নিউজ ডেস্ক:
সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও জেলা পরিষদের পর এবার ইউনিয়ন পরিষদেও প্রশাসক বসানোর বিধান করা হচ্ছে। স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) (সংশোধন) আইন ২০২২-এর খসড়ায় এমন বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া এ আইনে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিধান সংযোজন করতে প্রস্তাব করা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আইনটি সংশোধনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এ নিয়ে এরই মধ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিগগিরই অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে।
সংশোধনের প্রস্তাবের ৪ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো এলাকাকে ইউনিয়নের পরিষদ ঘোষণা কিংবা পরিষদের মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর সরকার উপযুক্ত কর্মকর্তা বা উপযুক্ত ব্যক্তিকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেবে। আইন অনুযায়ী পরিষদ গঠন না হওয়া পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব পালন করবেন। তবে ১২০ দিনের বেশি দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।
এর আগেও পরিষদ গঠন হওয়ার আগে প্রশাসক নিয়োগের বিধান ছিল। কিন্তু এবারই প্রথম মেয়াদ শেষে প্রশাসক নিয়োগের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। তাছাড়া দৈব-দুর্বিপাকজনিত বা অন্য কোনো কারণে নির্বাচন অনুষ্ঠিত সম্ভব না হলে সরকারের লিখিত আদেশে নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত (অনধিক ৯০ দিন) সংশ্লিষ্ট পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষমতা দিতে পারবে। তবে সংশোধনীতে এ ক্ষমতাও রহিত করে প্রশাসক নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। মহামারির ক্ষেত্রে সময় নির্ধারণ করা যায় না। তাই বিশেষ এ ক্ষেত্রে সরকার যৌক্তিক সময় পর্যন্ত মেয়াদ বাড়াতে পারবে। সংশোধনীতে ইউনিয়ন পরিষদ সচিবের পদবি পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। সচিব ‘ইউনিয়ন পরিষদ প্রশাসনিক কর্মকর্তা’ হিসেবে অভিহিত হবেন। বর্তমান সরকারি গেজেট প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের সভা করার কথা রয়েছে। প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, চেয়ারম্যান ও সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠানের ১০ দিনের মধ্যে পরিষদের সভা করতে হবে।
যদি কোনো চেয়ারম্যান বা চেয়ারম্যানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো সদস্য বা প্রশাসক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে ব্যর্থ হন, তাহলে তিনি ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
ইউনিয়ন পরিষদ গ্রাম আদালত পরিচালনা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারের দেওয়া দায়িত্ব পালন ও প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করবে। গ্রাম আদালত পরিচালনার বিষয়টি সংশোধিত আইনে যুক্ত করা হচ্ছে।
ইউনিয়ন পরিষদের বর্জ্য সংগ্রহ, অপসারণ ও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার বিষয়টিও সংশোধিত আইনে আনা হচ্ছে, আগে যা ছিল না।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, অনেক জায়গায় আইনের ফাঁকফোকর কাজে লাগিয়ে মামলা করে নির্বাচন স্থগিত রাখা হয়। বছরের পর বছর নির্বাচন না হওয়ায় একই ব্যক্তি পদ দখল করে রাখেন। এতে আইন-বিধিসহ নানা বিষয়ে জটিলতায় পড়তে হয়। নির্বাচিত পরিষদের মেয়াদ পাঁচ বছর শেষ হলে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার বিধান সংযোজন হলে মামলা করে নির্বাচন পেছানোর প্রবণতা কমে যাবে।
তারা আরও বলেন, ২০০৯ সালের পর অনেক সময় পেরিয়ে গেছে। তাই কিছু কিছু সংশোধন আনা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। ২০০৯ সালের পৌরসভা আইন ও ২০০০ সালের জেলা পরিষদ আইন চলতি বছরই সংশোধন করা হয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব জেসমীন প্রধান সময়ের আলোকে বলেন, ‘আইনটি সংশোধন করতে এরই মধ্যে প্রায় সব কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। খসড়া প্রস্তাবনা তৈরি করে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করা হয়েছে। এরপর তা বাংলা ভাষা বাস্তবায়ন পুশে পাঠানো হয়েছে। ভাষা সংক্রান্ত বিষয়গুলো সম্পন্ন হলে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।’
স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আইন সংশোধনের মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। জেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা এমনকি ইউনিয়ন পরিষদকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। এরই অংশ হিসেবে আইনটি সংশোধন করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, মেয়াদ শেষে জেলা পরিষদ এবং পৌরসভায়ও মেয়াদ শেষে প্রশাসক বসানোর বিধান ছিল না। চলতি বছর আইন সংশোধন করে স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এ প্রতিষ্ঠান দুটিতে প্রশাসক বসানোর বিধান যুক্ত করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ইউনিয়ন পরিষদেও একই বিধান যুক্ত করে আইনটি সংশোধন করা হচ্ছে। প্রশাসক ছাড়া এ আইনের গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হচ্ছে ‘ইউপি সচিব’ পদের নাম পরিবর্তন। তা ছাড়া ছোটখাটো বিষয় পরিবর্তন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।