নিজস্ব প্রতিবেদক: কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রথম টিউব স্থাপন কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর এখন প্রস্তুতি চলছে দ্বিতীয় টিউব প্রতিস্থাপনের কাজ। ইতোমধ্যে এই টানেলে ৫৯ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার হারুনুর রশিদ চৌধুরী সোমবার জনকণ্ঠকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আগামী নবেম্বরের শেষ অথবা ডিসেম্বরের প্রথম নাগাদ দ্বিতীয় টিউব প্রতিস্থাপনের কাজ শুরু করার প্রস্তুতি চলছে। উল্লেখ্য, চার লেন বিশিষ্ট দুটি টিউব নিয়ে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারা পয়েন্ট পর্যন্ত এই টানেল নির্মিত হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণের কর্মযজ্ঞ এটিই প্রথম।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই টানেলে মোট দৈর্ঘ্য হবে ৯ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার। নদীর তলদেশ দিয়ে যে প্রধান অংশটি হবে তার দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। এছাড়া এই প্রকল্পের আওতায় ৭৪০ মিটার সেতুর পাশে ৪ দশমিক ৮৯ কিলোমিটার সড়কও নির্মিত হচ্ছে।
চীনের সাংহাই শহরের আদলে এই টানেল চালু হওয়ার পর বন্দর নগরী চট্টগ্রাম হবে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’। চট্টগ্রামে পতেঙ্গা পয়েন্ট ও কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে আনোয়ারা পয়েন্ট যুক্ত হবে এই টানেলের মাধ্যমে। সরকারের এটি একটি মেগাপ্রকল্প। প্রকল্পের একটি লেনের বোরিংয়ের সঙ্গে রিং প্রতিস্থাপনের কাজ শেষ হচ্ছে গত ২ আগস্ট। ফলে ইতোমধ্যে টানেল পূর্ব ও পশ্চিমকে সংযুক্ত হয়ে গেছে। প্রকল্প পরিচালক জানিয়েছেন, তিনি নিজে আনোয়ারা পয়েন্ট দিয়ে নির্মিত টিউব হয়ে হেঁটে পতেঙ্গা পয়েন্টে এসেছেন।
প্রকল্প পরিচালক আরও জানিয়েছেন, বিশ^জুড়ে করোনা পরিস্থিতির মাঝেও বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণের কাজ একদিনের জন্যও থামেনি। এ প্রকল্পের সঙ্গে যারা জড়িত রয়েছে টিনের একঝাঁক বিশেষজ্ঞ। এছাড়া সিঙ্গাপুর, ইতালি, রাশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার কিছু বিশেষজ্ঞও কাজ করছেন এই প্রকল্পে। সূত্রমতে, এই প্রকল্পে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ২১৯ চীনা নাগরিক কাজ করছেন। এছাড়া দেশীয় কর্মকর্তা ও শ্রমিক রয়েছে প্রায় সাড়ে ৫শ’।
সবকিছু ঠিকঠাক মতো এগিয়ে গেলেও আগামী ২০২২ সাল নাগাদ এ টানেল নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এ টানেল নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপরে গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেলের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন। এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। চীনের এক্সিম ব্যাংক এই প্রকল্পের জন্য প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে। অবশিষ্ট টাকা দেবে সরকার। এই টানেলের জন্য সেগমেন্ট তৈরি হচ্ছে চীনের জিয়াংসু প্রদেশের জিংজিয়াং শহরে।
উল্লেখ্য, টানেল বোরিং মেশিন সংক্ষেপে যাকে টিবিএম বলা হয়। এটি ৯৪ মিটার দীর্ঘ এবং ২২ হাজার টন ওজনের। এটির শেষ অংশ অর্থাৎ লেজ পর্যন্ত ইউটার্ন করাতে আগামী নবেম্বর নাগাদ সময় লেগে যেতে পারে। ফলে ওই মাসের শেষ অথবা ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে দ্বিতীয় টিউব প্রতিস্থাপনের কাজ শুরু করার আশা করছেন প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টরা।