নিজস্ব প্রতিবেদক:
ফসল বরণের মহাযজ্ঞ ॥ দুর্যোগের ধকল থাকলেও ফলন ভাল। এক জমি থেকে অন্য জমি, মাঠের পর মাঠ, যতদূর চোখ যায় যেন সোনালি ধানের ঝিলিক। রোদের আলোয় পাকা-আধাপাকা ধান সোনালি রঙে চিক চিক করে। কোথাও ধান কাটা হচ্ছে কোথাও মাড়াই চলছে পুরোদমে। শীতের হালকা আমেজে উৎসবমুখর পরিবেশে মাঠে মাঠে এখন আমনের পাকা ধান কাটার ধুম লেগেছে। মাঠের সোনালি ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক। আর কৃষক পরিবারগুলোতে চলছে ফসল বরণের প্রস্তুতি। মাড়াই, ঝারাই, সিদ্ধ শুকানো নানা প্রস্তুতি নিচ্ছে কৃষক পরিবারের সদস্যরা। আর আমনের ফলন যুক্ত হলে দেশের খাদ্যভাণ্ডারও আরও সমৃদ্ধ হবে। গত কয়েকদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে উৎসবমুখর পরিবেশে ধান কাটার দৃশ্য দেখা গেছে। ধান কাটতে কাটকে কৃষকরা আনমনে বিভিন্ন গানও গাইছেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধান কাটার এক মহাযজ্ঞ। মাঠের ফলন দেখে কৃষকরাও খুশি, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন দুর্যোগের ধকল থাকলেও প্রত্যাশা করছেন ভাল ফলন হয়েছে।কৃষি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কার্তিক মাসের শুরু থেকেই ধান কাটা অল্প অল্প করে শুরু হয় ১৫ তারিখের পর থেকে পুরোদমে ধান কাটা চলে। এ কারণে পহেলা অগ্রহায়ণের নবান্ন এখন আর আগের মতো পালন হয় না। তবে সারাদেশে বিভিন্ন স্থানের জাত অনুযায়ী শুরু হওয়া ধান কাটা আগামী ডিসেম্বর পুরোটাই চলবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে পহেলা অগ্রহায়ণ রবিবার পর্যন্ত ১৩ শতাংশ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। যা এই নবেম্বরের মধ্যে ৮০ শতাংশ শেষ হবে।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আসাদুল্লাহ জনকণ্ঠকে বলেন, বিভিন্ন জাতের কারণে কার্তিক মাস থেকে ধান কাটা শুরু হয় ফলে এখন আর সেভাবে নবান্ন উৎসব নেই। আমাদের ধান কাটা পুরোদমে শুরু হয়েছে, নবেম্বরেই বেশিরভাগ কাটা শেষ হবে। যা লেট ভ্যারাইটি থাকবে তা ডিসেম্বর পর্যন্ত যাবে। মোঃ আসাদুল্লাহ আরও বলেন, এ বছর আমনের ফলন এখন পর্যন্ত আমাদের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যেই রয়েছে, ফলন ভাল। কিছু কিছু জায়গায় চিটা হওয়ার তথ্য পেয়েছি তবে গড় ফলন ভাল বলেন তিনি। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক শাজাহান কবীর জনকণ্ঠকে বলেন, আমাদের আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে আরও প্রায় এক মাস আগে থেকে। কার্তিক মাসের ১৫ তারিখের পর থেকে পুরোদমেই ধান কাটা শুরু হয় আর সে কারণে নবান্ন সেভাবে হয় না। আমরা দেখেছি উত্তরের জেলাগুলোতে প্রায় বেশিরভাগ ধান কাটা শেষ। অনেক জেলায় শুরু হচ্ছে। তবে ধান কাটার একটা ধুম লেগেছে।এই বছর আমনের বাড়ানো হয়েছে জমি ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা। কৃষি সম্প্রসারণের সরেজমিন উইং থেকে জানা গেছে, চলতি ২০২০-২১ মৌসুমে বোনা ও রোপা আমন মিলিয়ে মোট ৫৯ লাখ ১ হাজার ৮১৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হলেও চাষ হয়েছে আরও বেশি জমিতে। অর্থাৎ সরকার নির্ধারিত জমির চেয়েও বেশি জমিতে আমন ধান আবাদ হয়েছে। অর্জিত হয়েছে ৫৯ লাখ ৩ হাজার ৪০১ হেক্টর অর্থাৎ ১৫৮৬ হেক্টর জমিতে বেশি চাষ হয়েছে। এ বছর চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ কোটি ৫৬ লাখ ৪ হাজার ৩৯৮ মেট্রিক টন। এবার আমনের ফলন ধরা হয়েছে বোনা আমনে হেক্টর প্রতি ১.২ টন আর রোপা আমনে হেক্টর প্রতি ২.৭৩ টন। এছড়াও গর ফলন ধরা হয়েছে ২.৬৪ টন। ফলে ১ কোটি ৫৬ লাখ ৪ হাজার ৩৯৮ মেট্রিক টন চাল আমন থেকে আসার কথা রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ের দুর্যোগে কিছুটা ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে।