বিশেষ প্রতিবেদক:
নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাউল আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এই ইউনিয়নের গড়মাটি গ্রামের দিন মজুর আবদুল মজিদের ছেলে ফজলুর রহমানের নামে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড (কার্ড নং-১২২৬) রয়েছে। নিয়মিত চালও তোলা হয়েছে। অথচ ফজলুসহ তার পরিবার কিছুই জানে না। কার্ডটি দেখতে কেমন সেটাও জানেনা ফজলুর রহমান। একই ঘটনা ঘটেছে ওই গ্রামের মহির উদ্দিন সরদারের ছেলে আব্দুল আলিম সরদার (কার্ড নং-১১৫৪), এবং মুক্তার সরকারের স্ত্রী রহিমা খাতুন (কার্ড নং-১২৭৫) এর ভাগ্যেও।
সম্প্রতি বিষয়টি জানাজানি হলে খাদ্য নিয়ন্ত্রকের তালিকাতে নিজেদের নাম দেখে ডিলার খালেদ কে ফোন করে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি কিছু জানি না মেম্বর জানে! আর মেম্বর কে জিজ্ঞেস করলে বলে, আমি কিছু জানি না সব ডিলার জানে।
অশিক্ষিত হতদরিদ্র দিনমজুর আব্দুল আলিম জানান, সংশ্লিষ্ট ডিলার খালেদ এর কাছে বসে একই গ্রামের মাহফুজুর রহমান এবং তার সহকারী মাসুদ বলেছিল, তুমি (আব্দুল আলিম) প্রতি মাসে পঁচিশ শো করে টাকা পাবে! এবং কার্ড টা রেখে দেই, তারপর আমাকে আর চাউল দেওয়া হচ্ছে না । বর্তমানে আমি ডিলার এবং ডিলারের সহযোগীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি, তাদের কাছে গেলে তারা বিভিন্নভাবে তালবাহানা করে আমাকে ফিরিয়ে দেয়, আমি এর প্রতিকার চাই।
সম্প্রতি বিষয়টি জানাজানি হলে ভুক্তভোগী রহিমা খাতুন ৯নং ওয়ার্ড মেম্বার মতিউর রহমান (মতি) এর কাছে গেলে মেম্বর মতি সরাসরি তাকে বলে, তোমার নামে কোন কার্ড হয়নি! এই সমস্ত চাউল তোমাদের খেতে হবে না ।
একই গ্রামের আব্দুল মজিদের স্ত্রী ফজিলা খাতুন (কার্ড নং ১২৩৯) অসহায় হতদরিদ্র এই মানুষ টি জানেনই না তার নামে কার্ড হয়েছে। লোকমুখে শুনে তার ছেলেরা এসে তাকে জানায় । তিনি অশ্রুসিক্ত অবস্থায় জানান, প্রায় দেড় বছর আগে মতি মেম্বরের কাছে কিছু সাহায্যের আশায় তার ভোটার আইডি কার্ড দিয়েছিলেন। কিছু দিন আগে মেম্বর এসে তাকে জিজ্ঞেস করেছেন, আপনি কোন কার্ড পেয়েছেন কি না? চাউল পান কিনা?
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চাল আত্মসাতের এসব অনিয়ম দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। তবে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিতে গিয়ে এসব অনিয়ম জানাজানি হচ্ছে। বিশেষ করে খাদ্য সহায়তার তালিকা তৈরি করতে গিয়ে ভুক্তভোগীদের বঞ্চনার বিষয়টি উঠে আসছে।
তিন বছর ধরে গোপালপুর ইউনিয়নে দুই জন ডিলার রয়েছেন। গোপালপুরে ১ হাজার ২৯২ জন খাদ্যবান্ধব কার্ডের আওতায় আছেন। এসব তালিকায় হতদরিদ্র মানুষের নাম থাকার কথা থাকলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের যোগসাজশে প্রবাসী, মৃত, অস্তিত্বহীন ও গোপন রাখা অন্তত দেড় শতাধিক ব্যক্তির নাম স্থান পেয়েছে এই তালিকায়। কার্ডের মাধ্যমে তাদের নামে চাল তুলে তা আত্মসাৎ করা হয়েছে। খাদ্যনিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে নেওয়া তালিকা যাচাই করে ভুক্তভোগীরা তাদের বঞ্চনার কথা তুলে ধরেন।
ভুক্তভোগী পরিবার এবং এলাকাবাসী জানান- এলাকার আত্মস্বীকৃত নেতা নামে পরিচিত মাহফুজুর রহমান এবং তার সহযোগী মাসুদ এর সহযোগিতায় ডিলার মোহাম্মদ খালেদ এই সকল অনিয়ম করে চলেছেন। ভুক্তভোগী আলীম সরদার এর বক্তব্য থেকে বোঝা যায় যে, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ডিলার মাসুদ হলেও আসলে তা পরিচালনা করে মাহফুজ ও মাসুদ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, অত্র এলাকায় নেতা নামে পরিচিত এই মাহফুজ! একটি শিশু নির্যাতন মামলা, চেক জালিয়াতি মামলা, মাদক মামলাসহ বেশ কিছু মামলার আসামি, শুধু তাই নয়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর সোনার বাংলায় ভাষা শহীদদের স্মরণে বরাদ্দকৃত গড়মাটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে, যা ইতিপূর্বে বিভিন্ন প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছিল। মাহফুজ এর সহযোগী মাসুদ গরু চুরি মামলার আসামি বলেও জানান এলাকাবাসী। কথিত আছে যে, ডিলার খালেদ কে পুরোপুরি নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখে অসহায় হতদরিদ্র মানুষ কে ঠকানোর ব্যবসা করে যাচ্ছে বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত এই মাহফুজ!
অনিয়মের বিষয়ে গোপালপুর ইউনিয়নের ওএমএস ডিলার মোঃ খালেদ বলেন, চাল না দেওয়ার অভিযোগ সঠিক না। যে কার্ড নিয়ে এসেছে তাকে চাল দেওয়া হয়েছে। কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না, তা তিনি জানেন না। খালেদের সহযোগী মাহফুজুর রহমান কে জিজ্ঞেস করলে বলেন, আমি কিছু জানি না । জনপ্রতিনিধিদের জিজ্ঞাসা করুন।
এ সক ঘণ্টাল বিষয়ে বড়াইগ্রাম উপজেলা নির্বাহি অফিসার আনোয়ার পারভেজ জানান, লিখিত অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি তদন্তের জন্য উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই বিষয়ে জানার লক্ষ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ার পারভেজ এর মুঠোফোনে কয়েকবার চেষ্টা করেও তাকে না পাওয়া গেলে বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি