নিউজ ডেস্ক:
সুইজারল্যান্ডে আজ বাংলাদেশের অর্থনীতিবিষয়ক রোড শো ‘রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার’ শুরু হচ্ছে। তিন দিনব্যাপী রোড শোতে বাংলাদেশের অর্থনীতির সক্ষমতা, বিনিয়োগ, বাণিজ্য, বাংলাদেশি পণ্য ও সেবা, শেয়ারবাজার এবং বন্ড মার্কেট সম্পর্কে তুলে ধরা হবে। অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তির বিবেচনায় ইউরোপের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ সুইজারল্যান্ডের দুটি শহরে বাংলাদেশকে তুলে ধরে বিদেশি ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ আকর্ষণ করা এ আয়োজনের মূল লক্ষ্য। বিশেষ করে প্রবাসীরা যাতে দেশে বিনিয়োগ করে সে বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) রোড শো ‘রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার’ আয়োজন করছে। সুইজারল্যান্ডের স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় জুরিখের ডোলডার গ্রান্ড হোটেলে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন। বুধবার জেনেভার হোটেল প্রেসিডেন্ট উইলসনে সমাপনী অনুষ্ঠানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক ড. তেদরোস আধানোম গেবরেয়াসুস থাকবেন। অনুষ্ঠানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ফাইন্যান্স ডিভিশনের সিনিয়র সচিব আবদুর রউফ তালুকদার, বিএসইসির চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এনএম জিয়াউল আলম পিএ, বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল নজরুল ইসলাম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য আলমগীর হোসেন এবং বিএসইরি কমিশনার শেখ শামসুদ্দীন আহমেদ উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকর্ণ কুমার ঘোষ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মফিজ উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির হোসেন, বিএসইসির সাবেক কমিশনার আরিফ খান, সুইজারল্যান্ড বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মোহাম্মদ নকিব উদ্দিন খান ও সাধারণ সম্পাদক সাদ ওমর ফাহিম, বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান, মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম এবং বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছায়েদুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত থাকবেন। প্রোগ্রামে স্পন্সর হিসাব রয়েছে সুইজারল্যান্ড বাংলাদেশ চেম্বার এবং ওয়ালটন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দেশটির দুটি প্রতিষ্ঠানের চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে।
জানতে চাইলে বিএসইসির চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ১০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঈর্ষণীয় অগ্রগতি হয়েছে। অর্থনীতির সব সূচকে আমরা এগিয়েছি। সামগ্রিকভাবে মূল্যায়ন করলে আগামীতে বাংলাদেশের অর্থনীতির সম্ভাবনা বিশাল। কিন্তু আমাদের অর্থনীতি যে অর্জন ও সম্ভাবনা রয়েছে, উন্নত দেশগুলোর বিনিয়োগকারীদের কাছে তা তুলে ধরা হয়নি। এ কারণে দেশে তেমনভাবে বিদেশি বিনিয়োগ আসেনি। বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে আমরা রোড শোর উদ্যোগ নিয়েছি। তিনি আরও বলেন, এর আগে আমরা দুবাই এবং যুক্তরাষ্ট্রের চারটি শহরে রোড শো করেছি। সেখানে ব্যাপক সাড়া মিলেছে। আগামী ৩১ অক্টোবর ইংল্যান্ডে রোড শো করা হবে। পর্যায়ক্রমে সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের লক্ষ্য রেখে বিভিন্ন দেশে এ ধরনের আরও আয়োজন থাকবে।
সুইজারল্যান্ডে আয়োজিত রোড শোর বিভিন্ন সেশনে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের নিয়ে বিনিয়োগকারী সম্মেলন, হোল্ডার্স মিটিং বা অংশীজন বৈঠক এবং প্রযুক্তি ও অন্য সব খাতে বিনিয়োগের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। সম্মেলনে বাংলাদেশের সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কর্মকর্তা, বেসরকারি উদ্যোক্তা, প্রবাসী বাংলাদেশি এবং বিদেশি উদ্যোক্তারা অংশ নেবেন। আয়োজকদের প্রত্যাশা-এর মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতি নতুন করে পরিচিতি পাবে।
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুসারে ২০৫০ সালে বিশ্বের ২৩তম অর্থনীতির দেশ হবে বাংলাদেশ। এ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হলো বাংলাদেশ। আরেকটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান হংকং সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশনও (এইচএসবিসি) একই ধরনের পূর্বাভাস দিয়েছে। ১০ বছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ। আর মোট জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ৩১ শতাংশ। প্রবৃদ্ধিকে সাপোর্ট দিতে ২০২০ সালে বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে ৪০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। ২০১১ সালে বাংলাদেশের মাথা পিছু আয় ছিল ৮৬০ মার্কিন ডলার। বর্তমানে তা দুই হাজার ২২৭ ডলারে উন্নীত হয়েছে। এ ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। করোনার মধ্যেও ২০২০ সালে প্রবাসী আয়ে (রেমিট্যান্স) ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাস অনুসারে করোনার মধ্যে ২৩টি দেশ অর্থনৈতিকভাবে ইতিবাচক অবস্থানে থাকবে। এর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বর্তমানে বাংলাদেশে মোট শ্রমশক্তি সাত কোটির মধ্যে সাড়ে পাঁচ কোটিই বয়সে তরুণ। অপর দিকে, ইউরোপের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ সুইজারল্যান্ড। বিশ্বে উদ্ভাবন সূচকে শীর্ষে থাকা দেশটির আয়তন সাড়ে ১৫ হাজার বর্গমাইল। মোট জনসংখ্যা প্রায় এক কোটি। মাথা পিছু আয় ৭০ হাজার ডলারের বেশি, যা বাংলাদেশের চেয়ে প্রায় ৩৫ গুণ বেশি। অর্থপাচারকারীদের নিরাপদ স্থান হিসাবে দেশটির ব্যাংকগুলো ব্যাপক পরিচিত। ঘড়ি, চকলেট ও ট্রেনের জন্য বিখ্যাত সুইজারল্যান্ড পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষের কাছে এটি স্বপ্নের দেশ।