‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর’র আশপাশে অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা নিষিদ্ধসহ ১১ দফা অনুশাসন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ শিল্পনগরীর ‘মাস্টার প্ল্যানকে’ সংশোধনের মাধ্যমে এসব অনুশাসনকে অন্তর্ভুক্ত করতে বলা হয়।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই শিল্পনগরের মাস্টার প্ল্যান সংক্রান্ত সভায় এসব অনুশাসন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
জানতে চাইলে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী যুগান্তরকে জানান, প্রধানমন্ত্রীর দেয়া অনুশাসনগুলো কার্যকর করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে চিঠির মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরীর সঙ্গে বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সম্পৃক্ত। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা অবশ্যই দায়িত্ব পালন করবেন।
ওই বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরী মাস্টার প্ল্যান নিয়ে বৈঠকে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান তথ্য তুলে ধরেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী এ বিশেষ শিল্পনগরী নিয়ে অনুশাসন প্রদান করেন। অনুশাসনগুলোর মধ্যে রয়েছে এই শিল্পনগরীর পার্শ্ববর্তী এলাকা নিয়ে একটি সামগ্রিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা। এটি বাস্তবায়ন করবে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরীর মাস্টার প্ল্যানে বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, জলাবদ্ধতা ও বন্যা প্রতিরোধ কার্যক্রম গ্রহণ করতে বলা হয়। এছাড়া মাস্টার প্ল্যানে প্রস্তাবিত সমুদ্রবন্দর নির্মাণ কাজ ত্বরান্বিত করার বিষয়েও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়।
আরও জানা গেছে, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, জলধারা, স্টেডিয়াম, খেলার মাঠ ও উন্মুক্ত এলাকা রাখাসহ পর্যাপ্ত বৃক্ষরোপণের ব্যবস্থা করতেও অনুশসান দেয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে প্রতিদিন পানির চাহিদা হবে ১১২ কোটি ৫০ লাখ লিটার। সেখানে ‘পানি শোধনাগার ও গভীর নলকূপ স্থাপন’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
এছাড়া শ্রমিকদের সহজে যাতায়াত যোগ্য স্থানে পর্যাপ্তসংখ্যক মানসম্মত আবাসিক এলাকা নিশ্চিত করতে হবে। এর সঙ্গে বিনিয়োগকারীরাও যেন শ্রমিকদের মানসম্মত আবাসিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনে আরও বলা হয়, মাস্টার প্ল্যানে সলিড ওয়েস্ট, লিকুইড ওয়েস্ট ও ই-ওয়েস্টসহ সব ধরনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি পরিকল্পিত, পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধব হিসেবে এ শিল্পনগরীকে গড়ে তুলতে হবে। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিস, বাণিজ্য ও বিনোদন কেন্দ্র, শপিংমলসহ সব ধরনের আধুনিক ইউটিলি নির্মাণ করতে হবে। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ যোগাযোগব্যবস্থা মানসম্মত করা, বিশেষ করে শিল্পনগর থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত একটি আধুনিক যোগাযোগ এবং কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে।
এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের নির্মাণাধীন সুপার ডাইকের পাশে বনায়ন সৃষ্টি, সাগর তীরে পর্যাপ্ত বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে নতুন ভূমি গঠন, শিল্পানগরের নিকটবর্তী সন্দ্বীপ ও অন্য দ্বীপগুলো পর্যায়ক্রমে সংযুক্ত করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনে আরও বলা হয়, বিনিয়োগকারীদের জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, শ্রমিক কল্যাণ, পানির ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ সংরক্ষণসহ অন্য বিষয়ে গাইডলাইন প্রণয়ন ও মনিটর করবে বেজা।
প্রসঙ্গত, প্রায় ৩০ হাজার একর জমিতে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। বৃহত্তম এই অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি সম্পন্ন হলে প্রাথমিক পর্যায়ে অন্তত ৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। মীরসরাই সংলগ্ন সীতাকুণ্ড ও সোনাগাজী উপজেলা পর্যন্ত এলাকায় এটি হবে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় শিল্পজোন। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি হলে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধিসহ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
এই শিল্পনগরের পুরো অংশে পানির প্রাপ্যতার বিষয়ে ইন্সটিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম) একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ চলমান রয়েছে। আইডব্লিউএম এর মধ্যে ইনটার্ম রিপোর্ট-১ এবং ইনটার্ম রিপোর্ট-২ দাখিল করেছে। এই শিল্পনগরের ২এ, ২বি, ৩, ৪ এবং ৫ জোনগুলোর প্রায় ২ হাজার একর এলাকায় শিগগিরই শিল্প ইউনিট স্থাপনের কাজ শুরু হবে।
উন্নয়ন নিশ্চিতকল্পে সরকার বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে ২০১৫ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে ১৫ বছরে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের পরিকল্পনা নিয়েছে। এর মধ্যে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ৮৮টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অনুমোদনপ্রাপ্ত অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর মধ্যে ৫৯টি সরকারি ও ২৯টি বেসরকারি।