নিউজ ডেস্ক:
৫ উপজেলায় বকনা উন্নয়ন কেন্দ্র স্থাপন
-বছরে সরবরাহে ঘাটতি ৪৫.২২ লাখ টন
-মাথাপিছু প্রশিক্ষণ ব্যয় ১.৬২ লাখ টাকা
গ্রামীণ মানুষের কাছে গাভীপালন উল্লেখযোগ্য পেশা হলেও আমাদের দেশে গাভী পালন ও দুগ্ধ উৎপাদন আজো আশানুরূপ পর্যায়ে উঠে আসেনি। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে দুধের উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও চাহিদা পূরণে পর্যাপ্ত নয়। বর্তমানে বছরে ১৫২ লাখ দুই হাজার টন চাহিদার বিপরীতে প্রকৃত উৎপাদন ১০৬ লাখ ৮০ হাজার টন। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী এখনো ঘাটতি রয়েছে ৪৫ লাখ ২২ হাজার টন। এই ঘাটতি পূরণে পাঁচ উপজেলায় বকনা উন্নয়ন কেন্দ্রসহ ৫০ উপজেলায় উৎপাদন বাড়াতে ১৫৭ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্য ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, বর্তমানে সবমিলিয়ে প্রায় আড়াই লাখ দুগ্ধ খামার রয়েছে। এসব খামারে প্রত্যক্ষভাবে ৭০ লাখ ও পরোক্ষভাবে আরো প্রায় ৫০ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা নির্বাহ হচ্ছে। দেশে দুধের চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশই উৎপাদন হচ্ছে এসব খামারে। তবে দুগ্ধ শিল্পে এখনো ব্যাপক উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে গবাদিপশু পালনের সুযোগ সেভাবে গড়ে ওঠেনি। ফলে আমদানি করা দুধের ওপর নির্ভরতা রয়ে গেছে। এর ফলে প্রতি বছর বিপুল অর্থ চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে। গবাদিপশুর ঘনত্বের দিক থেকে বাংলাদেশ এশিয়ায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছর দেশে ১৫০.২৯ লাখ টন দুগ্ধ চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন ছিল মাত্র ৯৪.০৬ লাখ টন। আর ২০১৯-২০ অর্থবছর এই চাহিদা ১৫২.০২ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন ছিল ১০৬.৮০ লাখ টন। ফলে বর্তমানে ঘাটতি রয়েছে ৪৫ লাখ ২২ হাজার টন। চাহিদা পূরণে কিছু গুঁড়া দুধও আমদানি করা হয়। তবে সেগুলো নিম্নমানের। বাকি চাহিদা অপূর্ণই থেকে যায় প্রতি বছর।
দুধের ঘাটতি মোকাবেলায় উপজেলায় দুগ্ধ সমবায়ের কার্যক্রম সম্প্রসারণের জন্য ১৫৬ কোটি ৮৮ লাখ ২৪ হাজার টাকা খরচে একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে ওই ৫০ উপজেলায় সঙ্কর জাতের গাভী পালনের প্রকল্পের মাধ্যমে দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধি করার কথা বলা হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে গড়ে প্রতি উপজেলায় সাড়ে চার লাখ লিটার দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধি করা হবে। এতে পাঁচ হাজার উপকারভোগীর কর্মসংস্থান হবে। আগামী চার বছরে বাস্তবায়ন করা হবে এই কার্যক্রম। এই বকনা উন্নয়ন কেন্দ্র হবে মানিকগঞ্জ সদর, আলমডাঙ্গা, ভেদরগঞ্জ, মনিরামপুর ও মুলাদী উপজেলায়।
প্রস্তাবনার তথ্যানুযায়ী, প্রকল্পের আওতায় ৪০৮ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। তাতে খরচ হবে ছয় কোটি ৬১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। এতে প্রতি জনে খরচ এক লাখ ৬২ হাজার টাকা। আর বকনা কেন্দ্রের বাছুরসহ ৬০০ গাভীর ১০ মাসে খাবার খরচ পাঁচ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এতে প্রতি মাসে ব্যয় ৯০ হাজার টাকা। পাঁচ হাজার জনকে ঘূর্ণায়মান অনুদান দেয়া হবে ১০০ কোটি টাকা। যাতে প্রতি জনে বছরে দুই লাখ টাকা। আর ৩০০ জনকে অনুদান দেয়া হবে সাড়ে সাত কোটি টাকা। যাতে প্রতি জনের পেছনে ব্যয় আড়াই লাখ টাকা।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের (ডিএলএস) তথ্য মতে, ২০০৯-১০ অর্থবছরে দুধ উৎপাদন ছিল ২৩ লাখ ৭০ হাজার টন, যা গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিল এক কোটি ছয় লাখ ৮০ হাজার টন। এই সময়ে দুধের চাহিদা ছিল এক কোটি ৫২ লাখ দুই হাজার টন। জনপ্রতি ২৫০ মিলিলিটার হিসাবে এ চাহিদা পরিমাপ করা হয়েছে। জনসংখ্যা হিসাবে নেয়া হয়েছে ১৬ কোটি ৬৬ লাখ। সে হিসাবে জনপ্রতি দৈনিক দুগ্ধ গ্রহণ করছে ১৭৫ দশমিক ৬৩ মিলিলিটার, যা আগের অর্থবছরে ছিল ১৬৫ মিলিগ্রাম। ফলে এখনো ঘাটতি প্রায় ৪৫ লাখ ২২ হাজার টন। জনপ্রতি প্রতিদিন ঘাটতি ৭৫ মিলিলিটার। দেশে এখন বছরে দুধ উৎপাদন ছাড়িয়েছে হাজার কোটি লিটার। সে হিসাবে সারা দেশে প্রতিদিন গড়ে আড়াই-তিন কোটি লিটার দুধ উৎপাদন হচ্ছে। এর মাত্র ৬-৭ শতাংশ বা ১৫-২০ লাখ লিটার প্রক্রিয়াজাত কোম্পানিগুলো সংগ্রহ করে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের ডেইরি শিল্পের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আমদানিকৃত গুঁড়া দুধের সাথে অসম প্রতিযোগিতা। এসব গুঁড়া দুধ উৎপাদিত দেশে ভর্তুকিপ্রাপ্ত হওয়ায় এর দাম তুলনামূলক অনেক কম হয় বাংলাদেশে। ফলে বাংলাদেশের স্থানীয় উৎপাদনকারীরা প্রতিযোগিতা করতে পারেন না। তাই বাল্ক ফিল্ড মিল্ক আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বাল্ক ফিল্ড মিল্ক নামে ভেজিটেবল ফ্যাট মিশ্রিত যে দুধ বাংলাদেশে আমদানি হয়, সেটিই মূলত দেশের দুগ্ধ শিল্প ধ্বংসের জন্য দায়ী। ভেজিটেবল ফ্যাট মিশ্রিত এ দুধের ওপর আমদানি শুল্ক বাড়ানো হয়নি। আমদানিকৃত গুঁড়া দুধের ওপর আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে এবং অ্যান্টি-ডাম্পিং ট্যাক্স আরোপ করে দেশীয় দুগ্ধ শিল্প রক্ষার পদক্ষেপ নিতে হবে।