নিউজ ডেস্ক:
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য স্বাধীন স্বদেশভূমি এবং তাদের একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের অধিকারকে উপলব্ধি করে বাংলাদেশের অদম্য অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
বুধবার (১৬ জুন) কাজাখস্তানের রাজধানী নুর সুলতানে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনের সমাপ্তি অধিবেশনে এক ভার্চুয়াল ভাষণে তিনি এ অঙ্গীকারের কথা জানান।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর বারবার হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশ শোকাহত এবং নিহতদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছে।’
তিনি বলেন, ‘যখন বিশ্ব এক ভয়াবহ মহামারির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, এর ফলে জীবন ও জীবিকার অভূতপূর্ব ক্ষতি হয়েছে, এ অবস্থার মধ্যে ফিলিস্তিনের ভাই-বোনেরা মানবসৃষ্ট দুর্যোগের মুখোমুখি হয়ে আমাদের কাছ থেকে সমন্বিত প্রচেষ্টা এবং ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ আশা করছে।’
এছাড়া রাষ্ট্রপতি রোহিঙ্গা ইস্যুকে বাংলাদেশ, ওআইসি ও বিশ্বের জন্য নিরন্তর উদ্বেগের বিষয় বলে অভিহিত করেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আপনারা সবাই জানেন যে, সিএফএম সম্পর্কিত প্রস্তাব অনুযায়ী ওআইসি গণহত্যা কনভেনশনের অধীনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে মিয়ানমার সরকারকে ২০১৯ সালের আন্তর্জাতিক আদালতে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়, যার মাধ্যমে আদালত সর্বসম্মতভাবে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অস্থায়ী ব্যবস্থা জারি করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এর মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, গাম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট এবং ওআইসি মহাসচিব ২০২০ সালের জুলাই মাসে একটি যৌথ চিঠি জারি করে সব সদস্য রাষ্ট্রকে এই মামলার দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়ায় আইনি ব্যয় বহনের জন্য স্বেচ্ছাসেবক তহবিলে অবদান রাখার আহ্বান জানান।’
রোহিঙ্গা সম্প্রদায় যাতে নিরাপত্তা ও মর্যাদার সাথে তাদের স্বদেশে ফিরে যেতে পারে সে লক্ষ্যে পদক্ষেপ নিতে তিনি ওআইসির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, ‘বাংলাদেশ বৈজ্ঞানিক গবেষণা, টেকসই ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি, খাদ্য ও কৃষি, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, মানবসম্পদ উন্নয়ন, ব্লু ইকোনমি এবং পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের ওপর বিশেষ জোর দিচ্ছে।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বাংলাদেশ ইতিমধ্যে রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে অভিজাত পারমাণবিক ক্লাবে প্রবেশ করেছে।’
প্রযুক্তি পরিবর্তনের অনন্য উদ্ভাবন ও অভিযোজন যোগ্যতার মাধ্যমে বাংলাদেশের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের এক গর্বিত ঐতিহ্য রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লক্ষ্য প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ আমাদের এই পথে বলিষ্ঠভাবে এগিয়ে নিচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বিকাশমান ওষুধ শিল্প এবং অলটারনেটিভ মেডিসিন বাংলাদেশ স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে, বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এছাড়া বাংলাদেশ নিউক্লিয়ার মেডিসিন, ন্যানোপ্রযুক্তি, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ, আধুনিক জৈব প্রযুক্তি, জিন ব্যাংকিং এবং ব্লু ইকোনমি সম্পদ খাতকে উৎসাহিত করেছে। ওআইসি সদস্য দেশের বিজ্ঞানী এবং গবেষকরা এ ক্ষেত্রগুলোতেও তাদের দক্ষতা এবং জ্ঞান বিনিময় করতে পারেন।’
তিনি দ্বিপাক্ষিক তথা সম্মিলিত ভিত্তিতে নির্দিষ্ট প্রকল্পগুলোতে ওআইসি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে অংশীদারিত্ব, অভিন্ন প্লাটফর্ম গঠন ও কৌশল প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেকের একই রকম শক্তি ও সম্ভাবনা রয়েছে এবং আমরা একে অপরের পরিপূরক হতে পারি। আমরা দারিদ্র্য বিমোচনে এবং টেকসই উন্নয়নে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে গেম চেঞ্জার হিসেবে ব্যবহার করতে পারি।’
রাষ্ট্রপতি ওআইসির প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তায় ওআইসি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে গবেষণা ও উন্নয়ন সহযোগিতা, উচ্চপ্রযুক্তির শিল্পপ্রতিষ্ঠা এবং পর্যায়ক্রমে গুচ্ছ প্রকল্প বাস্তবায়ন, সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বিজ্ঞানী ও উদ্যোক্তাদের নেটওয়ার্ক এবং সদস্য দেশগুলোর মধ্যে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও প্রযুক্তি হস্তান্তরসহ কিছু যৌথ কর্ম পরিকল্পনা চালু করার প্রস্তাব করেন।
মুসলমানরা একসময় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে নেতৃত্ব দিয়েছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ, বিজ্ঞান গবেষণায় বিনিয়োগ এবং নতুন পথের অনুসন্ধান, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের আগমনে জীবনের সব ক্ষেত্রে উদ্ভাবনে সমন্বিত ও নিবেদিত গবেষণা ও উন্নয়নে জড়িত থাকার ওপর জোর দেন।
রাষ্ট্রপতি কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে সম্মেলন অনুষ্ঠানের জন্য নিরলস প্রচেষ্টা এবং সংগঠনে তাদের মূল্যবান অবদান রাখার জন্য এই সম্মেলনের আয়োজক কাজাখস্তান সরকার এবং ওআইসি মহাসচিবকে ধন্যবাদ জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘১৯৭৪ সাল লাহোরে অনুষ্ঠিত ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অংশগ্রহণের পর থেকে বাংলাদেশ ওআইসির সঙ্গে চমৎকার সম্পর্ক উপভোগ করছে।’
কাজাখ প্রেসিডেন্ট কাসিম জোমরাট তোকায়েভ, ওআইসি মহাসচিব ড. ইউসুফ আল ওথাইমিন এবং অনেকগুলো দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা অন্যান্যের মধ্যে সম্মেলনে যোগ দেন।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান দ্বিতীয় ওআইসি বিজ্ঞান সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে নতুন সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছেন।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আনোয়ার হোসেন, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এসএম সালাহ উদ্দিন ইসলাম, প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদিন এবং সচিব (সংযুক্ত) ওয়াহিদুল ইসলাম এ সময় বঙ্গভবনে উপস্থিত ছিলেন।