নিউজ ডেস্ক: একদিকে বছর শেষ, অন্যদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয়ের বর্ষপূর্তি। ঠিক এমন সময়ে আলোচিত হচ্ছে বিএনপির ব্যর্থতা। যা তৃণমূলে অনাস্থার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে।
দলটির নেতারা বলছেন, বছর শেষে বিএনপির খাতা শূন্য, কোনো অর্জন নেই। কর্মসূচি নির্ধারণ করতে করতেই বছর শেষ। বিএনপির রাজনীতি সীমাবদ্ধ ছিল প্রেস ব্রিফিং, ঘরোয়া বৈঠক, মানববন্ধন ও টেলিভিশন টকশোতে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সারা বছরই ‘কঠোর আন্দোলন’ করার কথা বললেও বাস্তবে তা করতে পারেনি নেতারা। দলীয় নেত্রী কারাগারে আছেন প্রায় দুই বছর। তার অনুপস্থিতিতে লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সিনিয়র নেতাদের সমন্বয়ে দল পরিচালনা করছেন। দলীয় প্রধানের মুক্তির দাবিতে সারাদেশে অনশন, মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, মশাল মিছিল এবং দেশব্যাপী বিভাগীয় সমাবেশ কর্মসূচি পালন করলেও তার ব্যাপকতা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে দলের নেতরা। এতে অনাস্থা বেড়েছে তৃণমূলের।
বিএনপি নেতাকর্মীদেরই দাবি, খালেদা জিয়াকে দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে আটকে রাখা হলেও রাজপথে কোনো কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলে সরকারকে চাপে রাখতে পারেনি তারা।
গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির মধ্যদিয়ে নতুন বছর শুরু করে বিএনপি। নতুন নির্বাচনের দাবিতে বছরের শুরুতে ঘোষণা দিলেও সময়ের পরিক্রমায় তা ফিকে হয়ে যায়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবি, ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির নির্বাচিত প্রার্থীর শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা নেমে আসে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে গত ৭ মার্চ শপথ নেন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে নির্বাচিত সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। পরে ২ এপ্রিল সিলেট-২ আসন থেকে গণফোরাম থেকে নির্বাচিত আরেক সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানও শপথ নেন। এরপর ২৫ এপ্রিল দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়েই সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেন ঠাকুরগাঁও-৩ (পীরগঞ্জ-রাণীশংকৈল) আসন থেকে নির্বাচিত বিএনপি নেতা মো. জাহিদুর রহমান। জাহিদুরকে দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্তেই গত ২৯ এপ্রিল সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে নির্বাচিত চার এমপি শপথ নেন। তবে বগুড়া-৬ আসনে নির্বাচিত দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শপথ নেননি। ওই উপ-নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী জি এম সিরাজ বিজয়ী হয়ে সংসদ অধিবেশনে যোগ দেন।
সারা বছর তার জামিন আবেদন নিয়ে ব্যস্ত ছিল দলের গুরুত্বপূর্ণ আইনজীবী নেতারা। বছরের শুরুতে বিএনপির সহযোগী সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। পরে কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়া বহু বছরের অচলায়তন ভেঙ্গে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত করে আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়। এ বছরের ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে ছাত্রদলের ভরাডুবি হয়েছে। এই নির্বাচনে সংগঠনটির মনোনীত প্যানেলের কোনো প্রার্থী নির্বাচিত হতে পারেননি।
গত ৫ নভেম্বর ভাইস চেয়ারম্যান মোর্শেদ খান পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এর একদিন পরই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমানের রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর খবর আসে। এছাড়া জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে কয়েকজন দল থেকে চলে যান। বিএনপির সহ-অর্থ-বিষয়ক সম্পাদক মো. শাহাব উদ্দিন, নির্বাহী কমিটির সদস্য কণ্ঠশিল্পী মনির খান, ইসমাইল হোসেন বেঙ্গলসহ আরো অনেকেই। অথচ অর্জনের খাতা শূন্য বলে সমালোচিত হচ্ছে। অনাস্থা দেখা দিয়েছে তৃণমূলে।