- বিএনপি নেতাদের মামলায় হঠাৎ গতি
- টুকু ও আমানকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ
- শিমুলের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা
বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো নিষ্পত্তিতে হঠাৎ গতিসঞ্চার হয়েছে। ঢাকার বিভিন্ন আদালতে বর্তমানে বেশ কিছু মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে দ্রুতগতিতে। শীর্ষস্থানীয় অনেক নেতাকে এখন প্রায় প্রতিটি কার্যদিবসে আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে। দিবসের প্রথমভাগ নেতাদের চলে যাচ্ছে আদালতের বারান্দায়। গত তিন দিনে নেতাদের তিনটি মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়েছে। কোনো কোনোটি সাক্ষ্য গ্রহণের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত থাকা ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, নাশকতার অভিযোগে করা মামলাগুলোও সচলের উদ্যোগ নিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। বিএনপির কেন্দ্রীয় ৩৫ নেতার বিরুদ্ধেই ১ হাজার ৩৬২টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
গতকাল রবিবার রাজধানীর পল্টন মডেল থানার নাশকতা ও বিস্ফোরক আইনের একটি মামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ ৮ নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। এর ফলে এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলো। এছাড়া গতকাল আট বছর আগে রাজধানীর বাড্ডা থানা এলাকায় নাশকতার অভিযোগে করা মামলায় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ও বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসসহ ৬০ নেতার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু করেছে আদালত। এই মামলায় শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস অসুস্থতাজনিত কারণে আদালতে উপস্থিতির সময় প্রার্থনা করলে তা নাকচ করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। এর আগে গত ১ সেপ্টেম্বর পুলিশ কনস্টেবল শামীম হত্যা মামলায় রুহুল কবির রিজভী ও যুগ্মমহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেলসহ ৭ নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার কাজ শুরু করে আদালত। এই তিন মামলায় মোট ৭৪ নেতার বিচার কার্যক্রম শুরু করলেন আদালত।
এদিকে একটি দুর্নীতি মামলায় তিন বছরের কারাদণ্ড ঘোষণার পর উচ্চ আদালতের নির্দেশে গতকাল আত্মসমর্পণ করার পর বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমানের স্ত্রী সাবেরা আমানকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় আদালত। দুদকের দুর্নীতির মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমানকে আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। দুর্নীতির মামলায় টুকুর ৯ বছরের কারাদণ্ড এবং আমান উল্লাহ আমানের ১৩ বছর ও সাবেরা আমানের তিন বছর কারাদণ্ড বহাল রাখার আদেশ দেয় হাইকোর্ট।
বিএনপির আইনজীবীদের অভিযোগ, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের নেতাদের অযোগ্য করতে এবং অন্য নেতা-কর্মীদের মাঠছাড়া করতে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কারণ রায়ে দুই বছর সাজা হলে কেউ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। তবে রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, মামলা তার নিজস্ব গতিতে চলছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচনের আগে সরকারের উদ্দেশ্য বিএনপিকে মাঠছাড়া করা। প্রার্থী যদি না থাকে, তখন নির্বাচন কী হবে? এখন সেই লক্ষ্যেই তারা নেমেছে। দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে পুরোনো মামলাগুলো আবার সচল করা হচ্ছে। মামলাগুলো দ্রুত শেষ করার পরিকল্পনা নিয়েছে তারা।
ময়লার ট্রাকে আগুন দেওয়ার মামলায় ফখরুল-রিজভীর বিচার শুরু:রাজধানীর পল্টন মডেল থানার নাশকতা ও বিস্ফোরক আইনের মামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। এর ফলে এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলো। গতকাল রোববার ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালত এ অভিযোগ গঠন করেন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন: বিএনপির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, বিএনপি নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন বাবু, কাজী রেজাউল হক বাবু, খন্দকার এনামুল হক এনাম এবং জামায়াত ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম মাসুদ। এর গতকাল আগে মির্জা ফখরুলসহ অন্য আসামিরা আদালতে উপস্থিত হন। তাদের উপস্থিতিতে অভিযোগ গঠন শুনানি শুরু হয়। শুনানিতে আসামিপক্ষ তাদের নির্দোষ দাবি করে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি চেয়ে প্রার্থনা করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ গঠনের পক্ষে শুনানি করে। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে অভিযোগ গঠন করেন। একইসাথে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ২০ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন আদালত। মামলার এজাহার অভিযোগ করে বলা হয়, ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টার দিকে পল্টনের বিজয়নগর থেকে মাতুয়াইল যাওয়ার পথে ফখরুল ও রিজভীর নেতৃত্বে একদল বিএনপি নেতা-কর্মী আবর্জনা বোঝাই একটি ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেন। এ ঘটনায় ফখরুল, রিজভীসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে পল্টন মডেল থানায় মামলা করা হয়। তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ১৩ অক্টোবর ফখরুল, রিজভীসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
পুলিশ কনস্টেবল হত্যা মামলায় ৭ নেতার বিচার শুরু:গত বৃহস্পতিবার ঢাকার অতিরিক্ত চতুর্থ মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক বিলকিস আক্তার পুলিশ কনস্টেবল শামীম হত্যা মামলায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও যুগ্মমহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেলসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু করেন। অপর আসামিরা হলেন বিএনপির আবদুস সাত্তার, শাহ আলম, আনোয়ার হোসেন টিপু ও আলফাস ওরফে আব্বাস।
শামা ওবায়েদ ও শিমুলসহ ৬০ জনের বিচার শুরু:আট বছর আগে রাজধানীর বাড্ডা থানা এলাকায় নাশকতার অভিযোগে করা মামলায় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ও বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসসহ ৬০ নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। গতকাল ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুল হক এ অভিযোগ গঠন করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বিষয়টি জানিয়েছেন। ২০১৫ সালের মার্চ মাসে রাজধানীর বাড্ডা থানায় এলাকায় নাশকতার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে এ মামলা করে। তদন্ত শেষে শামা ওবায়েদ ও শামসুর রহমান শিমুলসহ ৬০ জনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ।
১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে টুকু ও আমানকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ:বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আমান উল্লাহ আমানকে আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে। গত বুধবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে খবর নিয়ে এই তথ্য জানা গেছে। দুর্নীতির মামলায় টুকুর ৯ বছরের কারাদণ্ড এবং আমান উল্লাহ আমানের ১৩ বছর ও সাবেরা আমানের তিন বছর কারাদণ্ড বহাল থাকার আদেশ হাইকোর্ট থেকে বিচারিক আদালতে পৌঁছায় ২৭ আগস্ট। হাইকোর্টের নির্দেশে বলা হয়েছিল বিচারিক আদালতে আদেশ পৌঁছানোর ১৫ দিনের মধ্যে তাদের আত্মসমর্পণ করতে হবে। সেই হিসাবে ১১ সেপ্টেম্বর আত্মসমর্পণের সর্বশেষ সময়। গতকাল আমানের স্ত্রী আত্মসমার্পন করলে কারাগারে পাঠায় আদালত। টুকুর মামলার আদেশ ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এ ২৭ আগস্ট পৌঁছানোর পর ওই আদালতের বিচারক ইকবাল হোসেন আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে টুকুকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। আদালতের বেঞ্চ সহকারী সোহানুর রহমান সোহান বিষয়টি নিশ্চিত করেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের পিপি মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমান আত্মসমর্পণের জন্য ১৫ দিন সময় পেয়েছেন অর্থাৎ ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে।’
আমানের স্ত্রী সাবেরা কারাগারে: বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমানের স্ত্রী সাবেরা আমানকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ মামলায় তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়ে ঘোষিত রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর উচ্চ আদালতের নির্দেশে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। গতকাল ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১ আবুল কাশেমের আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিনের আবেদন করেন তিনি। শুনানি শেষে বিচারক তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।