খোলা বাজার অর্থনীতি মোকাবেলায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অর্থনীতিতে সরকারি, বেসরকারি ও সমবায় খাতকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। সেই দিকনির্দেশনা অনুসরণ করে সমবায়ের মাধ্যমে চাষাবাদ নিশ্চিত এবং উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করতে পারলে কৃষক লাভবান হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার বিকালে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সংবিধানের ১৩ অনুচ্ছেদে অর্থনীতি নীতিমালায় অর্থনীতি, সমবায় এবং বেসরকারি- এই তিনটি খাতকে সমান গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সমবায় পদ্ধতি আমাদের দেশে আছে এবং এখনো চলছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক ঐক্য বাকশাল গঠন করেছিলেন, এই উদ্দেশ্য নিয়ে। আমাদের দুর্ভাগ্য জাতির পিতাকে হত্যা করার পর এদিকে আর নজর দেয়া হয়নি। যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা সেদিকে যায়নি। একটি প্রকল্প আমরা নিয়েছি। যেমন আমার বাড়ি আমার খামার। এখানে আমরা সমবায় করে দিচ্ছি। তাদের অল্প পরিমাণে উৎপাদিত পণ্য সেটি সমবায়ের মাধ্যমে আমরা বাজারজাত করার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। জাতির পিতা সরকারি, বেসকারি, সমবায়- এই তিনটিতে গুরুত্ব দিয়েছেন। আমরা যদি সমবায়ের মাধ্যমে চাষ করতে পারি এবং বাজারজাত করতে পারি তাহলে আমাদের কৃষক লাভবান হবে।’
সমবায় আইন যুগোপযোগী করার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সমবায় আইনটা আসলেই খুব পুরনো আইন। এটি যুগ উপযোগী করা দরকার। যেহেতু আমাদের লোকসংখ্যা বেশি, জমি কম, উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমরা মনে করি, সমবায় কৃষকদের জন্য অধিক লাভভজনক হবে। এ বিষয়ে কিছু কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছি। কোনো কোনো এলাকায় এটি প্রযোজ্য হয়, অর্থাৎ আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা রাখব।’
ঢাকা-১৫ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম রহমতুল্লাহর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গত ২৮ নভেম্বর ২০১৯ জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি ইউনেস্কোর ২০৮তম সভায় নির্বাহী পরিষদের ৫৮ সদস্যের মধ্য থেকে ৬টি সদস্য রাষ্ট্রকে সহ-সভাপতি নির্বাচন করা হয়। গ্রুপ চার এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চল থেকে বাংলাদেশ ইউনেস্কোর সহ-সভাপতি পদে সর্বোসম্মতি ক্রমে নির্বাচিত হয়।’
‘মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ এবং সমৃদ্দির পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রধান চাবিকাঠি হলো শিক্ষা। সুদূরপ্রসারী শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার পেছনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান অপরিসীম। ১৯৭২ সালের সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি অংশে শিক্ষার কথা উল্লেখ রয়েছে। ১৯৭২ সালে ড. কুদরত-ই-খুদাকে সভাপতি করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় শিক্ষা কমিশন গঠন করেছিলেন। এই কমিশন শিক্ষা খাতে পর্যপ্ত বরাদ্দ, গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষার প্রসার, শিক্ষকের মর্যাদা বৃদ্ধি ও গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিয়েছিল।’
ইউনেস্কো জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে ইউনেস্কো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের ও আনন্দের।’
কুষ্টিয়া-২ আসনের হাসানুল হক ইনুর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাউলগানের কোনো দোষ নেই। কিন্তু বাউলগান যারা করেন, তারা যদি কোনো অপরাধে সম্পৃক্ত হয় তাহলে আইন তার আপন গতিতে চলবে। আইন ব্যবস্থা নেবে। এখানে গানের সম্পৃক্ততা নেই।’
প্রশ্নকারী সংসদ সদস্যকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাননীয় সংসদ সদস্য কি এই গ্যারান্টি দিতে পারবেন যে, যারা বাউলগান করেন তারা অপরাধের উর্ধ্বে, কোনো অপরাধ করেন না বা করেননি? যেহেতু গ্রেপ্তার করা হয়েছে, নিশ্চয় সে কোনো অপরাধের সঙ্গে সংযুক্ত বলেই, অপরাধ সংগঠিত হয়েছে বলেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে এক অনুষ্ঠানে গানের আগে দেয়া বক্তব্যে শরিয়ত সরকার বয়াতি মহানবী (সা.) ও ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করেছেন অভিযোগে এলাকায় বিক্ষোভ হয়। পরে স্থানীয় এক ব্যক্তি তার বিরুদ্ধে মামলা করেন। সেই মামলায় শরিয়ত সরকারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।