রাশেদুল ইসলাম, নাটোর:
নাটোর সদর উপজেলার দিঘাপতিয়া ইউনিয়নের উত্তরা গণভবন সংলগ্ন প্রাচীরের উত্তর দিকে বাড়ি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ মজিবর রহমানের। তিনি জীবনের শেষ দিনগুলো একটা ভালো পাকা ঘরে থাকার আকুতি করে বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবি জানান।
উত্তরা গণভবন সংলগ্ন দিঘাপতিয়া গ্রামে একটি টিনশেডের বাড়িতে বৃদ্ধা স্ত্রী ও এক নাতিকে নিয়ে তিনি বসবাস করছেন। অস্বচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন প্রকল্পে একটি বাড়ির জন্য আবেদন করেন। তার আবেদনের সাথে আরো ৩ জনের মোট ৪ জনের নামের তালিকা করা হয়। পরে উপজেলা প্রশাসনের সঠিক তদন্ত না করে তার পাকা বাড়ি আছে মর্মে আবেদনের তালিকা থেকে তাকে বাদ দেয়া হয়।
জানা যায়, মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ৭ নং সেক্টরের অধীনে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন দিঘাপতিয়ার মৃত মুনসুর রহমানের ছেলে মজিবর রহমান। তিনি নাটোরের লালপুরের ময়নাযুদ্ধে অংশ নেয়া ছাড়াও গোপালপুর, সদরের জংলি ও পাবনার নগরবাড়ি এলাকায় পাক সেনাদের সাথে সম্মুখ সমরে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন।
১৯৯৬ সালে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পান এবং ৩০০ টাকা করে ভাতা পাওয়া শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় অস্বচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বাসভবন নির্মাণের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের থেকে আবেদন গ্রহন শুরু করলে মজিবর রহমান আবেদন করেন৷ ২০১৮ সালে ওই আবেদন উপজেলা ভিত্তিক ভূমিহীন ও অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের বাসস্থান নির্মাণ সংক্রান্ত যাচাই-বাছাই কমিটিতে নির্বাচিত হয়। ওই সভায় নাটোর সদর উপজেলা থেকে নির্বাচিত অপর তিন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন চক আমহাটির আবু তাহের প্রাং,আওরাইল গ্রামের ওসমান আলী আকন্দ ও পূর্ব হাগুরিয়ার জনাব আলী। কিন্ত চলতি বছর নির্বাচিত ৪ জনের মধ্যে মজিবর রহমানকে বাদ দিয়ে বাকী ৩জনের নাম চুড়ান্ত অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়। বিষয়টি জানার পর মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এসে জানতে পারেন তদন্তে পাওয়া গেছে তিনি পাকা দালান বাড়িতে বসবাস করেন এবং এজন্যই তার আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান বলেন, ‘আমার বাড়িতে প্রশাসনের কেউ সরেজমিনে তদন্ত করতে আসেননি। এলে অবশ্যই আমার দুর্দশা দেখে যেতেন৷ যারা আবেদন যাচাই-বাছাই করেছেন, তারা তৃতীয় পক্ষের থেকে তথ্য নিয়েছেন এবং প্রভাবিত হয়েছেন।’
এই মুক্তিযোদ্ধা আরও বলেন, ‘আমি চুড়ান্ত সুপারিশের তালিকা থেকে বাদ পড়েছি। আমার ভালো থাকার জন্য ভালো বাড়ি বা জায়গা দরকার। সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের থাকার ব্যবস্থা করে তাদের সম্মানিত করেছে। কিন্ত এই কাজে আরো সতর্কতার দরকার ছিলো। আমি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অনুরোধ করবো তারা যেন আমার বাড়িতে এসে দেখে যান আমার বাড়ি-ঘর।
নাটোর সদর উপজেলা সাবেক কমান্ডার যুদ্ধহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমানকে আমি চিনি। তিনি প্রকৃতই বাড়ি পাবার যোগ্যতা রাখে। কিন্ত তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে বলেই তিনি তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। তিনি যেন শেষ জীবনটায় প্রাপ্য সম্মানটুকু পান, তার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আমরা অনুরোধ করছি।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রাথমিকভাবে ১০৯ জন মুক্তিযোদ্ধার তালিকা সংগ্রহ করে আমরা ৩৬ জনকে চুড়ান্ত করেছিলাম সুপারিশের জন্য। মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমানের ব্যাপারে তদন্ত করার জন্য স্বেচ্ছাসেবকদের পাঠানো হয় এবং পরবর্তী উপজেলা যাচাই বাচাই কমিটি জানায় যে তার ভালো বাড়ি রয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নাদিম সারওয়ার বলেন, অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই একটি স্পর্শকাতর কাজ। বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান জেলা প্রশাসক বা বিভাগীয় কমিশনার বরাবর যথাযথ প্রক্রিয়ায় আপিল করতে পারেন। এর প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা পুনর্বিবেচনা বা নতুন সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারবেন।