নিজস্ব প্রতিবেদক:
- ২০৩০ সালের মধ্যে সব মহাসড়ক ছয় লেনে ও ’৪১ সালের মধ্যে আট লেনে উন্নীত হবে
- আন্তর্জাতিক যোগাযোগের জন্য ২১টি সড়ক করিডর হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ৬০ প্রকল্পের মধ্যে ৪১টির কাজ সম্পন্ন মেগা প্রকল্প চলছে ১৭টি
আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের সব মহাসড়ক দুই-চার থেকে ছয় লেনে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে সেসব মহাসড়ক আট লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক মহাসড়কগুলোতে চার থেকে আট লেন পর্যন্ত নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নের অপেক্ষায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ^মানের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সরকারের এই উদ্যোগ। এরই ধারাবাহিকতায় সড়ক বিভাগের ১৯৮টি প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এরমধ্যে ১৭টি মেগা প্রকল্প রয়েছে। নতুন মহাসড়ক উন্নয়ন পরিকল্পনায় সড়ক দুর্ঘটনা রোধে রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। ছোট ছোট যানবাহন চলাচলে নতুন সড়কগুলোতে থাকবে পৃথক লেন।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকল্প নিলেই হবে না। বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেয়ার পাশাপাশি অর্থ সংস্থান নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। সব মিলিয়ে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা গেলে বদলে যাবে দেশ। সড়ক যোগাযোগে বাংলাদেশ মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
দেশের সব মহাসড়কের উন্নয়ন করা হবে জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, পর্যায়ক্রমে এসব মহাসড়ক দুই থেকে আট লেন পর্যন্ত উন্নীত করা হবে। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রী আরও বলেন, দেশের মহাসড়ক নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা উন্নয়নে বর্তমান সরকার বহুমাত্রিক পরিকল্পনা নিয়েছে।
তিনি বলেন, মহাসড়কের সঙ্কীর্ণ অংশগুলো সম্প্রসারিত করার পাশাপাশি সব মহাসড়ক দুই লেন থেকে চার লেন, চার লেন থেকে ছয় লেন এবং ছয় লেন থেকে আট লেনে উন্নীত করা হবে।
সড়ক বিভাগের ১৯৮ উন্নয়ন প্রকল্প ॥ সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ১৯৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিতে বাজেটে বরাদ্দের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত। এ খাতে মোট বাজেটের ১১ দশমিক ২ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়। বরাদ্দের পরিমাণ ৬৪ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা।
৬টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে এ বরাদ্দ দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এগুলো হলো- সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, রেলপথ মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং সেতু বিভাগ।
বাজেটে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় নতুন অর্থবছরে ৬ হাজার ৯৩ কোটি টাকা বেশি অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ৫৮ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। যদিও ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৬৪ হাজার ৮২১ কোটি টাকা।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অধীনে আগামী অর্থবছরে ১৯৮টি প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেয়া হবে। এর মধ্যে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের উন্নয়ন প্রকল্প আছে ১৮৯টি। নতুন সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য বেশির ভাগ প্রকল্প। এর মধ্যে সরকারের ১৭টি বড় প্রকল্প রয়েছে।
চলমান সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্প-২ ॥ বাংলাদেশের উত্তর পশ্চিম করিডর দিয়ে যোগাযোগ আরও উন্নত করার লক্ষ্যে সরকার ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) অর্থায়নে ১১ হাজার ৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্প-২: এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর জাতীয় মহাসড়ক সার্ভিস লেনসহ চার লেনে উন্নীতকরণ কাজ চলমান রয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ১৯০ কিলোমিটারের বেশি মহাসড়ক চার লেন করা হচ্ছে। একস্তর নিচু দিয়ে উভয় পাশে পৃথক সার্ভিস লেন নির্মাণ কাজও চলমান। এই মহাসড়কটি পরবর্তীতে ভারত ও নেপালের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে বাংলাবান্ধা সীমান্ত পর্যন্ত এবং ভুটানের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে বুড়িমারি সীমান্ত পর্যন্ত সম্প্রসারণের উদ্যোগ রয়েছে। ঢাকা-বাংলাবান্ধা অংশ এশিয়ান হাইওয়ে দুই ও সাসেক করিডর-৯ এবং ঢাকা-বুড়িমারি অংশ সাসেক করিডর-৪ এর অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে প্রকল্পটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
২১টি সড়ক করিডর উন্নয়নের উদ্যোগ ॥ বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত এবং নেপাল নিয়ে সাউথ এশিয়া সাব রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) আঞ্চলিক সহযোগিতা ফোরামের আওতায় ২১টি সড়ক করিডর উন্নয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় জয়দেবপুর থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়কটি উন্নয়নের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। নিরাপত্তা উন্নয়নের লক্ষ্যে উভয় পাশে ধীরগতির যানবাহনের জন্য আলাদা লেন নির্মাণ করা হচ্ছে।
৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার দীর্ঘ আশুগঞ্জ নদীবন্দর-সরাইলÑধরখার-আখাউড়া স্থলবন্দর মহাসড়কের উভয় পাশে এক স্তর নিচু দিয়ে সার্ভিস লেনসহ-৪ লেনে উন্নীত করার লক্ষ্যে ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) এর আওতায় তিন হাজার ৫৬৭ দশমিক ৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন আছে।
১০ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে ৫৪ দশমিক ২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ যাত্রাবাড়ী-মাওয়া (ইকুরিয়া-বাবুবাজার লিংক রোডসহ) এবং পাঁচ্চর-ভাঙ্গা জাতীয় মহাসড়ক-৪ লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলমান রয়েছে। এক হাজার ৬৯৯ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে পার্বত্য জেলা বান্দরবান-রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি সীমান্ত নিরাপত্তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রথম পর্যায়ে চারটি মহাসড়কের সমন্বয়ে ৩১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত মহাসড়ক নির্মাণ প্রকল্প চলমান রয়েছে।
২২ হাজার কিলোমিটার মহাসড়ক ॥ সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের আওতাধীন সর্বমোট ২২ হাজার ৯৬ দশমিক ৩০ কিলোমিটার মহাসড়ক রয়েছে। মহাসড়ক নেটওয়ার্ক বিন্যাস অনুযায়ী ৯৯টি জাতীয় মহাসড়কের দৈর্ঘ্য তিন হাজার ৯০৬ দশমিক তিন কিলোমিটার। এরমধ্যে আট লেনবিশিষ্ট জাতীয় মহাসড়ক ৫০০ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার। ১৩৯টি আঞ্চলিক মহাসড়কের দৈর্ঘ্য চার হাজার ৭৬৬ দশমিক ৯১ কিলোমিটার, যার প্রশস্ততা পাঁচ দশমিক ৫০ মিটার থেকে সাত দশমিক ৩০ মিটার। ৭০১টি জেলা মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ১৩ হাজার ৪২৩ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার। যার প্রশস্ততা তিন দশমিক ৭০মিটার থেকে পাঁচ দশমিক ৫০ মিটার।
সড়ক-মহাসড়ক অধিদফতরের সড়ক নেটওয়ার্কে বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের ও দৈর্ঘ্যরে চার হাজার ৪০৪টি সেতু, ১৪ হাজার ৮১৪টি কালভার্ট এবং দুটি ফেরিঘাটে বিভিন্ন ধরনের ৭১টি ফেরি চলাচল করছে। মহাসড়ক যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে যুগোপযোগী ও সময় সাশ্রয়ী করার লক্ষ্যে সওজ অধিদফতর ১০টি জোন, ২২টি সার্কেল, ৬৫টি বিভাগ, ১২৯টি উপবিভাগের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
উপ-আঞ্চলিক সংযোগ সড়ক স্থাপন করছে বাংলাদেশ ॥ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে আমদানি-রফতানি ও বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ‘সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক পৃথক এসএমভিটি লেনসহ চার লেনে উন্নীতকরণ’ প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে তিন হাজার ৫৮৬ কোটি চার লাখ টাকা।
একইসঙ্গে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে ভারত, ভুটান, নেপাল, মিয়ানমার ও চীনের ক্রস বর্ডার সংযোগসহ উপ-আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ স্থাপনও এই প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এক সেপ্টেম্বর রাজধানীর শেরেবাংলানগর এনইসি সভাকক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। সভাশেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, একনেক সভায় ছয় হাজার ৬২৮ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ে মোট ছয়টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক পৃথক এসএমভিটি লেনসহ চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পটি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ২০২৫ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়ন সম্পন্ন করবে। প্রাক্কলিত ব্যয়ের দুই হাজার ৯৭০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা প্রকল্প ঋণ হিসেবে এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের (এআইআইবি) কাছ থেকে পাওয়া যাবে।
প্রকল্পের আওতায় সিলেট হতে তামাবিল পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশে ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক লেনসহ চার লেনে উন্নীতকরণ এবং ঢাকা-সিলেট-তামাবিল করিডরের মাধ্যমে উপ-আঞ্চলিক সংযোগ স্থাপন করা হবে।
এম এ মান্নান আরও বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে তামাবিল স্থলবন্দর, সিলেটের অর্থনৈতিক অঞ্চল ও রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে যাতায়াত সহজ হবে এবং পর্যটন বিকাশের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে। সারাদেশে আন্তঃজেলা সড়কের উন্নয়ন ও সব মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণে সরকারের পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।
ঢাকা সিলেট ছয় লেন প্রকল্প ॥ এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহায়তায় ঢাকা-সিলেট ছয় লেন সড়কের অবকাঠামো নির্মাণ কাজে এখন আর কোন বাধা নেই। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর কিছু প্রজেক্ট নিয়ে আমার সঙ্গে আলোচনা করতে এসেছিলেন। এর মধ্যে আমাদের সাসেক (সাউথ এশিয়ান সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন) প্রজেক্ট, ঢাকা-এলেঙ্গা প্রজেক্টটির (সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্পের আওতায়) ওপেনিং নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ওটার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
তিনি আরও বলেন, ‘ইম্পর্ট্যান্টলি যেটা আলাপ হয়েছে- সেটা হলো, ঢাকা-সিলেট চার লেন প্রজেক্ট নিয়ে। আসলে দুটি সার্ভিস লেনসহ এটা সিক্স লেন প্রজেক্ট হবে। সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ঢাকা-সিলেট সিক্স লেন, এটা অলমোস্ট এক্সপ্রেসওয়ে। এটা হবে ২০৯ কিলোমিটার। এতে ফ্লাইওভার থাকবে আটটি, ওভারপাসেস থাকবে ২২টি। রেল ওভারপাস থাকবে পাঁচটি, ব্রিজ থাকবে ৬৯টি। আন্ডারপাস থাকবে ১০টি, ফুটওভার ব্রিজ থাকবে ২৯টি। এই হলো টোটাল প্রপোজ প্রজেক্ট। ঢাকা সিলেট ৬ লেন প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় ২০ হাজার কোটি টাকা (দুই বিলিয়ন ডলার) ধরা হয়েছে জানিয়ে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, ‘ফান্ডিংটা ম্যাক্সিমামই এডিবি করবে।
আগস্টের প্রায় মাঝামাঝিতে এক অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক চার লেনের কাজের সব বাধা দূর হয়েছে। তাই আর বিলম্ব নয়। দ্রুত শুরু করতে হবে কাজ। এ জন্য চলমান রিটেইল ডিজাইন ও ডিপিপি প্রণয়নের কাজ দ্রুততার সঙ্গে শেষ করতে হবে। সিলেটের প্রকৌশলীদের এমন নির্দেশ দিয়ে তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ মহাসড়কটি চার লেন করার দাবি সিলেটবাসীর। আমরা সিলেটবাসীকে কথাও দিয়েছি। কিন্তু নানা কারণে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের চার লেনের কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। এখন সব বাধা কেটে গেছে। মহাসড়কটির কাজে এডিবির অর্থায়ন চূড়ান্ত হয়েছে।
ঢাকা-সিলেট যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সব জটিলতা কাটিয়ে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ এগিয়ে নিতে হবে। ওবায়দুল কাদের সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক চার লেন প্রকল্প ছাড়াও সিলেট-তামাবিল চার লেন (সার্ভিস দুই লেনসহ ছয় লেন) সড়ক এবং বিমানবন্দর-বাদাঘাট বাইপাস চার লেন সড়ক প্রকল্পেরও অগ্রগতি সম্পর্কে অবগত হন। তিনি বলেন, বদলে যাওয়া বিশ্বের সঙ্গে সমন্বয় করে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে কাজ করতে হবে।
উভয়পাশে একস্তর নিচু দিয়ে পৃথক সার্ভিস লেনসহ জয়দেবপুর- দেবগ্রাম-ভুলতা-মদনপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করানোর জন্য ২০১৮ সালে পিপিপি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। হাতিরঝিল-রামপুরা-বনশ্রী আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজ-শেখের জায়গা-আমুলিয়া-ডেমরা মহাসড়ক (চিটাগাং রোড মোড় এবং তারাবো লিংক মহাসড়কসহ) পিপিপি ভিত্তিতে চার লেনে উন্নীত করতে ফিজিবিলিটি স্টাডি অনুমোদন করা হয়েছে।
গাবতলী-নবীনগর মহাসড়ক আট লেনে উন্নীত করার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ফোর লেন প্রকল্প নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাঁচদোনা-ডাঙ্গা-ঘোড়াশাল মহাসড়ককে উভয় পাশে একস্তর নিচু দিয়ে সার্ভিস লেনসহ চার লেনে উন্নীত করার কাজ চলমান। জিঞ্জিরা-কেরানীগঞ্জ-নবাবগঞ্জ-দোহার-শ্রীনগর মহাসড়ক উন্নয়ন কাজ চলমান। যাত্রাবাড়ী-ডেমরা (সুলতানা কামাল সেতু) পর্যন্ত মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা হবে।
চলমান ৩৬ মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প ॥ এছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩৬টি মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। একই অর্থবছরে সড়ক বিভাগের ১৭টি মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের আওতায় ১৭টি মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুত প্রকল্প রয়েছে ৬০টি। এগুলোর মধ্যে ৪১টি ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কয়েকটি রয়েছে বাস্তবায়নাধীন।
৪১ সালের মধ্যে আট লেনের মহাসড়ক ॥ ‘প্রেক্ষিত পরিকল্পনা-২০৪১’ অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের সব মহাসড়ক ছয় লেনে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে সেসব মহাসড়ক আট লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। সেই সঙ্গে সড়ক ও মহাসড়কে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতের পরিকল্পনাও নেয়া হয়েছে।
আধুনিক বাংলাদেশ গড়তে হলে উন্নত ও সহজতর যোগাযোগ ব্যবস্থা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে সরকার। এরই অংশ হিসেবে এখন থেকেই যে কোন মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজের সময় ‘প্রেক্ষিত পরিকল্পনা-২০৪১’-এর কথা মাথায় রেখে জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এ জন্য প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১ বাস্তবায়নে সরকারের সঙ্গে সহযোগী হিসেবে থাকার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, গত বছরের ২৪ নবেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে তার তেজগাঁওয়ের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (রূপকল্প ২০২১-২০৪১) বাস্তবায়নের চূড়ান্ত খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। খসড়ায় বলা হয়, এই রূপকল্প বাস্তবায়নে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
যোগাযোগের ক্ষেত্রে একযোগে সড়ক, নৌ ও আকাশ পথকে সমান গুরুত্ব দিয়ে ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, ভবিষ্যতে সব মহাসড়ককে ছয় লেনে এবং সময়ের প্রয়োজনে আট লেনে উন্নীত করার কাজ এখন থেকেই শুরু করতে হবে। ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ ধারণাকে বাস্তবে রূপ দিতে ইন্টারনেট, স্কুল, কলেজ,প্রশাসনিক ভবন, পানি, বিদ্যুত, গ্যাসের সুবিধার মতোই যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা অত্যন্ত জরুরী। ফলে শহরের সব সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দিতে হলে সবার আগে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করতে হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ ও উন্নয়ন করতে না পারলে রূপকল্প-২০২১-২০৪১ বাস্তবায়ন করা দুরূহ।
নৌ-সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে বলেন, গোটা বিশে^র সঙ্গে তাল মিলাতে গেলে আমাদের উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে হবে। এজন্য সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে বিশ^মানের। এরই ধারাবাহিকতায় আন্তর্জাতিক সড়ক নেটওয়ার্ক বাড়বে। ফলে দেশের উন্নয়নের গতিও বাড়বে। ইতোমধ্যে যেসব প্রকল্প নেয়া হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নে আর্থিকসহ কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও দেশের স্বার্থে তা করতে হবে। এরমধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আরও অনেক বেশি এগিয়ে যাবে।