নিজস্ব প্রতিবেদক:
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ১৯৬৯ সালে পৃথিবীতে শুরু হওয়া তৃতীয় শিল্প বিপ্লবে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে শরীক করার দূরদর্শী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে আইটিইউ ও ইউপিইউ এর সদস্য পদ গ্রহণ করে ও বেতবুনিয়ায় উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্র স্থাপন করে ডিজিটালাইজেশনের বীজ বপন করে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর নামে প্রতিষ্ঠিত সংগঠনসমূহের মূল কাজ হওয়া উচিৎ তার সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়নে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার চলমান সংগ্রাম এগিয়ে নেওয়া এবং তার আদর্শকে প্রসারিত করা।
রবিবার ওয়েবিনারে বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ, টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড শাখার নব নির্বাচিত কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ টেলিটক শাখার সভাপতি প্রকৌশলী মো. রনক আহসানের সভাপতিত্বে এবং বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ টেলিটক শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আতিকুল আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর, টেলিটক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ টেলিটক শাখার প্রধান উপদেষ্টা মো. সাহাব উদ্দিন, বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. হাবিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. নুরুজ্জামান. আইইবির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. শাহাদাৎ হোসেন (শীবলু)।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ডিজিটাল প্রযুক্তিকে এগিয়ে নিতে প্রকৌশলীদের ভূমিকা তুলে ধরে বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েরা অত্যন্ত মেধাবী। আমরা অনেক ক্ষেত্রেই বিদেশি প্রকৌশলীদের উপর এখন আর নির্ভরশীল নই। আমাদের মেধাবী সন্তানরা আন্তর্জাতিক রোবটিকস প্রতিযোগিতায় বিশ্বের ১৭৪টি দেশকে হারিয়ে প্রথম স্থান অর্জন করেছে। বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সেতু পদ্মা সেতুসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় তারা দক্ষতার সাথে কাজ করছে।
মন্ত্রী বলেন, বিশ্বে টেলিকম প্রযুক্তি হচ্ছে শ্বাস প্রশ্বাসের মত। এটি ছাড়া মানুষের জীবনযাপন প্রায় অচল। এছাড়া গ্রামের দ্বিতীয় শ্রেণি পড়ুয়া শিশুটিও এখন ইন্টারনেট চায়। অনলাইনে ক্লাশ করার জন্য প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য ইন্টারনেট এখন আবশ্যক একটি উপাদান। তিনি বলেন, টেলিটক প্রকৌশলীদের প্রধান কাজ হবে তাদের মেধাকে কাজে লাগিয়ে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে অংশ গ্রহণের উপযোগী করে টেলিটককে গড়ে তোলা।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই মেয়াদে তার ১৬ বছরের শাসনামলে অতীতের সকল পশ্চাদপদতা অতিক্রম করে বাংলাদেশকে বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করছেন। তিনি বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের নেতৃবৃন্দকে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রূপকল্প বাস্তবায়নে নিজ নিজ দায়িত্ব নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে পালনের আহ্বান জানান।
মন্ত্রী জন-মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী টেলিটককে গড়ে তুলতে গৃহীত কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরে বলেন, টেলিটককে মানুষের প্রত্যাশার জায়গায় নিয়ে যেতে আমরা কাজ শুরু করেছি এবং সেদিন বেশি দূরে নয় যে দিন টেলিটক হবে মানুষের প্রথম পছন্দ। দুর্গম পার্বত্য অঞ্চল এবং সুন্দরবনসহ হাওর, দ্বীপ ও চরাঞ্চলে ইতোমধ্যে মানুষ টেলিটকের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশকে আধুনিক ও উন্নত বিশ্বের একটি দেশে পরিণত করা। তিনি জানতেন যেভাবে পৃথিবী পরিবর্তিত হচ্ছে এবং নতুন নতুন তথ্য-প্রযুক্তির উদ্ভাবন হচ্ছে, বাংলাদেশকেও সমান তালে এগিয়ে যেতে হবে। তাই তিনি চেয়েছিলেন বাংলাদেশকে প্রযুক্তিগত দিক থেকে উন্নত করতে। সেই অনুযায়ী বাংলাদেশ স্বাধীন করার পরপরই তিনি বহুবিধ পদক্ষেপ নিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত উন্নতি সাধনের লক্ষ্যে। ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বেতবুনিয়ায় উপগ্রহ ভূকেন্দ্র উদ্বোধনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল বাংলাদেশের যে বীজ বপন করেছিলেন, তার সুযোগ্যকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তা আজ বাস্তবায়ন হচ্ছে। এর স্থপতি হিসেবে রয়েছেন তারই দৌহিত্র প্রকৌশলী সজীব ওয়াজেদ জয়।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সফল উৎক্ষেপণ, ফোরজি মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহারসহ নানা কর্মযজ্ঞ এবং দেশের আইসিটি খাতে বাস্তবমুখী ও কার্যকরী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে করোনাভাইরাস মোকাবেলায়ও বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে প্রশংসিত হয়েছেন। এই করোনা মহামারির মধ্যেও দেশের জিডিপি অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে অন্যান্য দেশের তুলনায়। এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে।
তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতেও শিক্ষার্থীরা যেন বিনামূল্যে অনলাইন এডুকেশন রিসোর্স ব্যবহার করতে পারেন সে লক্ষ্যে টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড নামমাত্র মূল্যে দেশের পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ প্রদানের যে প্রকল্প গ্রহণ করেছে সেটা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। আমি আশা করি আমাদের এই প্রকৌশলীদের দ্বারা টেলিটক দেশের নাম্বার ওয়ান টেলিকমে উন্নীত হবে।
বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু তার স্বল্প শাসন আমলে প্রযুক্তি ও শিল্প বিকাশে অনেক অবদান রেখে গেছেন। তিনি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধনে অসংখ্য কাজ করে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে যদি বাংলাদেশ চলতে পারতো তাহলে আমার অনেক আগেই উন্নত বাংলাদেশ পেতাম। বর্তমানে বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা আশা করি প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বেই ২০৪১ সালের আগে আমরা উন্নত দেশে পদার্পণ করবো।
বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. নুরুজ্জামান বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশে আজ ডিজিটাল হয়েছে বলেই করোনা মহামারির মধ্যেও সকল কিছু চালু রয়েছে। দেশের অর্থনীতিও সচল রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এভাবে নিতে পারলে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে উঠবে খুব অচিরেই।
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)’র সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. শাহাদাৎ হোসেন (শীবলু) বলেন, টেলিটকের যত সাফ্যল্য আছে তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর নেতৃত্বে টেলিটকের এমডি ইঞ্জিনিয়ার মো. শাহাবুদ্দিনের তত্ত্বাবধায়নে মেধাবী প্রকৌশলীরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। নবীন ও প্রবীণদের সমন্বয়ে বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ টেলিটক শাখার নতুন নেতৃত্ব বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে কাজ করে যাবেন এই আশা রাখি।
টেলিটকের বাংলাদেশ লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. সাহাব উদ্দিন বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে প্রকৌশলীদের দুর্নীতি মুক্ত হতে হবে। কারণ প্রকৌশলীরাই ডিজিটাল বাংলাদেশ এগিয়ে নিয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতি মুক্ত দেশ গড়তে কাজ করে যাচ্ছেন। টেলিকম সেক্টরে টেলিটককে একটি মডেল হিসেব গড়ে তুলতে হবে। সরকারের চাহিদা অনুযায়ী ২০২৩ সালের মধ্যে ৫-জি চালু করার লক্ষ্য রাখা হয়েছে।