বৃহস্পতিবার , জুন ২৭ ২০২৪
নীড় পাতা / উত্তরবঙ্গ / প্রভাবশালীরা সরকারী হাটের জায়গা দখল করে দোকান ঘর নির্মাণ, হাট বসছে মহাসড়কের দুই পার্শ্বে, যেকোন মুহুর্তে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা

প্রভাবশালীরা সরকারী হাটের জায়গা দখল করে দোকান ঘর নির্মাণ, হাট বসছে মহাসড়কের দুই পার্শ্বে, যেকোন মুহুর্তে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দিনাজপুরের হিলি হাকিমপুরে সাদুড়িয়া বাজারে সরকারি হাটের জায়গা দখল করে অবৈধ ভাবে পাকা দোকান ঘর নির্মাণ করছেন প্রভাবশালীরা। হাট ও বাজার কমিটির সভাপতি মোঃ রুহুল আমিন দীর্ঘ প্রায় দেড় মাস পূর্বে অবৈধ দখলদারের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার ভূমির কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এরপরও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এবং হাটের জায়গা সংকুলান হওয়ায় সপ্তাহে দুই দিন শুক্রবার ও মঙ্গলবার হাট বসছে হিলি-বগুড়া মহাসড়কের দুই পাশে। এতে যে কোন মুহুর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কা করছেন পথচারী ও দোকানিরা।
অভিযুক্তরা বলছেন তাদের ক্রয়কৃত জমির উপরে তৈরি করেছেন দোকান ঘর। এদিকে প্রশাসন বলছেন, বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে দ্রæত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আজ মঙ্গলবার সাপ্তাহিক হাটের দিনে সরজমিনে হাট কমিটির সভাপতি,অভিযুক্তকারী, এলাকাবাসী ও দোকানিদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া যায়।
সাদুড়িয়া গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা রোস্তম আলীসহ বেশকয়েক জন জানান, এই বাজারে সপ্তাহিক হাট বসার জন্য আমাদের গ্রামের হায়তন আলী প্রথমে তিন শতক জায়গা হাটের নামে কবলা রেজিস্ট্রি করে দেয়। এরপর প্রায় দুই যুগের বেশি সময় ধরে এই বাজারে সপ্তাহে দুই দিন হাট বসেন। সেই মোতাবেক গত ২০০৪ সালে হাটে দোকানিদের বসার জন্য সরকারি ভাবে সেট তৈরি করা হয়। স¤প্রতি সময়ে নতুন রেকডে দেখা যায় হাটের জায়গা কম হওয়ায় সরকারি ভাবে ১৩ শতক জায়গা হাটের নামে রেকড করা হয়েছে এবং সরকার জমি অধি গ্রহন শুরু করেছেন। কিন্তু এই গ্রামের মৃত শ্রী রুহীনি কান্ত সরকারের ছেলে পল্লী চিকিৎসক ডাঃ গৌড় চন্দ্র, ডাঃ পরিতোষ চন্দ্র, নিতাই চন্দ্র ও অশীম চন্দ্র চার ভাই ও বিপুল চন্দ্র হাটের জায়গা দখল করে পাকা দোকান ঘর তৈরি করছেন। এতে করে হাটের জায়গা সংকীর্ন হয়েছে। বাধ্য হয়ে মহাসড়কের দুই পাশে সপ্তাহে দুই দিন হাট বসছে। এতে করে যেকোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে বলে আমরা শঙ্কা করতেছি। দ্রæত হাটের জায়গায় তৈরি করা অবৈধ দোকান ঘর ভেঙ্গে দিয়ে পূর্বের জায়গায় হাট বসাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জোর দাবি জানাচ্ছি।
হাট ও বাজার কমিটির সভাপতি রুহুল আমিন জানান,হাটের সরকারি পেরিফেরি জায়গা কিছু অসাধু লোকজন অবৈধ ভাবে দখল করে পাকা দোকান ঘর তৈরি করায় হাটের জায়গা সংকট হয়ে পড়েছে। হাটে আগত ও স্থায়ী দোকানদাররা হিলি- বগুড়া মহাসড়কের পাশে হাটের দিনে দোকান বসায়। কিন্তু স¤প্রতি সময়ে এই সড়কের দুই পাশের স¤প্রসারণ কাজ শুরু হওয়ায় সংকীর্ণ জায়গায় হাট বসছে। যেকোন সময় ঘটে যেতে পারে বড় দুর্ঘটনা এর দায়ভার কে নিবে! তাই হাটের জায়গা পূন উদ্ধারের জন্য গত ২৩/০৪/২৪ তারিখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার ভূমি এর নিকট অভিযোগ দাখিল করেছি। এতে কোন সুরহা না হওয়ায় বর্তমানে ও মহাসড়কের দুই পার্শে সংকীর্ণ জায়গায় হাট বসছে।
তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, স¤প্রতি সময়ে সহকারী কমিশনার ভূমি নিজে লোকজন নিয়ে এসে হাটের জায়গা মেপে খুঁটি গাড়িয়ে দেয় এবং অবৈধ ভাবে তৈরি করা দোকান ঘরের শাটার খুলে অভিযুক্তদের হাতে বুঝিয়ে দেয়। খুব অল্প সময়ের মধ্যে এসব ঘর ভেঙ্গে দিয়ে হাটের জায়গা বাহির করা হবে। কিন্তু মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে পুনরায় ওই দোকান ঘরের চারটি শাটার লাগায়। খবর পেয়ে গত বৃহস্পতিবার এসিল্যান্ড আবারও বাজারে আসেন এবং শাটার লাগানো দেখে চলে যায় কোন কিছুই বলেন নাই। এই রহস্যটা কি বুঝতে পারলাম না?।
হাটে আগত মুদি দোকানদার আইনুল ইসলাম ও মাছ ব্যবসায়ী আকবর আলী বলেন, হাটের জায়গা দখল করে দোকান ঘর তৈরি করায় আমরা রাস্তার পাশে বসেছি। আমরাসহ হাটে আগত ব্যক্তিরা সব সময় আতংকে থাকি কখন যে কোন দুর্ঘটনা ঘটে। হাটের জায়গায় তৈরি করা ঘর ভেঙ্গে দিয়ে যত দ্রæত সম্ভব পূর্বের জায়গায় হাট বসানোর জোর দাবি জানাচ্ছি।
হাট ইজারাদার নাঈমুর ইসলাম (লাল মিয়া) বলেন,আমি ২০২৩ ইং সালে হাটটি ইজারা নেই। হাট বুঝে নেওয়ার পরে দেখি হাটের জায়গা সংকীর্ণ। পরে জানতে পারি ইতিপূর্বে সাদুড়িয়া গ্রামের শ্রী রুহীনি কান্ত সরকারের ছেলে পরিতোষ, গৌর, নিতাই, অসীম চন্দ্র চার ভাই ও জনৈক বিপুল চন্দ্র সরকারি এই হাটের জায়গা দখল করে পাকা স্থায়ী দোকান ঘর নির্মাণ করছেন। এ কারণে হাটের জায়গা সংকীর্ন হওয়ায় ব্যবসায়ীরা রাস্তার পাশে বসছেন। তাই হাটের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য হাট কমিটির সভাপতির সাথে আলাপ করে তার মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার ভূমি এর নিকট লিখিত অভিযোগ করায়।
তিনি আরও বলেন, গত ৮ জুন শনিবার আবারও ইউএনও ও এসিল্যান্ড বাজারে এসে ঘটনাস্থল সরজমিনে তদন্ত করেছেন। অবৈধ ভাবে সরকারি জায়গায় তৈরি করা ঘবের ছবি ও ভিডিও করে নিয়ে গেছেন। আশা করি অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রশাসন দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
হাটের জায়গা দখলকারী গৌর চন্দ্র বলেন,আমরা চার ভাই তাদের কবলা এবং রেকর্ড করা সম্পত্তিতে দোকান ঘর নির্মাণ করতেছি। আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়েছে এরকম কোন কাগজ কোন অফিস থেকে পাইনি। তবে আমরা আমাদের জায়গা ফিরে পেতে আদালতের আশ্রয় নিয়েছি। প্রতিপক্ষরা আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন বলে দাবি করেন তিনি।
এবিষয়ে হাকিমপুর উপজেলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত রায় জানান,হাটের জায়গায় দোকান ঘর নির্মাণের অভিযোগ পেয়েছি।ইতিপূর্বে আমি সহকারী কমিশনার ভূমিকে সরজমিনে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের কথা বলেছিলাম। গত ৮ জুন জেলা প্রশাসক শাকিল আহম্মদ স্যারের দিক নির্দেশনা মোতাবেক সরেজমিন তদন্ত করেছি। যত দ্রæত সম্ভব জেলা প্রশাসক স্যারের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। আপনি বা আপনারা নিশ্চিত থাকুন সবাই ন্যায় বিচার পাবেন।

আরও দেখুন

বাগাতিপাড়ায় ৪১ বছর পর হাসপাতালে প্রথম সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাগাতিপাড়া (নাটোর) নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠার ৪১ বছর পর অ্যান্টিভেনম প্রয়োগের …