অবশেষে নৌকার প্রশ্নে নির্বাচনী মাঠে এক হয়েছে বরিশাল জেলা-মহানগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। সম্প্রতি আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের বরিশাল সফরের পর কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন নির্বাচনের প্রথম দিকে নিষ্ক্রিয় থাকা নেতাকর্মীরা।
আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, বরিশালের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে হলে নৌকার কোনো বিকল্প নেই। প্রধানমন্ত্রী যাকে মনোনয়ন দিয়েছেন তার জন্যই কাজ করবেন তারা। তাছাড়া নৌকার বর্তমান মেয়র প্রার্থী একজন সজ্জন ব্যক্তি হওয়ায় প্রত্যাশা অনুযায়ী নেতৃত্বও পেয়েছেন তারা। তাই মাঠে কাজ শুরু করা হয়েছে।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুলস্নাহকে বাদ দিয়ে আসন্ন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন দেন তারই (সাদিক) চাচা আবুল খায়ের আব্দুলস্নাহকে (খোকন সেরনিয়াবাত)। তবে এই
মনোনয়নে খুশি হতে পারেননি সাদিক আব্দুলস্নাহ অনুসারী বরিশাল জেলা ও মহানগরের কোনো কোনো নেতা। কিন্তু দীর্ঘদিন কোণঠাসা হয়ে থাকা দলের পুরনো ও সিনিয়র নেতারা এই মনোনয়নে অবর্ণনীয় খুশি হয়েছেন। তারা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ মানুষকে মিষ্টিমুখ করিয়েছেন। এরপর ব্যাপক শোডাউনের মাধ্যমে খোকন সেরনিয়াবাতকে সংবর্ধনাও দেওয়া হয়েছে। তবে সেই সংবর্ধনায় সাদিকপন্থি হিসেবে পরিচিত হাতেগোনা কয়েকজন নেতা ছাড়া বাকিরা উপস্থিত ছিলেন না। এ নিয়ে সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয় সাদিক আব্দুলস্নাহসহ তার অনুসারীদের। এরই প্রেক্ষিতে জেলার গৌরনদীতে গত ২৬ মে অনুষ্ঠিত হয় জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নির্বাচনী বর্ধিত সভা। ওই সভায় বরিশাল সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির সব সদস্য উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ করে কমিটির প্রধান সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুলস্নাহর পিতা আলহাজ আবুল হাসানাত আব্দুলস্নাহ কড়া ভাষায় নেতাকর্মীদের নৌকার প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষে কাজ করার জন্য নির্দেশনা দেন। তারপরও দুই একজন ছাড়া কেউ বরিশাল নগরীর কোথাও নির্বাচনী কাজে অংশ নেননি। পরবর্তীতে ৩০ মে বরিশালে নৌকা প্রার্থীর সমর্থনে অনুষ্ঠিত যুবলীগের নির্বাচনী বিশেষ সমন্বয় সভায় উপস্থিত হন সিটি নির্বাচন কেন্দ্রীয় পরিচালনা কমিটির সদস্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন। ওই সভায় অংশ নেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসেনসহ সাদিক অনুসারী জেলা যুবলীগের নেতারা।
সভায় কেন্দ্রীয় নেতারা একদিকে যেমন দলের বেইমানদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তেমনি কড়া বার্তা দিয়েছেন নৌকার পক্ষে কাজ না করা নেতাকর্মীদের ব্যাপারে। কেননা বরিশালে নৌকা প্রার্থী দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সভায় বক্তারা বলেন, বরিশালের উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী খোকন সেরনিয়াবাতকে সৎ ও সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে মনোনীত করেছেন। তিনি বিজয়ী হলে বিজয়ী হবেন শেখ হাসিনা। এই সভার পরই বরিশালে পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। ওই দিন থেকেই নির্বাচনী কাজে নামেন সাদিক আব্দুলস্নাহ অনুসারী আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
নগরীর সেহেল চত্বরে দলীয় কার্যালয় থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু করেন তারা। পরবর্তীতে নগরীর বিভিন্ন স্থানে প্রচার-প্রচারণা চালান ও প্রচারপত্র বিলি করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন ওয়ার্ডেও প্রচারণা চালান তারা। এতে নেতৃত্ব দেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর হোসেন এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মোহম্মদ ইউনুন, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক।
এ ব্যাপারে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক গোলাম সরোয়ার রাজিব বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবক আবুল হাসানাত আব্দুলস্নাহ নৌকা প্রতীক বিজয়ের জন্য সব দ্বন্দ্ব, ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে নৌকাকে বিজয়ী করতে মাঠে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তার নির্দেশ অনুযায়ী আমরা জেলা-মহানগর ও ৩০টি ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা নৌকাকে বিজয়ের জন্য সর্ব শক্তি নিয়ে প্রচার-প্রচারণা কাজে নেমে পড়েছি।’
অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস জানান, ‘আমরা আইনজীবীরা একাধিক টিম হয়ে নৌকাকে বিজয়ী করতে মাঠে প্রচারণা শুরু করেছি। আমাদের উদ্দেশ্য খোকন সেরনিয়াবাতকে বিজয়ী করে বরিশাল সিটি করপোরেশন প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেওয়া।’
সাদিক অনুসারীরা বলেন, ‘শুরু থেকেই আমাদের নেতা আবুল হাসানাত অব্দুলস্নাহ ও মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুলস্নাহ নৌকার পক্ষে কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। অন্যদিকে যাকে নিয়ে সবচাইতে বেশি আলোচনা সেই বর্তমান মেয়র সাদিক আব্দুলস্নাহর ব্যাপারে কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, তিনি ঢাকায় থেকে নির্বাচন পরিচালনা কাজে যুক্ত থাকবেন এবং নৌকা প্রতীকের বিজয় নিশ্চিত করতে তিনি সব ধরনের সহযোগিতা করবেন।
সাদিক আব্দুলস্নাহ অনুসারীরা নির্বাচনী মাঠে নামায় সাধারণ মানুষের মঝে পজিটিভ প্রভাব পড়া শুরু করেছে। মানুষ আগামী বরিশালের উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছেন। খুশি হয়েছেন শুরু থেকে খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষে কাজ করতে থাকা নেতাকর্মীরাও। তারা মনে করেন, ভোটের মাঠে এর সুফলও পাবেন তারা।
বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘নৌকা প্রতীকের প্রশ্নে আমরা আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ। আমাদের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। আমরা আগে থেকেই বলে এসেছি, জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা করে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণা শুরু করা হবে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পুরোদমে কাজে নেমে পড়েছেন নেতাকর্মীরা।’