মাহাতাব আলী, বাগাতিপাড়া:
কালের পরিক্রমায় বড়াল নদীর তলদেশ পলি মাটিতে ভরাট হয়ে সবুজ ফসলের মাঠে পরিণত হয়েছে। জল সীমানা সরু হয়ে নালার আকার ধারণ করেছে। বড়ালের চর ও তলদেশে হাজার হাজার একর কৃষি আবাদযোগ্য জমি পেয়ে কৃষকরা মহা খুশি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে বড়ালের ইতিহাস রূপকথার গল্পে পরিণত হবে।
বড়াল পদ্মার শাখা নদী। বড়াল রাজশাহীর চারঘাটের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত পদ্মা থেকে বেরিয়ে আকাঁ-বাঁকা জল পথে চারঘাট, বাঘা, বাগাতিপাড়া, বড়াইগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকা পেরিয়ে সিরাজগঞ্জে যমুনায় মিলিত হয়েছে।
কালের আর্বতে ও চারঘাটে পদ্মা সংলগ্ন বড়াল মুখে স্লুইসগেট নির্মাণের কারণে বড়ালের যৌবনে ভাটা পড়েছে। বর্ষা মৌসুমে পদ্মা থেকে বন্যার সীমিত স্রোতহীন পলিমাটি মিশ্রিত পানি বড়ালে প্রবেশ করে। স্রোতহীন পলিমাটি মিশ্রিত পানির কারণে বড়ালের তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। টই-টুম্বর যৌবন হারা বড়ালের তলদেশ কৃষি আবাদযোগ্য জমিতে পরিণত হয়েছে।
কয়েক যুগ আগেও বড়ালের যৌবন ছিল। বড়ালে বর্ষা মৌসুমে বন্যার পানি প্রবেশ করত। প্রখর স্রোত ছিল। বন্যার পানিতে দুকুল কানায় কানায় পূর্ণ হতো। বন্যার পলিমিশ্রিত পানি বড়ালের দুকুল ঝাঁপিয়ে বিভিন্ন মাঠে প্রবেশ করত।
পলিমিশ্রিত পানিতে কৃষি আবাদযোগ্য জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি পেতো। কৃষকরা দ্বিগুন ফসল ফলাত। বড়াল তীরবর্তী কৃষকরা সারা বছর স্বাচ্ছন্দে সংসার চলতো। নদীতে ছোট-বড় প্রচুর মাছ ছিল। জেলেদের মনে আনন্দ ছিল। তাঁরা মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাতো। কিশোর-কিশোরীরা মনের আনন্দে নদীতে সাঁতার কাটতো। মালামাল বোঝাই ছোট-বড় পালতোলা নৌকা দূর-দূরান্তে যাতায়াত করতো। বড় ব্যবসায়িরা পাল তোলা নৌকাযোগে বিভিন্ন পণ্য বিভিন্ন স্থানে আমদানী-রপ্তানী করত। বর্তমান বড়াল ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে। এখন বড়ালের তলদেশ সবুজ ফসলের মাঠে পরিনত হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাঘা, চারঘাট ও বাগাতিপাড়া উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত বড়াল নদীর চর ও তলদেশে হাজার হাজার একর কৃষি আবাদযোগ্য জমি রয়েছে। বড়াল চরে বিভিন্ন জাতের ফসল শোভা পাচ্ছে। চলতি মৌসুমে আলু, গম, মুগ কালাই, রসুন, পেঁয়াজ, মুলা, কপি, বোরো ধান, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ধরণের সবুজ ফসলের সমাহার। বড়াল চরে কোন কোন এলাকায় আম্রপলি আম, কুল, মাল্টা, পেয়ারা, লেবুসহ বিভিন্ন জাতের ফল চাষ হচ্ছে। বড়াল ঐতিহ্য হারালেও কৃষকদের মূখে আনন্দের হাঁসি।
বাঘা এলাকার কৃষক আনোয়ার হোসেন জানান, তিনি পৈতৃক সম্পত্তির সাথে বড়াল চরে এক একর কৃষি আবাদযোগ্য জমিতে ফসল উৎপাদন করেন। এবার এ জমিতে রসুন, পেঁয়াজ ও গম চাষ করেছেন। এগুলোর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
জামনগর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস জানান, উপজেলা সমন্বয় সভায় একাধিক বার বড়াল সীমানা নির্ধারণ ও সংস্কার বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। কিন্তু বড়ালের সম্পূর্ণ অংশের সিএস নকশা না থাকায় সীমানা নির্ধারণ সম্ভব হয়নি। বড়াল সংস্কারে সরকারি অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। তিনি দ্রুত সংস্কারের মাধ্যমে বড়ালের ঐতিহ্য ফেরাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।