নিউজ ডেস্ক:
ফ্রান্সের ঐতিহাসিক সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য যেমন প্রশংসা কুড়িয়েছে, তেমনি বাংলাদেশের বিস্ময়কর উন্নয়ন কীভাবে সম্ভব হয়েছে সে সম্পর্কেও বিশ্ব নেতারা জানতে চাইছেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ.কে আব্দুল মোমেন।
শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুরে ফ্রান্সের এক হোটেলে প্রধানমন্ত্রীর সফর প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মোমেন।
তিনি বলেন, এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ফ্রান্স সফর ঐতিহাসিক। এ ধরনের সম্মান আগে কখনও বাংলাদেশের কোনো রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান পাননি।
“আমার জানা মতে কোনদিন এ ধরনের সম্মান দেয়নি।“
প্যারিস পিস কনফারেন্সে (পিপিএফ) বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণকে ‘অপূর্ব’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিনি (প্রধানমন্ত্রী) যে ইস্যুগুলো তুলে এনেছেন, আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসও একই ইস্যু তুলে এনেছেন। শিক্ষা বলেন, আর্থিক বিষয় বলেন…”
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী অন্তত ১৫টি ইস্যু তুলে ধরেন। সেখানে অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান উপস্থিত ছিলেন, অনেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বক্তব্য রাখেন।
ওই সময় শেখ হাসিনার পাশে ছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রো, যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস।
“অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তি হচ্ছে জাতীয় নিরাপত্তার চাবিকাঠি। শান্তি যদি পৃথিবীতে থাকে, তাহলে কোনো ধরনের সংঘাত হবে না। খামোখা অনেক টাকা পয়সা কনফ্লিক্ট বাবদ খরচ হয়, “যোগ করেন মোমেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য রাখেন, সেটা ঐতিহাসিক বক্তব্য। দারুণ বক্তব্য দিয়েছেন এবং আমাকে ৩/৪ জন নেতা এসে বলেছেন আপনার প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অত্যন্ত সুন্দর। ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের যে প্রতিশ্রুতি তা প্রশংসনীয়।
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় বিশ্ববাসীকে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান উঠে আসে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, ফাইল ছবি
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ফ্রান্স সফরে তিনি যেখানেই কোনো অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছেন- তার কাছে বাংলাদেশের সাফল্যের রহস্য সম্পর্কে জানতে চেয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে।
কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে বাংলাদেশে মৃত্যুহার একেবারেই কমে আসছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, (ফ্রান্সে) অনেকেই আমার কাছে জানতে চেয়েছে এটা আমরা কিভাবে পারলাম।
হাসতে হাসতে তিনি বলেন, “সত্যিই এটা একটা মিরাকল। কালকে আমাকে অনেকেই জিজ্ঞেস করেছে।“
শুক্রবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘হাই লেভেন ডিসকাসন অন সাউথ সাউথ অ্যান্ড ট্রায়াঙ্গুলার কো-অপারেশন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
সংবাদ সম্মেলনে এ অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে মোমেন বলেন, বাংলাদেশ কোভিড মহামারীর মধ্যে প্রতিবেশী রাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশকে সাহায্য করেছে এবং ওষুধ দিয়ে এমনকি ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য নার্স পাঠিয়ে সাহায্য করেছে বলে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন।
“আমরা একটা নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছি। অন্যান্য সাউদার্ন দেশগুলোকে কারিগরি সহায়তাসহ বিভিন্নভাবে সহায়তা করছি, যা নতুন। এটাকে একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ আগামীতে দেওয়া যাবে।“
স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো ও লন্ডন সফর শেষে মঙ্গলবার প্যারিসে পৌঁছান শেখ হাসিনা। বিমানবন্দরে নামলে ফরাসি বাহিনীর ২১ জন সদস্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্ট্যাটিক গার্ড অব অনার দেয়।
আগামী ১৩ নভেম্বর প্যারিস থেকে রওনা হয়ে পরদিন সকালে প্রধানমন্ত্রীর দেশে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
এ সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সম্মাননা পেয়েছেন তা সত্যিই বিরল উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে প্যারিসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত খন্দকার মোহাম্মদ তালহা বলেন, এতে বোঝা যায় বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে, সম্পর্ক গভীরতর করতে দেশটি অত্যন্ত আগ্রহী।
“আজকের বাংলাদেশের বাস্তবতা আস্তে আস্তে বহি:বিশ্ব বুঝতে পারছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে যে উন্নয়ন হয়েছে বাংলাদেশে, যে সক্ষমতা বাংলাদেশ অর্জন করেছে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যে গুরুত্ব বেড়েছে এটা সেটারই প্রতিফলন।“
ইউনেস্কোতে বাংলাদেশর মর্যাদা ও অবস্থান তা প্রধানমন্ত্রীর এ সফরের মধ্য দিয়ে আরও অনেক উপরে গিয়েছে। যেভাবে ইউনেস্কোর মহাসচিব প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন সেটা বিরল একটা দৃষ্টান্ত বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বর্তমান বিশ্ব বাংলাদেশকে নিয়ে ভাবছে এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার পাশপাশি বাংলাদেশ নিয়ে অনেকের নেতিবাচক ধারণার পরিবর্তনও হয়েছে বলে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর উপ প্রেস সচিব কে এম শাখাওয়াত মুন, সহকারি প্রেস সচিব এম এম ইমরুল কায়েস উপস্থিত ছিলেন।