সোমবার , ডিসেম্বর ২৩ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / বঙ্গবন্ধুকে জনবিচ্ছিন্ন করতে না পেরেই ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ড

বঙ্গবন্ধুকে জনবিচ্ছিন্ন করতে না পেরেই ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ড

নিউজ ডেস্ক:
বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তা এবং জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট করতে না পেরে তাকে খুন করা হয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন তারা চেষ্টা করেছিল বঙ্গবন্ধুকে জনগণের কাছ থেকে সরাতে, কিন্তু পারেনি। তাই তারা এই ধরনের হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর জিয়াউর রহমান যেমন খুনিদের পুরস্কৃত করেছিলেন, তার স্ত্রী খালেদা জিয়াও ক্ষমতায় এসে একই ঘটনা ঘটিয়েছেন।

বঙ্গবন্ধুর ৪৫তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রোববার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এই সভায় প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন। এতে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে ‘মুক্তির মহানায়ক’ শীর্ষক ভার্চুয়াল চিত্রকর্ম ও আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

আজ বিশ্বব্যাপী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নাম উজ্জ্বল উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে খুনিরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনাকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। যে আদর্শ ও লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল সেই আদর্শ ও লক্ষ্যকে ধ্বংস করাই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। মুষ্টিমেয় কয়েকজন খুনি, বেইমান বা মুনাফেক ছাড়া অগণিত জনগণ জাতির পিতার জন্য এখনো কাঁদে। তারা জাতির পিতার নাম মুছে ফেলার জন্য ২১ বছর চেষ্টা করেছে। কিন্তু সেই নাম মুছতে পারেনি।

তিনি বলেন, জিয়া যেমন জাতির পিতা হত্যার সঙ্গে জড়িত, জাতীয় চার নেতার হত্যার সঙ্গে জড়িত, একের পর এক কু্য করে সেনাসদস্যদের হত্যা করেছে, মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের হত্যা করেছে, খালেদা জিয়াও ক্ষমতায় এসে ঠিক একই ঘটনা ঘটিয়েছে। জিয়াউর রহমান যেমন আবদুল আলিম, মাওলানা মান্নান, শাহ আজিজকে মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী এবং উপদেষ্টা বানিয়েছিল, একইভাবে আমরা দেখেছি খালেদা জিয়া সেই নিজামী থেকে শুরু করে যারা যারা একেবারে সরাসরি বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের মন্ত্রী বানিয়েছিল। খুনি রশীদ এবং হুদা- তাদের ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রম্নয়ারি নির্বাচনে ভোট চুরি করে পার্লামেন্টে এনে বিরোধী দলের নেতার আসনে বসায়।

শেখ হাসিনা বলেন, যিনি আমাদের স্বাধীনতা এনে দিলেন, মুক্তি এনে দিলেন, আত্মপরিচয়ের সুযোগ দিলেন, একটা জাতি হিসেবে আত্মমর্যাদা এনে দিলেন, তাকেই হত্যা করা হয়েছিল এ দেশের মাটিতে। স্বাধীনতার চার বছরের মধ্যে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর একদল কর্মকর্তা ও সৈনিকের হাতে সপরিবারে জীবন দিতে হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তার পরিবারের ছয় বছরের শিশু থেকে শুরু করে অন্তঃসত্ত্বা নারীও সেদিন ঘাতকের গুলি থেকে রেহাই পায়নি।

বিবিসিকে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর খুনি কর্নেল ফারুক ও কর্নেল রশীদের সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গ ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা বলেছিল যে দীর্ঘদিন তারা চেষ্টা করেছিল বঙ্গবন্ধুকে জনগণের কাছ থেকে সরাতে। কিন্তু জনগণের মন থেকে মুছতে পারেনি। তাই এই ধরনের হত্যাকান্ড তারা ঘটিয়েছে। এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জিয়াউর রহমান জড়িত এটা কর্নেল ফারুক, রশীদ তারা নিজেরাই বলেছে। জিয়া সবসময় তাদের সঙ্গে ছিল। খন্দকার মোশতাক অবৈধভাবে যখন ক্ষমতা দখল করল, নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিল এই খুনিদের সঙ্গে নিয়েই। এই খুনিরাই অস্ত্র হাতে তার পাশে, অর্থাৎ খুনি রশীদ, ফারুক, ডালিমসহ এই গং-তারাই তাদের সঙ্গে ছিল। জিয়াউর রহমানকে তখন সেনাপ্রধান করা হলো। তাকে সেনাপ্রধান করে মোশতাক এটাই প্রমাণ করে দিল যে তারা একই সঙ্গে ছিল। একই সঙ্গে চক্রান্তে তারা সম্পৃক্ত ছিল। কিন্তু মোশতাক বেশি দিন ক্ষমতায় থাকতে পারে নাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে, সিরাজউদ্দৌলার সঙ্গে বেইমানি করেছিল মীরজাফর। ব্রিটিশ বেনিয়ার দল তাকে ব্যবহার করেছিল। সেও কিন্তু তিন মাস ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। দুই মাসের কিছু সময় পরে তাকে বিদায় নিতে হয়েছিল। ঠিক মোশতাকও তাই। যাদের প্ররোচনায় সে বেইমানিটা, মুনাফেকিটা করেছিল, জাতির পিতার হত্যাকান্ডে মদদ দিয়েছিল, তারা কিন্তু তাকে ক্ষমতায় রাখে নাই। ক্ষমতায়.. আসল যিনি নায়ক, খলনায়ক, সেই চলে আসল সামনে। সে হলো জিয়াউর রহমান। খন্দকার মোশতাকের পর জিয়াউর রহমান একাধারে রাষ্ট্রপতি এবং সেনাপ্রধান হন। এ থেকে কী প্রমাণিত হয়?

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সেই সময় প্রয়োজন ছিল এদেশের সকল মানুষের একাত্ম হয়ে বঙ্গবন্ধুর পাশে দাঁড়ানো এবং সহযোগিতা করা। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে তাকে হত্যা করার প্রক্রিয়াটা শুরু হয়। আমাদের দলের অভ্যন্তরে যেমন নানা ধরনের খেলা শুরু হয়। কিছু লোক মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ও দালালি করতে সচেষ্ট ছিল, পাশাপাশি কিছু লোক নানাভাবে সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠে। যারা সেই সময় বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি পদক্ষেপ গ্রহণের পর পর সমালোচনা করেছে বা লিখেছে। তাদের লেখা এবং কার্যকলাপের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে সারা বাংলাদেশে অপবাদ ছড়ানো হয়েছিল। উদ্দেশ্যটাই ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যে জনপ্রিয়তা সারা বাংলাদেশের মানুষের কাছে, যে গ্রহণযোগ্যতা, সেটা নস্যাৎ করা। সেটা যখন একান্তভাবে তারা পারেনি, তারপরই কিন্তু তারা এই হত্যার পথ বেছে নেয়।

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করেছে বাঙালিরা, এটা তারা মানতে পারেনি। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা পাকিস্তানের পাশে ছিল, তারাও বাংলাদেশের অভু্যদয় বা বাংলাদেশের বিজয়কে মানতে পারেনি। কাজেই ষড়যন্ত্র চলছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, যে দেশের ভেতরেই অনেকে বোধহয় সেটা বুঝতে পারেননি।

প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের তখনকার প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং প্রতিবেশী দেশটির জনগণ বাংলাদেশের পাশে থাকায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, তিনি (ইন্দিরা গান্ধী) বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য সারা বিশ্বে যেভাবে প্রচার করেছিলেন এবং আমাদের বন্ধুপ্রতিম যেসব দেশ আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন দিয়েছিল, তারাও সেই সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মুক্তি চায় এমনকি যারা আমাদের বৈরিতা করেছিল, সেসব দেশের মানুষও কিন্তু আমাদের এই মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন দেয় এবং বঙ্গবন্ধুর মুক্তি চায়। বিশ্বব্যাপী এই যে একটা জনমত সৃষ্টি হয়, সবকিছু মিলিয়ে কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে মুক্তি দেওয়া হয় এবং তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন।

আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।

সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এ সময় বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত একটি কবিতা আবৃত্তি করেন। শোকাবহ যন্ত্রসংগীত দিয়ে শুরু হওয়া এ সভা শ্রদ্ধা সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হয়।

সূত্র: চাঁপাইনবাবগঞ্জ

আরও দেখুন

পেঁয়াজের চারা পুড়ে শেষ-কৃষকের মাথায় হাত! জমিতে এখন শুধুই ঘাস!

নিজস্ব প্রতিবেদক নলডাঙ্গা,,,,,,,,,,,,,,,,,জমিতে নষ্ট হওয়া পেঁয়াজের চারা দেখে নিজেদের ধরে রাখতে পারেননি জমি লিজ নিয়ে …