নিজস্ব প্রতিবেদক, নওগাঁঃ
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার মুহাঃ আবু তাহির (ইউএনও) বিভিন্ন অনিয়ম ও অসদাচরণের অভিযোগ এনে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন বদলগাছী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সামছুল আলম খান।
বৃহস্পতিবার বদলগাছী প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সামছুল আলম খান বলেন, বদলগাছী উপজেলায় বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার যোগদানের পর থেকে জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কোনো আলোচনা এবং সমন্বয় ছাড়াই সকল জনগুরুত্বপূর্ণ কাজ করে যাচ্ছেন।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে জনগুরুত্বপূর্ণ কাজসমূহ সম্পাদনের জন্য বারবার তাঁকে বলা হলেও ইউএনও তাতে কোনো কর্ণপাত করেননি। বরং উল্টো উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, উপজেলা সমন্বয় সভার কোনো মিটিং এবং উপজেলা পরিষদেও কোন রেজুলেশন ছাড়াই ইউএনও উপজেলা পরিষদের জায়গায় নির্মিত পরিত্যক্ত একটি দ্বিতল ভবন (উপজেলা পরিষদের এক নম্বর কৃষি ভবন) টেন্ডর বা নিলামের মাধ্যমে (দরপত্র) আহবান না করে ভবনটি ভেঙ্গে ফেলেছেন।
বিধি অনুযায়ী ভবনটির প্রাক্কলন তৈরি করে উর্ধ্বতন কৃর্তৃপক্ষের (কৃষি অধিদপ্তর) অনুমতি নিয়ে টেন্ডার বা নিলামের মাধ্যমে (দরপত্র) আহবান করে ভবনটি ভাঙার কথা থাকলেও উপজেলা নির্বাহী অফিসার কোনো নিয়মনিতীর তোয়াক্কা না করে একক সিদ্ধান্তে ভবনটি ভাঙার নির্দেশ দিয়েছেন। এতে করে সরকার অন্তত ১০/১২ লাখ টাকা রাজস্ব হারিয়েছে।
এছাড়া বদলগাছী উপজেলার সরকারি খাদ্য গুদামে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান সংগ্রহ অভিযানের অংশ হিসেবে কৃষক নির্বাচনে লটারি অনুষ্ঠিত হয়। ওই লটারি অনুষ্ঠানে কোনো কৃষক উপস্থিত ছিল না। কৃষকের উপস্থিতি ছাড়াই কৃষক নির্বাচনের লটারি অনুষ্ঠিত হওয়ায় এর স্বচ্ছতা নিয়ে এলাকায় প্রশ্ন উঠেছে। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে এই লটারির বিষয়ে কোন অবহিত করা হয়নি।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আরও বলেন, করোনাভাইরাস সংকটে কর্মহীন ও অসহায় মানুষকে সহায়তার জন্য উপজেলার দুর্যোগ মোকাবেলা ফান্ড হতে ৫ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এই অর্থ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানসহ সকল জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে দরিদ্র ও অসহায় মানুষের মাঝে বিতরণ করার কথা। কিন্তু ইউএনও এই অর্থ বিতরণে জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কোনো সমন্বয় না করে এককভাবে বিতরণ করছেন এবং আমার জানা মতে লামছাম কিছু বিতরণ করেছে। এতে অনেক ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ সরকারি সাহায্য হতে বঞ্চিত হয়েছেন।
এ উপজেলায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমের অস্বচ্ছতা নিয়ে সর্বমহলে প্রশ্ন উঠেছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাঃ আবু তাহির তাঁর বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই বলে দাবি করে বলেন, উপজেলা পরিষদের পুরাতন এক নম্বর কৃষি ভবন ভাঙ্গার বিষয়ে উপজেলা সমন্বয় সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওই সমন্বয় সভায় স্থানীয় সাংসদ ছলিম উদ্দিন তরফদার উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সামছুল আলম খানও উপস্থিত ছিলেন। যথাযথ বিধি অনুসরণ করে টেন্ডার আহ্বান করে নির্বাচিত ঠিকাদার ওই ভবনটি ভেঙেছেন।
ধান সংগ্রহে কৃষক নির্বাচনে লটারিতে কোনো অনিয়ম হয়নি উল্লেখ করে ইউএনও বলেন, উপজেলার আবেদনকারি ৯ হাজার কৃষকের মধ্য থেকে লটারির মাধ্যমে ১ হাজার ৪শত ৩৯ জন কৃষককে নির্বাচিত করা হয়েছে। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে লটারি অনুষ্ঠানে কৃষকদের আহ্বান করা যায়নি। তবে ওই অনুষ্ঠানে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান না থাকলেও অন্যান্য জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এখানে অনিয়ম হয়নি।
ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না দাবি করে তিনি বলেন, করোনা সংকটে দরিদ্র ও অসহায় মানুষকে খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা দিতে সকল জনপ্রতিনিধির সঙ্গে সমন্বয় করা হচ্ছে। এ বিষয়ে স্থানীয় সাংসদের সার্বক্ষণিক নির্দেশনায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি।