নিউজ ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ নিয়ে আর কোনো খেলা কেউ খেলতে পারবে না। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কখনো কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। বাংলাদেশ যে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, ইনশা আল্লাহ তা অব্যাহত থাকবে। শনিবার সন্ধ্যায় মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর চার দিনব্যাপী সমাপনী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসি। একটি সময় ছিল আমাদের মহান বিজয় অর্জন এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠন। কিন্তু তারপর আরেকটি অধ্যায় হলো, ২১ বছরে শোষণ-বঞ্চনা, হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতি, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের রাজনীতি। এর পর ২০০১ থেকে ২০০৮ আরেকটা অন্ধকার যুগে প্রবেশ করেছিল এ দেশের মানুষ। ২০০৯ সাল থেকে ২০২২, বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। তারা বারবার ভোট দিয়ে আমাদের তাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছে বলেই ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন করার সুযোগ পেয়েছি। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করার আমরা সুযোগ পেয়েছি। যদিও করোনা ভাইরাসের কারণে অনুষ্ঠানমালাগুলো সীমিত আকারে করতে হয়েছে এবং আমরা ২০২২ সাল পর্যন্ত নিয়ে এসেছি। কারণ, আমরা যেভাবে করতে চেয়েছিলাম, করোনা মহামারি বা অতিমারির কারণে আমরা সেভাবে করতে পারিনি। কিন্তু তারপরও আমরা থেমে থাকিনি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি এটা আমার জন্য অত্যন্ত গৌরবের। স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী উদ্যাপন করার সুযোগ পেয়েছিলাম ১৯৯৭ সালে, আর এবার আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করার সুযোগ পেয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে উন্নয়নের যাত্রা যদি আপনারা হিসেব করেন বিগত ৫০ বছরে মধ্যে। ২৯ বছর কিন্তু উন্নয়নই হয় নাই; পিছু টান বা পেছনে যাওয়ার সময়। কেবল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে তিনি উন্নয়নের পথে অগ্রযাত্রা শুরু করেছিলেন। এরপর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে তখন এ দেশের মানুষের জীবনে কিছুটা উন্নয়নের ছোঁয়া পায়। তারপর ২০০৯-এ যখন আমরা সরকার গঠন করি, পুনরায় তখন থেকে এই ১৩ বছরে আমরা যে লক্ষ্য স্থির করেছিলাম ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী—২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ যাতে মধ্যম আয়ের দেশ হয়।’
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে। সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। সব থেকে বড় কথা, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে সক্ষমতা অর্জন করেছি। বাংলাদেশের প্রতিটি ঘর আমরা আলোকিত করেছি। বাংলাদেশ যে আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছে—আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম—আজ ঠিকই আমরা সেই আলোর পথের যাত্রা শুরু করে সমগ্র দেশের মানুষের প্রতিটি ঘরকে আলোকিত করার সক্ষমতা অর্জন করেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকের যে প্রজন্ম তাদের কাছে আমার এটাই আহ্বান থাকবে যে, আমরা কিন্তু পরিকল্পনা দিয়ে গেছি। যেমন-২০০৮ সালে ২০২১ পর্যন্ত আমরা যখন পরিকল্পনা দিই সেটা বাস্তবায়ন করেছি। আমরা স্যাটেলাইট যুগে প্রবেশ করেছি। নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট আমরা করছি। অবকাঠামোগত উন্নয়ন করে যাচ্ছি। মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছি। ১০০টা অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। বাংলাদেশকে যেন আর কখনো কেউ অবহেলা করতে না পারে। বাংলাদেশের মানুষ যেন বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে পারে। শিক্ষায়-দীক্ষায় জ্ঞানে, প্রযুক্তি জ্ঞানে, বিজ্ঞানে সবদিক থেকে আমরা যেন এগিয়ে থাকতে পারি।’
পাশাপাশি বাংলাদেশের মানুষের যে মৌলিক চাহিদা তার ব্যবস্থা আমরা করেছি। জাতির পিতা স্বাধীনতার পর মাত্র নয় মাসের মধ্যে আমাদের যে সংবিধান দিয়েছিলেন তাঁর সেই নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে মেনে তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি বলেও অবহিত করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, ‘এ এগিয়ে যাওয়া, এ গতি আমাদের ধরে রাখতে হবে। তাই আগামী প্রজন্মের জন্য আমরা ২০৪১ সালের বাংলাদেশ কেমন বাংলাদেশ হবে, সেই প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করে দিয়েছি এবং তা বাস্তবায়নের জন্য পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা করে আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। ২১০০ সালে ডেল্টা প্ল্যান তৈরি করে দিয়েছি। তারও কিছু কাজ আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের টানা মেয়াদে দারিদ্র্যের হার কমানোর প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, ‘একটি মানুষও গৃহহীন-ভূমিহীন থাকবে না। জাতির পিতা যে লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন আমরা তা আজ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। ইনশা আল্লাহ, এই বাংলাদেশে আর কোনো মানুষেই গৃহহীন-ভূমিহীন থাকবে না। সেটা আমরা নিশ্চিত করব। তার পথে আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেছি। এভাবেই আমরা বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব।’
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর চার দিনব্যাপী সমাপনী অনুষ্ঠানের সফলতা কামনা করে তিনি বলেন, ‘আমরা এই সুবর্ণজয়ন্তীর পথ ধরেই এগিয়ে যাব। শতবর্ষ উদ্যাপন করবে আমাদের আগামী দিনের প্রজন্ম। তারা উদ্যাপন করবে ২০৭১ সালে। তাঁদের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়ে এবং আমাদের বর্তমানকে আগামী প্রজন্মের জন্য উৎসর্গ করে আজকে আমি মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সমাপনীর চার দিনব্যাপী যে অনুষ্ঠানমালা গ্রহণ করা হয়েছে তার উদ্বোধন ঘোষণা করছি।’
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খাজা মিয়া।
দ্বিতীয় পর্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি যুক্ত থেকে তা কিছুক্ষণ উপভোগ করেন।