বন্ধ হয়ে যাওয়া পাটকলগুলোর খালি জায়গায় চাষাবাদ করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে বাংলাদেশ জুট মিলস্ করপোরেশন (বিজেএমসি) জানিয়েছে। মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, বৈঠকে বিজেএমজির পক্ষ থেকে বন্ধ ঘোষিত রাষ্ট্রায়ত্ব ২৫টি জুটমিলের বিষয়ে সরকারের কার্যক্রমের প্রতিবেদন কমিটিকে দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, ২০২০ সালের ১ জুলাই বাংলাদেশ জুট মিলস্ করপোরেশন (বিজেএমসি) নিয়ন্ত্রণাধীন ২৫ মিলের উৎপাদন কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ করা হয়। এই মিলগুলো পরবর্তীতে ইজারা পদ্ধতিতে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চালু করার সিদ্ধান্ত হয়। প্রাথমিকভাবে লিজের জন্য নির্বাচিত ১৭টি পাটকলের মধ্যে ৬টি ইজারার সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে দুটি উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করেছে। একটি স্বল্প পরিসরে উৎপাদন শুরু করেছে।
বন্ধকৃত তিনটি নন-জুটমিলের মধ্যে একটি (জুটো ফাইবার গ্লাস ইন্ডাষ্ট্রিজ লি.) ‘জামদানি ভিলেজ স্থাপন‘ এবং ‘ঢাকাই মসলিন হাউজ‘ প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি দুটি নন-জুনমিলসহ ইজারা না হওয়া ১১টি জুট মিল লিজ দেওয়ার জন্য আগ্রহীদের সর্ট লিস্ট করে চূড়ান্ত প্রস্তাব আহ্বান করা হয়েছে।
উৎপাদন বন্ধকৃত অবশিষ্ট পাঁচটি মিলের দুটি মামলাজনিত কারণে এবং তিনটি সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত থাকায় লিজ প্রদানে সরকারি সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি। এসব মিলের পুকুর, জলাশয়, গুদাম ইত্যাদি ভাড়া প্রদানের মাধ্যমে সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
চাষাবাদ করার বিষয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে- মিলগুলো বন্ধের পরে শ্রমিক কলোনি খালি হওয়ার পর এসব খালি জায়গা, লিজের জন্য নির্ধারিত মিলগুলোর লিজ এরিয়ার বাইরের খালি জায়গা এবং লিজের বাইরে থাকা অবশিষ্ট মিলের খালি জায়গায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশণা অনুযায়ী চাষাবাদের আওতায় এনে চাষাবাদ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজেএমসির মহাব্যবস্থাপক নাসিমুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, তারা এ ধরনের একটি প্রতিবেদন সংসদীয় কমিটিতে দিয়েছেন। তিনি বলেন, মিলের খালি জায়গায় আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আগে থেকেই কমবেশি চাষাবাদ করতো। এখনও সেটা অব্যাহত আছে। এখন কলোনিসহ যেসব উন্মুক্ত জায়গা রয়েছে সেখানে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশণা অনুযায়ী আমরা চাষাবাদ শুরু করছি। সরকারি নিয়ম মেনে কোথাও লিজের মাধ্যমে চাষাবাদ করার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
কমিটির সভাপতি আ স ম ফিরোজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বিজেএমসি থেকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়েছে। তারা খালি জায়গায় চাষাবাদের উদ্যোগ নিয়েছে। পুকুর জলাশয়ে মাছ চাষ এবং পাড়গুলিতে বৃক্ষরোপণের কথা বলেছে। বৈঠক সংক্ষিপ্ত হওয়ায় কোন প্রক্রিয়ায় দিয়েছে সেটা আমরা জানতে পারিনি। আগামী বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে। সরকারি নিয়মকানুন যেমন লিজ বা সমবন্টন হারে নিশ্চয়ই এটা দেওয়া হচ্ছে।
কমিটির সভাপতি আ স ম ফিরোজের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান এবং নারায়ন চন্দ্র চন্দ অংশগ্রহণ করেন।
সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি জানানো হয়- বৈঠকে বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের পাটকলওয়ারী বিগত তিন অর্থ বছরের লাভ-লোকসানের তুলনামূলক তথ্য এবং ১০ বছরের অনিষ্পন্ন অডিট আপত্তির হালনাগাদ অগ্রগতি পরবর্তীতে উপস্থানের জন্য সুপারিশ করা হয়।
পাটকলসমূহে কী পরিমাণ পাটজাত পণ্য উৎপাদন হচ্ছে এবং বিদেশের বাজারে তার কী চাহিদা রয়েছে তার হালনাগাদ তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন তৈরির জন্য কমিটি মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দেয়।
পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০ অনুযায়ী পাটের তৈরি ব্যাগ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ ব্যবহার অব্যাহত আছে কিনা ও ব্যবহার বাড়ানো যায় কিনা তা তদারকি করার জন্য পরামর্শ প্রদান করা হয়।