বিশেষ প্রতিবেদক:বাংলাদেশের কাছে ভারতের ২০টি ব্রডগেজ লোকোমোটিভ হস্তান্তর করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। আজ আয়োজিত একটি হস্তান্তরকরণ অনুষ্ঠানে, দর্শনা-গেদে ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্টে ২০টি ব্রডগেজ (বিজি) লোকোমোটিভ হস্তান্তর করা হয়। ভারতের রেলমন্ত্রী শ্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব ভার্চুয়ালি এর সূচনা করেন, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন এগুলো গ্রহণ করেন।
ভারত সরকারের অনুদান সহায়তায় এই ২০টি বিজি লোকোমোটিভ হস্তান্তরকরণ, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর চলাকালীন ব্যক্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি পূরণ করে৷ এই লোকোমোটিভগুলো বাংলাদেশে যাত্রী ও মালবাহী ট্রেনের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ের সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে ভারতের রেলমন্ত্রী শ্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব উল্লেখ করেন যে, ঐতিহাসিকভাবে ভারত ও বাংলাদেশে একই ধরণের রেলওয়ে ব্যবস্থা বিদ্যমান এবং তাই এই সেক্টর স্বাভাবিকভাবেই একে অপরের পরিপূরক। তিনি দুই রেলওয়ের মধ্যে সহযোগিতার অপার সম্ভাবনার ওপর জোর দেন এবং আশা প্রকাশ করেন যে, ভারতের কাছ থেকে বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে এই ২০টি বিজি লোকো হস্তান্তর বাংলাদেশের জনগণের জন্য রেল ভ্রমণকে সহজ করে স্বাচ্ছন্দ্য এনে দেবে। বাংলাদেশকে এই লোকোগুলোর অনুদান প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের লক্ষ্যে সম্পদ ও দক্ষতা বিনিময়ের একটি চমৎকার উদাহরণ।
ভারতের রেলমন্ত্রী শ্রী বৈষ্ণব যোগ করেন যে, বহুমুখী সংযোগ বৃদ্ধিকরণ উভয় সরকারের জন্য অগ্রাধিকার ছিল এবং বিশেষ করে রেলওয়ে, উভয় দেশের অর্থনীতির পাশাপাশি সমগ্র উপ-অঞ্চলকে রূপান্তরিত করার ক্ষমতা রাখে। তিনি উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে এবং কার্যকর ও পরিবেশ-বান্ধব উন্নয়নের লক্ষ্যে রেলওয়ে যোগাযোগের আরও প্রবৃদ্ধিকরণ একটি মূল চালিকাশক্তি হিসেবে পারস্পরিকভাবে স্বীকৃত হয়েছে। পোর্টফোলিওতে প্রায় ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশ হলো ভারতের বৃহত্তম উন্নয়ন সহযোগী। রেল সংযোগ হচ্ছে দ্বিপাক্ষিক উন্নয়ন অংশীদারত্বের অন্যতম প্রধান উপাদান, যার মাঝে ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে রেল সেক্টরের প্রকল্পসমূহ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে এবং ১.৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি মূল্যমানের প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। দুই দেশের জনগণের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক বন্ধনের প্রতিফলন হিসেবে, কলকাতা-ঢাকা, কলকাতা-খুলনা ও ঢাকা-নিউ জলপাইগুঁড়ির মধ্যে তিনটি আন্তঃসীমান্ত ট্রেন সার্ভিস চালু রয়েছে। আন্তঃসীমান্ত সংযোগ ও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির ওপর দৃষ্টিপাত করে, ১৯৬৫-এর আগের পাঁচটি রেলওয়ে সংযোগ পুনরুদ্ধার করা হয়েছে এবং এগুলো যাত্রী ও পণ্য চলাচলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
ভবিষ্যৎ সহযোগিতার লক্ষ্যে, বেশ কিছু প্রকল্প চিহ্নিত করা হয়েছে যা রেলেওয়ের মাধ্যমে বৃহত্তর দ্বিপাক্ষিক এবং উপ-আঞ্চলিক সংযোগের গুরুত্বকে তুলে ধরে। ১৯৬৫-পূর্ববর্তী অবশিষ্ট রেলওয়ে সংযোগসমূহ পুনরুদ্ধার করার এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও বাংলাদেশের মধ্যে সংযোগ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে নতুন রেলওয়ে সংযোগ তৈরি করার প্রকল্পসমূহও চলমান রয়েছে। ভারত সরকার বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ করতে এবং যাত্রী ও মালবাহী ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়াসহ বাংলাদেশ রেলওয়ের কার্যক্রমের ডিজিটাইজেশনের প্রকল্প গ্রহণ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
রেলওয়েভিত্তিক চলাচলের রূপান্তরমূলক প্রকৃতি, সংকটপূর্ণ অতিমারির সময়ে বিশেষভাবে লক্ষ্য করা গিয়েছিল। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দ্রুত পরিবহনের জন্য পার্সেল ট্রেনের চলাচল বৃদ্ধি করা হয়েছিল এবং ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম পার্সেল ট্রেনটি ২০২০ সালের জুলাই মাসে যাত্রা শুরু করে। তারপর থেকে, রেলের মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি মাসে উভয় দিক থেকে প্রায় ১০০টি পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করে এবং গত অর্থবছরে প্রায় ২.৬৭ মেট্রিক টন কার্গো রেলপথে বাংলাদেশে সরবরাহ করা হয়। কোভিড অতিমারিতে সাড়াদানের অংশ হিসেবে, ভারতীয় রেলওয়ের ‘অক্সিজেন এক্সপ্রেস’ ২০২১ সালের জুলাই মাসে রেলওয়ে কন্টেইনারে করে বাংলাদেশে তরল মেডিকেল অক্সিজেন পরিবহণ করে এবং কোভিডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের লড়াইকে সমর্থন করার লক্ষ্যে মোট ২০টি ‘অক্সিজেন এক্সপ্রেস’ ট্রেন পরিচালনা করা হয়।
ভারতের রেলমন্ত্রী শ্রী বৈষ্ণব গুরুত্বসহকারে উল্লেখ করেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মোদির ‘গতি শক্তি’ উদ্যোগের অধীনে, কার্গো পরিচালনা ক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ভারতে বেশ কিছু প্রকল্প গৃহীত হচ্ছে এবং এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশেও কার্গো শেড, লুপ-লাইন, সিগন্যালিং ব্যবস্থা ও কন্টেইনার টার্মিনালসমূহের উন্নয়নসংক্রান্ত প্রকল্পসমূহ গ্রহণ করা যেতে পারে। এটি ব্যবস্থাপনা খরচ আরও কমাতে এবং বাংলাদেশকে আরও প্রতিযোগিতামূলক হতে সহায়তা করবে, যা উভয় দেশের জন্য উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক লভ্যাংশ বয়ে আনবে। তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে রেলওয়ে নেটওয়ার্কে বিদ্যুতায়নের ক্ষেত্রে ভারতের অভিজ্ঞতা বিনিময় করার প্রস্তাবও উত্থাপন করেন, কারণ বিদ্যুতায়ন হলো দক্ষতা বৃদ্ধি ও কার্বন নিঃসরণ কমানোর উপায়।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার শ্রী প্রণয় ভার্মা ঢাকার রেল ভবন থেকে ভার্চুয়ালি এই অনুষ্ঠানে যোগদান করেন এবং ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশি হাই কমিশনার মোঃ মুস্তাফিজুর রহমান দিল্লির রেল ভবন থেকে ভার্চুয়ালি এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এই অনুষ্ঠানে ভারতীয় রেলওয়ে, বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং বাংলাদেশের রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।