দেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা ‘বহাল আছে’ এবং বাংলাদেশের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক পররাষ্ট্র নীতিতেও কোনো পরিবর্তন আসেনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, পাসপোর্টের ‘আন্তর্জাতিক মান’ রাখতে গিয়েই ওই পরিবর্তন আনা হয়েছে, এর সঙ্গে বাংলাদেশের ইসরায়েল-নীতির কোনো সম্পর্ক নেই।
এর মধ্যেই রোববার ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে উপ পরিচালক রাষ্ট্রদূত গিলাড কোহেনের একটি টুইট ওই আলোচনাকে আরও উস্কে দিয়েছিল। সোমবার এক ফেইসবুক পোস্টে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও ‘বন্ধু’ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বাগত জানানোর কথা বলা হয়।
ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রামাদান বলেন, “স্পষ্ট করে বললে, আমি এই খবরকে খুশি বা আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করিনি। এই খবর আমি বেদনার সঙ্গে গ্রহণ করেছি।
“যদিও আমি মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, সার্বিক পরিস্থিতি ও বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট করার জন্য। তিনি নিশ্চিত করেছেন মধ্যপ্রাচ্যের বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি এবং নাগরিকদের ইসরায়েলে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আগের মতোই থাকছে। রাজনৈতিকভাবে এটা আমার জন্য যথেষ্ট।”
নিজের কষ্টের জায়গা বর্ণনা করে রাষ্টদূত বলেন, ”কিন্তু এখানে একটা বিষয় আছে, আমি মনে মনে আপনারা সবাই জানেন, এই খবর এমন সময়ে আসল যখন ফিলিস্তিনে বলপ্রয়োগ কেবল থামল এবং আমি মনে করি এটা ঠিক হয়নি। কেননা আমাদের শিশুদের রক্তের দাগ এখনও শুকায়নি।
“এবং এটা ইসরায়েল এমনভাবে গ্রহণ করেছেন, যেন তাদেরকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় টুইট করে বলেছে, পরবর্তী পদক্ষেপ হচ্ছে বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন। সুতরাং ইসরায়েলের কাছে সঠিক বার্তা যায়নি, ভুল বার্তা গেছে।”
ইউসুফ সালেহ ওয়াই রামাদান আশা প্রকাশ করেছেন, বাংলাদেশ সরকার পাসপোর্টের ক্ষেত্রে আগের অবস্থানে ফিরে যাবে।
রামাদান বলেন, “বার্তাটি গেল এমন সময়ে গেল, তখন তারা কেবল অপরাধ সংঘটনের করেছে, নির্মমতা চালিয়েছে এবং আমাদের জনগণ ভোগান্তি সহ্য করেছে। এটা (পাসপোর্টে পরিবর্তন) ঠিক সময়ে হয়নি এবং আমি মনে করি এটা পরেও হতে পারত।”
পরিবর্তনটি পরে কখন হতে পারত, তারও একটি ব্যাখ্যা দিয়ে রাষ্ট্রদূত রামাদান বলেন, “ইসরায়েল সময়ে সময়ে শান্তি প্রক্রিয়ার দিকে কিছুটা এগোয়, তাদেরকে সে সময় এভাবে পুরস্কৃত করা যেত।
“যখন তারা এসব ঘটনা ঘটাল, যার ভিডিও ফুটেজ আপনারা দেখেছেন, ফিলিস্তিনিরা স্বজন হারালো এবং বাড়িঘর ধ্বংস করে দেওয়া হলো, এটা পরিবর্তনের ঠিক সময় আমার কাছে মনে হয়নি।”
তিনি বলেন, “আমি আন্তরিকতার সঙ্গে আশা করি সরকার এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে এবং বাক্যটি পাসপোর্টে রাখবে। কেননা এটা ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য খুবই খুবই ভালো সমর্থনকে প্রতিনিধিত্ব করে।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে এ প্রসঙ্গে আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত রামাদান বলেন, “তিনি নিশ্চিত করেছেন, প্রধানমন্ত্রী অবস্থানের কোনো পরিবর্তন করেননি এবং যতক্ষণ পর্যন্ত স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হবে, ততদিনে ইসরায়েলের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্কও হবে না।”
বাংলাদেশের পাশাপাশি আরও ১৩ দেশের পাসপোর্টে ইসরায়েলকে বাদ রাখার প্রসঙ্গ আছে বলেও জানান ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত।
ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য বাংলাদেশিদের সহায়তার বিষয় তুলে ধরে তিনি বলেন, তার দেশের জনগণের চিকিৎসাসহ অন্যান্য খাতে এই মুহূর্তে ৮ থেকে ১০ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন।
“তবে ফিলিস্তিনে নগদ অর্থ পাঠানোর কোনো সুযোগ নেই, যেসব কোম্পানি ওখানে কাজ করে, তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন সরঞ্জাম কিনে পাঠানো হবে।”