নিজস্ব প্রতিবেদক:
করোনা ভাইরাসের টিকা আনার সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার ৩ কোটি ডোজ করোনা ভ্যাকসিন আগামী জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে দেশে আসছে। ভ্যাকসিন দেশে আসার পর এর মজুত, সরবরাহ এবং সঠিকভাবে বিতরণের সার্বিক প্রস্তুতিও ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, অক্সফোর্ডের টিকা মাইনাস ২ ডিগ্রি থেকে মাইনাস ৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় রাখতে হবে। অর্থাৎ, ইপিআই টিকার মতো একই তাপমাত্রায় রাখা যাবে।
প্রতিটি জেলায় টিকা রাখার জন্য পর্যাপ্ত ফ্রিজ আগে থেকেই আছে। নতুন করে আরো কিছু ফ্রিজ কেনা হয়েছে। পাশাপাশি যারা টিকা দেবেন, তাদের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। প্রথম দফায় টিকা আনা হচ্ছে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোম্পানি এই টিকা তৈরি করছে, যা ভারতের প্রতিষ্ঠানটিতেও উত্পাদন হচ্ছে। বেক্সিমকোর মাধ্যমে এই টিকার ৩ কোটি ডোজ কিনতে সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি করেছে সরকার। মহামারি মোকাবিলায় যারা সামনে থেকে কাজ করছেন, শুরুতে তাদের এই টিকা দেওয়া হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, যারা টিকা পাবেন তাদের ডাটাবেজ তৈরি করা হচ্ছে। একাধিক মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে গঠিত এই ডাটাবেজে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর থাকবে। ইপিআই টিকার মতো একই তাপমাত্রায় করোনার টিকা রাখা যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর সাড়ে ৩ কোটি ডোজ টিকা দেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে আমাদের। ফলে প্রতি মাসে যে ৫০ লাখ করে টিকা আসবে, সেটার ব্যবস্থাপনা খুব একটা কঠিন হবে না। এমনকি বেশি এলেও কোনো সমস্যা নেই। জানুুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে করোনার ভ্যাকসিন দেশে আসছে বলে তিনি জানান।
সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে, তাতে পর্যায়ক্রমে ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে। ভ্যাকসিন কেনা ও বিতরণ মিলে খরচ হবে ১ হাজার ৫৮৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। প্রথম ডোজের ২৮ দিন পর দ্বিতীয় ডোজের হিসাবে প্রথম চালানের ৫০ লাখ ডোজ দেওয়া যাবে ২৫ লাখ মানুষকে। ভ্যাকসিন-বিষয়ক এই কর্মসূচি পরিচালিত হবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মা, শিশু ও কিশোর স্বাস্থ্য কর্মসূচির আওতায়। এই কর্মসূচির পরিচালক ডা. শামসুল হক বলেন, ‘আমরা করোনার ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য ১০ হাজার ৪০০ টিম তৈরি করেছি। প্রতিটি টিমে ছয় জন করে থাকবেন। এর মধ্যে দুই জন স্বাস্থ্য সহকারী এবং বাকি চার জন স্বেচ্ছাসেবক। প্রতিটি টিম মাসে ১২ দিন করে টানা ছয় মাস দায়িত্ব পালন করবে। টিকা কর্মসূচিতে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা রয়েছে।’ ডা. শামসুল হক বলেন, করোনার ভ্যাকসিন প্রথমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী (সশস্ত্র বাহিনী, র্যাব, পুলিশ), ডাক্তার, সাংবাদিকেরা পাবেন। দ্বিতীয় সারিতে বয়স্করা টিকা পাবেন, যাদের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা রয়েছে। এরপর ক্যানসার, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্তরা পাবেন। পরবর্তী সময়ে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। সবশেষে সাধারণ মানুষ টিকাপ্রাপ্তির আওতায় আসবে।
করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, সাধারণ টিকা যে তাপমাত্রায় রাখা হয়, সেই একই তাপমাত্রায় করোনার ভ্যাকসিন রাখা হবে। যথাযথভাবে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সম্মুখযোদ্ধাদের আগে ভ্যাকসিন দিতে হবে। তবে পর্যায়ক্রমে সব নাগরিককে টিকার আওতায় আনতে হবে। বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল বলেন, যে করোনা ভ্যাকসিন এদেশে আসছে, সেটি ইপিআই টিকার মতো একই তাপমাত্রায় রাখা যাবে। এটা খুবই ভালো খবর। সুষ্ঠুভাবে টিকা প্রদানের দাবি জানান তিনি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়াও বলেন, করোনার ভ্যাকসিন ইপিআই টিকার মতো একই তাপমাত্রায় রাখা যাবে এটা আমাদের জন্য সুখবর। এর খুব প্রয়োজন ছিল। কারণ টিকা রক্ষণাবেক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুষ্ঠুভাবে ভ্যাকসিন প্রদানের দাবি জানান তিনি।