নিউজ ডেস্ক:
চলছে শোকের মাস। শ্রাবণের অঝোর ধারা আর বাঙালির অবারিত চোখের পানি মিলেমিশে বেদনার এক বিস্তৃত মহাসাগরে রূপান্তরিত হতে দেখি দেশটাকে এ মাসে। যার যতটা সাধ্য সেভাবেই স্মরণ করেন তাকে অন্তরের গভীর তল থেকে। কবিরা অন্তর্যামী। তাই অনেক কিছুই আগে ভাগেই তারা দেখতে পান। সে কারণেই পঁচাত্তরের পরে যখন নিকষ কালো অন্ধকার নেমে এসেছিল বাংলাদেশের সমাজে, তখনো নিরাশ হননি কবিরা। ‘তুমি কেউ নও’ বলে যখন বিশ্বাসঘাতকের দল আস্ফালন করছিল, তখন কবি মহাদেব সাহা বলে উঠেছিলেন, ‘কিন্তু বাংলাদেশের আড়াই শত নদী বলে/ তুমি এই বাংলার নদী, বাংলার সবুজ প্রান্তর।’ ‘ধন্য সেই পুরুষ’ কবিতায় আমাদের অন্যতম প্রধান কবি শামসুর রাহমান বলে উঠেছিলেন, ‘ধন্য সেই পুরুষ যাঁর নামের ওপর পতাকার মতো/ দুলতে থাকে স্বাধীনতা।’ কবি আরও বলেছিলেন, ‘এমনি অক্ষয় তিনি যাঁর নামের ওপর কখনো ধুলো জমতে দেয় না হাওয়া।’ প্রকৃতির সেই সন্তানের নামে এ দেশের পাখি, গাছ, নদী, ফুলসহ সবাই ‘শেখ মুজিবের নামে প্রতিদিন লেখে তারা নতুন কবিতা/ মুজিব গোলাপ হয়ে ফোটে, লাল পদ্ম হয়ে ফোটে হৃদয়ে হৃদয়ে।’ (মহাদেব সাহা, ‘শেখ মুজিব আমার নতুন কবিতা’)। মনে হয় মধুমতির বুক বেয়ে তিনি সত্যি ফিরে এসেছেন তার প্রিয় বাংলাদেশে। কবি শামসুর রাহমান তাই বলতে পারেন, ‘এখন তো তিনি নেই, তবু সেই ধ্বনি আজ শুধু/ তারই কথা বলে।’ (‘তিনি এসেছেন ফিরে’)।
তিনি আছেন বিরাজমান আমাদের চারপাশে। প্রতিদিন তিনি আরও বড় হচ্ছেন। আরও ব্যাপক হচ্ছেন। কেননা তিনি যে মহৎ প্রাণ। নিজের জন্য তিনি কখনো ভাবেননি। ভেবেছেন বাঙালির জন্য, বিশ্বের পুরো মানবজাতির জন্য। নিজেই লিখেছেন তিনি, ‘একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি। একজন বাঙালি হিসেবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত, তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এ নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালোবাসা, অক্ষয় ভালোবাসা, যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে।’ (‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’)। আজীবন তিনি লড়েছেন মানুষের মুক্তির জন্য। তার সেই লড়াই বিস্তৃত হয়েছিল প্রতিটি বাঙালির অধিকার আদায়ের লড়াই থেকে স্বাধীনতার সংগ্রাম পর্যন্ত।
শুরু থেকেই বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির মূল জায়গায় ছিল বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়। শাসক শ্রেণি জনগণের ন্যায্য দাবি মানতে অস্বীকার করলে তিনি রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। তিনি বেছে নিয়েছেন সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের পথ। বঙ্গবন্ধু ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং এর আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটকে পুরোপুরি ধারণ করতে সক্ষম হয়েছেন। তাই তো ১৯৫৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আরমানিটোলা ময়দানে এক জনসভায় বলতে পেরেছিলেন, ‘ভাষা-আন্দোলন শুধু ভাষার দাবিতে ছিল না, সেটা ছিল আমাদের জীবন-মরণের লড়াই। আমরা মানুষের মতো বাঁচতে চাই। আমরা খাদ্য চাই, বস্ত্র চাই, আশ্রয় চাই, নাগিরক অধিকার চাই।’ তদানীন্তন পাকিস্তানের দুই অংশের রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং তার ফলস্বরূপ দুই অংশের ভেতর অর্থনৈতিক বৈষম্যের প্রেক্ষাপটে ‘দুই অর্থনীতি’র তত্ত্বকে ম–খ্য প্রশ্ন হিসাবে সামনে আনেন বঙ্গবন্ধু। আর এরই ভিত্তিতেই গড়ে তোলেন ঐতিহাসিক ছয় দফা কর্মসূচি। বিশ্বাসযোগ্য নেতৃত্বের গুণে ছয়-দফার প্রতি প্রবল জনসমর্থনে ভীত হয়ে বঙ্গবন্ধুকে মিথ্যা ষড়যন্ত্র মামলায় ফাঁসিয়ে দিতে চেয়েছিল পাকিস্তানি সামরিক সরকার। ঊনসত্তরে ছাত্র-জনতা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাকে বের করে আনে এবং ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেয়। সমগ্র জাতির আশা-ভরসার প্রতীকে পরিণত হন তিনি। ‘সোনার বাংলা শ্মশান কেন?’-এ প্রশ্নকে স্লোগান করে ১৯৭০-এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ অর্জন করে ভূমিধস বিজয়। পাকিস্তানের অভিজন শাসকরা তাদের কুক্ষিগত ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চেয়েছিল। কাজেই রাজনৈতিক সংগ্রামকে সশস্ত্র যুদ্ধে রূপান্তরের বিকল্প ছিল না। বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধে দেশকে নেতৃত্ব দেন এবং অবশেষে কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের নেতৃত্ব ভার গ্রহণ করেন। শুরু করেন অসামান্য অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রাম। সেই সংগ্রামের মর্মবাণী হিসাবে তিনি উচ্চারণ করেন, ‘এই স্বাধীনতা তখনই আমার কাছে প্রকৃত স্বাধীনতা হয়ে উঠবে যেদিন বাংলাদেশের কৃষক-মজুর ও দুঃখী মানুষের সকল দুঃখের অবসান হবে। … আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে আরও শক্তিশালী শত্রু। এই শত্রু হলো অভাব, দারিদ্র্য, ক্ষুধা, রোগ, অশিক্ষা, বেকারি ও দুর্নীতি। …এই যুদ্ধে জয় সহজ নয়। অবিরাম এই যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে এবং একটি সুখী, সুন্দর অভাবমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। তবেই হবে আমাদের সংগ্রাম সফল। আপনাদের শেখ মুজিবের স্বপ্ন ও সাধনার সমাপ্তি।’ (‘বাংলা আমার-আমি বাংলার’ গ্রন্থ থেকে)।
১৯৭২-এর সংবিধানের চারটি মূল স্তম্ভে তার এই মৌল রাষ্ট্রচিন্তারই প্রতিফলন ঘটেছে। চারটি স্তম্ভ হলো : ১. জাতীয়তাবাদ-বাঙালির নিজস্ব জাতীয় পরিচয় ও আত্মসম্মানের নিশ্চয়তা, ২. সমাজতন্ত্র-নিজস্ব বাস্তবতাকে বিবেচনায় রেখে সাম্যভিত্তিক সমাজ গঠন, ৩. গণতন্ত্র-জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সংসদীয় পদ্ধতির শাসন, ৪. ধর্মনিরপেক্ষতা-সাম্প্রদায়িক শক্তিকে প্রতিহত করে সম্প্রীতি বজায় রাখা। বঙ্গবন্ধুর সংবিধানে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা হয়েছিল। যেসব অঙ্গীকারের জন্য বাহাত্তরের সংবিধান এতটা প্রশংসিত সেগুলোর মধ্যে রয়েছে : ১. গণতন্ত্র ও মানবাধিকার। বিকেন্দ্রায়ন, ২. বিনামূল্যে বাধ্যতামূলক শিক্ষা। স্বাস্থ্য ও পুষ্টি। নারীর ক্ষমতায়ন, ৩. পল্লি উন্নয়ন, কৃষি বিপ্লব, শ্রমিকের মুক্তি, ৪. সমবায় ও ব্যক্তি খাতকে উৎসাহ প্রদান, রাষ্ট্রীকরণ, ৫. কর্মসংস্থানের সুযোগ, ৬. মৌলিক চাহিদা পূরণ। মুক্তিযুদ্ধ শেষে ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে দাঁড়ানো যে সংগ্রাম বঙ্গবন্ধু সূচনা করেছিলেন তা এক কথায় বলা চলে দুঃসাহসী। মাত্র ৮ বিলিয়ন ডলার আকারের অর্থনীতি নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। শূন্য ছিল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। মাত্র ৩ শতাংশ সঞ্চয় জিডিপি অনুপাত। মাত্র ৯ শতাংশ বিনিয়োগ-জিডিপি অনুপাত। প্রথম অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকা। অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর সময়োচিত নীতিগুলোর মধ্যে ছিল : ১. জাতীয়করণ, ২. চার মূলনীতিভিত্তিক সংবিধান প্রণয়ন, ৩. পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা।
উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধের ধবংসস্তূপ থেকে দেশকে নতুন করে গড়ে তুলতে শিল্প খাতে জাতীয়করণ, সব নাগরিকের সমঅধিকার নিশ্চিতকরণের জন্য সংবিধান প্রণয়ন এবং পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা কাঠামোর আওতায় অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের পথরেখা নির্ধারণের কাজগুলো বঙ্গবন্ধু সম্পন্ন করেছিলেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে। সুচিন্তিত পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের অভিযাত্রার এক অনন্য দলিলের নাম প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১৯৭৩-১৯৭৮)। এ পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য ছিল : ১. কৃষি ও শিল্পের পুনর্গঠন ও উৎপাদন বৃদ্ধি, ২. কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য নিরসন, ৩. প্রবৃদ্ধির হার ৩ থেকে ৫.৫ শতাংশে উন্নীতকরণ, ৪. নিত্যপণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণ, ৫. বৈদেশিক সহায়তার ওপর নির্ভরতা হৃাস (৬২ থেকে ২৭ শতাংশ), ৬. আমদানি নির্ভরতা কমাতে শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধি। ০৭) রপ্তানি বাড়ানো।
স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু তিনটি মৌল নীতি গ্রহণ করেন। এসব নীতির সুফল আমরা এখনো ভোগ করছি। সামাজিক সচেতনতা ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়িয়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার দ্রুত কমিয়ে আনা। গবেষণা ও উন্নয়নে সমর্থন দিয়ে কৃষি উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের চেষ্টা নিরন্তর চালিয়ে যাওয়া। সরকারি অর্থে দেশের প্রতিটি কোণে প্রাথমিক শিক্ষার আলো জ্বালিয়ে দেয়া। পাশাপাশি তিনি সুদূরপ্রসারি শিল্পায়নের যে কৌশল গ্রহণ করেন, তাতে রাষ্ট্রনির্ভরতায় প্রাধান্য থাকলেও ব্যক্তি খাতের বিকাশেও উৎসাহ দেওয়া হয়। শুরুতে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে শিল্পের প্রাথমিক ভিত্তি তৈরির প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ব্যক্তি খাতের কার্যকর বিকাশের পরিবেশ সৃষ্টির প্রস্তাবনা ও পরিকল্পনাও দৃশ্যমান ছিল। আর তাই ১৯৭৪-৭৫ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের সীমা ২৫ লাখ থেকে ৩ কোটিতে নেওয়া এবং ১৩৩টি পরিত্যক্ত কারখানা ব্যক্তি মালিকানায় হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে সব উদ্যোগের মূলে ছিল উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়টি। তাই তো বঙ্গবন্ধুকে বলতে শুনি, ‘ভাইয়েরা আমার, পরিশ্রম না করলে, কঠোর পরিশ্রম না করলে সাড়ে ৭ কোটি লোকের ৫৪ হাজার বর্গমাইল এলাকার এ দেশে অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি করা যাবে না। ভিক্ষুক জাতির ইজ্জত থাকে না। বিদেশ থেকে ভিক্ষা করে এনে দেশকে গড়া যাবে না। দেশের মধ্যেই পয়সা করতে হবে।
শ্রমিক ভাইদের কাছে আমার অনুরোধ। তোমাদের বারবার বলেছি এখনো বলছি, প্রোডাকশন বাড়াও’।
একই সঙ্গে তিনি বলতেন ‘সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ চাই। সে কারণেই আর্থ-সামাজিক রূপান্তরের জন্য শিক্ষার অপরিহার্যতাকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। ব্যাপকভিত্তিক এ পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন ছিল দক্ষ মানবসম্পদ। তাই বঙ্গবন্ধু শিক্ষার ওপর খুব জোর দিয়েছিলেন। গঠন করেছিলেন কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন। তিনি আরও জানতেন, গণমুখী জনপ্রশাসন ছাড়া অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই মাঠ প্রশাসনকে দক্ষ করে গড়ে তোলাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল। গড়ে তুলেছিলেন জনপ্রশাসনবিষয়ক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বায়ত্তশাসন দেওয়া, ইউজিসি গঠন, কৃষি গ্র্যাজুয়েটদের ক্যাডার সার্ভিসে অন্তর্ভুক্তকরণ ইত্যাদি বঙ্গবন্ধুর বাস্তবমুখী শিক্ষা ভাবনার প্রতিফলন। সবার সঙ্গে বন্ধুত্বের কূটনীতি এবং বিশ্ব শান্তির পক্ষে ছিলেন বঙ্গবন্ধু। এ কারণেই বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে বলেছিলেন, ‘বাঙালি জাতি এমন এক বিশ্বব্যবস্থা গঠনে উৎসর্গীকৃত, যে ব্যবস্থায় মানুষের শান্তি ও ন্যায়বিচার লাভের আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হবে। …অনাহার, দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও বুভুক্ষার তাড়নায় জর্জরিত, পারমাণবিক যুদ্ধের দ্বারা সম্পূর্ণ ধবংস হওয়ার আশঙ্কায় শিহরিত বিভীষিকাময় জগতের দিকে আমরা এগোব না, আমরা তাকাব এমন এক পৃথিবীর দিকে, যেখানে বিজ্ঞান ও কারিগরি জ্ঞানের বিস্ময়কর অগ্রগতির যুগে মানুষের সৃষ্টিক্ষমতা ও বিরাট সাফল্য আমাদের জন্য এক শঙ্কামুক্ত উন্নত ভবিষ্যৎ গঠনে সক্ষম।’
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সঠিক পথেই এগোচ্ছিল বাংলাদেশ। মাত্র চার বছরে মাথাপিছু আয় প্রায় তিনগুণ বাড়ানো সম্ভব হয়েছিল। ৯৩ ডলার থেকে ২৭৩ ডলারে উন্নীত করা সম্ভব হয়েছিল মাথাপিছু আয়। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট তাকে শারীরিকভাবে হারিয়ে বাংলাদেশ ছিটকে পড়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের পথ থেকে। বহু প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে দেশ আবার বঙ্গবন্ধুর পথে ফিরেছে তারই কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে। ১৯৯৬-এ ক্ষমতায় এসেই বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে দেশকে এগিয়ে নিতে শুরু করেছিলেন তিনি। ২০০১-এ আবার সে অভিযাত্রায় ছেদ পড়ে। তারপর ২০০৯-এ ক্ষমতায় ফিরে গত এক যুগ ধরে তিনি অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের এক অবিশ্বাস্য অভিযাত্রা অব্যাহত রেখেছেন। ১৯৭৫ পরবর্তী প্রবৃদ্ধির ৭৩ শতাংশই হয়েছে গত এক যুগে। ১৯৭৫-এর পর রেমিট্যান্স বেড়েছে ২৮৫ গুণ এবং রপ্তানি বেড়েছে ১৩৩ গুণ। গত এক যুগে মাথাপিছু আয় সাড়ে তিন গুণ বেড়েছে। এক দশকে রিজার্ভ বেড়েছে প্রায় ছয় গুণের মতো (৪৬ বিলিয়ন ডলার)। উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি এসেছে অনিবার্যভাবেই। মেট্রোরেল, পদ্মা সেতুসহ মেগা প্রকল্পগুলো এখন দৃশ্যমান।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ‘আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছি। তবে এ উদযাপন যেন শুধু আনুষ্ঠানিকতা সর্বস্ব না হয়। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী সামনে রেখে আমাদের দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার নতুন করে শপথ করতে হবে।’ (বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকীর প্রাক্কালে জাতির উদ্দেশে ভাষণে)। বঙ্গবন্ধুর প্রয়াণের দিনে তার স্বপ্নের আলোকে বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রা আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, সবুজ ও মানবিক হোক সে প্রত্যাশাই করছি।
ড. আতিউর রহমান : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর