মানুষের বিনোদনের জন্য খাঁচাবন্দি বন্যপ্রাণী প্রদর্শন- ঝেড়ে ফেলা হবে চিড়িয়াখানার সেকেলে এই ধারণা। প্রাণীরা থাকবে, তবে তাদের বিচরণক্ষেত্র হবে এমন একটি মুক্ত পরিবেশে, যাতে মানুষও নিরাপদ দূরত্বে থেকে তাদের দেখতে পায়।
নিউজ ডেস্ক:
এমন ভবনা সামনে রেখেই মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানার খোলনলচে বদলে ফেলার মহাপরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে।
মিরপুর চিড়িয়াখানার পরিচালক আব্দুল লতিফের ভাষ্য, চিড়িয়াখানাটা এখনও চলছে ১৯৫০ সালের ভাবনাকে সঙ্গী করে, যা এখন বিশ্বে বদলে গেছে।
“এখন থিম হচ্ছে, প্রাণীগুলা মনে করবে যেন একটা ফ্রি জোনে আছে। মানুষও মনে করবে একটা ফ্রি জোনে আছে। ফ্রি জোনে থাকার কারণে মনে হবে বনের মধ্যেই আছে।”
মহাপরিকল্পনার আওতায় চিড়িয়াখানাকে ভাগ করা হবে পাঁচটি জোনে। বাংলাদেশকেন্দ্রিক প্রাণীদের বাংলাদেশ হ্যাবিটেট জোন, আফ্রিকার প্রাণীদের আফ্রিকান হ্যাবিটেট, আর যেসব প্রাণী বাড়িতে পোষা হয়, সে ধরনের প্রাণীদের জন্য আলাদা একটি জোন করা হবে। বাচ্চাদের খেলাধুলার জন্য রাখা হবে অ্যাকটিভ জোন, আরেকটি জোন থাকবে নিশাচর প্রাণীদের জন্য।
নাইট সাফারি জোন চালু থাকবে সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত। সেজন্য আলাদা টিকেটের ব্যবস্থাও থাকবে।
আব্দুল লতিফ জানালেন, নতুন ব্যবস্থায় অবাধে বিচরণ করতে পারবে প্রাণীরা, থাকবে না কোনো খাঁচা।
“পেছনে বৈদ্যুতিক পরিবেষ্টনী থাকবে, তা দেখা যাবে না। লতাপাতা, গাছ দিয়ে সেটা ঢাকা থাকবে। কোথাও পানির ফোয়ারা থাকবে। এসব প্রাকৃতিক পরিবেষ্টনী ভেদ করে দর্শকও প্রাণীদের কাছে যেতে পারবে না, প্রাণীরাও এদিকে আসতে পারবে না।
প্রাণীদের শেডে তাদের খাওয়ার উপযোগী গাছ লাগানোর পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন চিড়িয়াখানার পরিচালক।
মহাপরিকল্পনার আওতায় সীমানা করা হবে পাইলিং পদ্ধতিতে। ফলে বাইরে থেকে পয়ঃনিষ্কাশনের কোনো লাইন চিড়িয়াখানায় ঢুকবে না। সীমানার পাশ দিয়ে করা হবে হাঁটার পথ। এরপর থাকবে বাফার জোন আর বাফার জোনের পর থাকবে সবুজবেষ্টনী।
আব্দুল লতিফ বলেন, “পানি পরিশোধনের জন্য আমাদের অত্যাধুনিক মেশিন থাকবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্যও লোকজন থাকবে, যাতে দুর্গন্ধ মানুষকে বিরক্ত করতে না পারে।”
আধুনীকায়ন হবে চিড়িয়াখানার দুটি লেকেরও। লেকের উপর তৈরি হবে ভাসমান রেস্তোরাঁ। প্রতিবন্ধীদের চলাচলের সুবিধার জন্য থাকবে বিকল্প পথ।
আব্দুল লতিফ বলেন, “চলতি মাসেই হয়ত আমরা মাস্টারপ্লানটা হাতে পাব। তারপর সরকারের কাছে উপস্থাপন করা হবে, যাতে ধাপে ধাপে এটা বাস্তবায়নের দিকে নিয়ে নেওয়া যায়।
ঢাকার চিড়িয়াখানার সেই রূপ মানুষ কবে দেখতে পাবে? পরিচালক জানালেন, সেজন্য সময় লাগবে।
“হয়ত ১৫ বছরে এটা বাস্তবায়িত হবে। সম্পূর্ণ বন্ধ রেখে তো কাজ করা যাবে না। যে এরিয়া ফাঁকা আছে সেখানে আমরা প্রথম কাজ করব। তারপর এখানে একটা জোনের প্রাণীগুলো রেখে আরেকটা জায়গা ফাঁকা করব তারপর সেই ফাঁকা জায়গায় আবার কাজ শুরু করব। এভাবেই পুরোটা হবে।”