নিউজ ডেস্ক:
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বাস করতেন দেশকে এগিয়ে নিতে হলে এবং সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করতে হলে নারীর সমান অধিকার নিশ্চিত করা ছাড়া সম্ভব নয়। তাই নারীর সমান অধিকার, সমমর্যাদা, সাম্য ও স্বাধীনতাকে বঙ্গবন্ধু প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছিলেন। নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে তিনিই আইনি ভিত প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শিতার কারণেই দেশে নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন নিশ্চিত হয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর ১০ দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য ও জমকালো অনুষ্ঠানমালার সপ্তম দিনের অনুষ্ঠানে আলোচকরা এসব কথা বলেন। ‘মুজিব চিরন্তন’ অনুষ্ঠানমালার সপ্তম দিনের মূল থিম ছিল, ‘নারী মুক্তি, সাম্য ও স্বাধীনতা’।
মূল থিমের ওপর বক্তব্য দেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা এবং স্বাগত বক্তব্য দেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী। সম্মানিত অতিথি হিসাবে ভিডিও বার্তা দেন ইউনেস্কোর মহাপরিচালক অড্রে আজুলে। অনুষ্ঠানে জার্মানির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক ওয়াল্টার এবং ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের শুভেচ্ছা বার্তা পড়ে শোনান পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার সার্বিক পরিকল্পনা, গৃহীত কার্যক্রম ও বাস্তবায়নের সঙ্গে নারীর সমাধিকার, সাম্য ও ক্ষমতায়ন নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। সংবিধানে নারীর ক্ষমতায়নের শক্ত ভিত রচনা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তার সুগভীর প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার কারণে রাষ্ট্র ও গণজীবনে নারীর প্রতি বৈষম্যের কোনো সুযোগ নেই। বঙ্গবন্ধুর সুগভীর প্রজ্ঞা, রাজনৈতিক দর্শন ও দূরদৃষ্টির কারণে আজকের বাংলাদেশের নারীর অগ্রযাত্রাকে একটি অনন্য আসনে অধিষ্ঠিত করেছে।
ড. শিরীন শারমিন আরও বলেন, বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হলে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিকসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা একান্ত অপরিহার্য। পরিবার, সমাজ ও জাতীয় জীবনের কোনো ক্ষেত্রেই বঙ্গবন্ধু নারী-পুরুষের পৃথক কোনো জায়গা রাখেননি। নারীর প্রাপ্যতা স্বীকার, নারীর অবদানের মূল্যায়ন অনেক প্রসারিত মানসিকতার পরিচয় বহন করে।
বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠার পেছনে তার স্ত্রীর অবদানের কথা উল্লেখ করে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, বেগম মুজিবের পরামর্শ বঙ্গবন্ধু সবসময় গ্রহণ করতেন। ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে ভাষণদানকালে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমার জীবনে আমি দেখেছি গুলির সামনে এগিয়ে গেলেও আমার স্ত্রী আমাকে বাধা দেননি। আমি ১০-১২ বছর জেল খেটেছি। জীবনে কোনোদিন মুখ খুলে তিনি (বেগম মুজিব) প্রতিবাদ করেননি। যদি করতেন তাহলে হয়তো আমার জীবনে অনেক বাধা আসত। আমার সংগ্রামে তার দান যথেষ্ট রয়েছে। ইতিহাসে পুরুষের নাম লেখা হয়, নারীর নাম লেখা হয় না। তাই আপনাদের কাছে কিছু ব্যক্তিগত কথা বললাম।’
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীকে পেছনে রেখে দেশ এগিয়ে যেতে পারে না। তার দীক্ষা ও প্রেরণাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়নের সূচকে দৃশ্যমান অগ্রগতি সাধন করেছে। সেই অগ্রগতির অন্যতম অনুষঙ্গ নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ব্যাপকসংখ্যক নারী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। উপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার ও মুক্তির লড়াইয়ে বাংলার নারীর ভূমিকা তাই নজর কেড়েছে সারা পৃথিবীতে। বঙ্গবন্ধু নারীকে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করেছিলেন, নেতৃত্বের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন করেছিলেন। জাতির পিতার বিশ্বাস ও আদর্শের আলোকে তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়নকে বিস্তৃত করেছেন বহুধারায়। রাষ্ট্র ও সমাজের সব ক্ষেত্রে নারী এখন বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছেন।
অনুষ্ঠানে জার্মানির প্রেসিডেন্টের শুভেচ্ছা বার্তা পড়ে শোনান পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন। শুভেচ্ছা বার্তায় বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে অভিনন্দন জানিয়ে জার্মানির প্রেসিডেন্ট বলেন, জার্মানি ও বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রয়েছে। দুদেশ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন সেক্টরে সহযোগী হিসাবে কাজ করছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিকভাবে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন করেছে।
বিশেষ করে উদ্ভাবনী উন্নয়ন পরিকল্পনার মাধ্যমে সফলভাবে দারিদ্র্য দূরীকরণ করেছে। বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতির প্রশংসা করেন তিনি। বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ায় তিনি বাংলাদেশের মানবিক ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসাও করেন।
ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের শুভেচ্ছা বার্তাও পড়ে শোনান পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন। শুভেচ্ছা বার্তায় ব্রিটেনের রানী বাংলাদেশের জনগণকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ব্রিটেনের অংশীদারিত্বের ভিত্তি পারস্পরিক বন্ধুত্ব ও আবেগের ওপর রচিত এবং সেটা ৫০ বছর আগে যেমন ছিল এখনও তাই।
ভিডিও বার্তায় ইউনেস্কোর মহাপরিচালক অড্রে আজুলে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও ইউনেস্কোর ঐতিহাসিক সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন। এ সম্পর্ক ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এ সময় বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সারা জীবন মানুষের অধিকার এবং স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছেন।