করোনাভাইরাস মোকাবিলাসহ সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে নতুন করে ৬৭ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার সকালে গণভবন থেকে প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি এই কর্মপরিকল্পনার ঘোষণা দেন। এর আগে তৈরি পোশাক খাতের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এবার নতুন চারটিসহ পাঁচটি প্যাকেজে মোট আর্থিক সহায়তার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা, যা জিডিপির প্রায় ২ দশমিক ৫২ শতাংশ। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী উলেস্নখ করেন, চীনে করোনা ছড়ানোর পরপরই বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সতর্কতামূলক নানা পদক্ষেপ নিতে শুরু করে। সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিয়েছে। জানুয়ারি মাস থেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। দ্রম্নত ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলেও তিনি উলেস্নখ করেন। সরকারের এই প্যাকেজ সহায়তা দেশের অর্থনৈতিক খাত উত্তরণে সহায়ক হবে বলে বিশ্লেষকরা আশাবাদী।
গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে দেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ও মৃতু্যর তথ্য তুলে ধরে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনাও জানান। তিনি বলেছেন, একটি মৃতু্যও কাম্য নয়। দেশে ১৭ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণার প্রসঙ্গ টেনে জনসাধারণকে ঘরে থাকার আহ্বান জানান। তিনি উলেস্নখ করেন, করোনা পরিস্থিতি বৈশ্বিক মহামন্দা অবস্থা সৃষ্টি করেছে। আর এ পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্যই তিনি বাংলাদেশের পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে জানা যায়, করোনার প্রভাবে ইতোমধ্যে আমদানি ব্যয় ও রপ্তানি আয় ১ শতাংশ কমে গেছে। শেয়ারবাজারের ওপর প্রভাব পড়েছে। বিশ্বে জ্বালানি তেলের দাম কমে গেছে। করোনার প্রভাব প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রেও পড়তে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করেন। তিনি বলেছেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে যাওয়ায় জিডিপির প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেতে পারে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রধানমন্ত্রীর এই উপলব্ধি যথার্থ। আর এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সহায়তার পদক্ষেপ হিসেবে তাৎক্ষণিক করণীয়, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন তিনি। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে সরকারি ব্যয়বৃদ্ধি ও কর্মসৃজনকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা জানান। এর ফল নিম্নবিত্ত মানুষ পাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। আমরা লক্ষ্য করেছি, ভয়াবহ করোনাভাইরাসের প্রভাবে শ্রমিক-কর্মচারী বা অন্যান্য কর্মজীবী মানুষ যাতে কর্মহীন না হয়ে পড়েন, সে জন্য সরকারের নানামুখী উদ্যোগ রয়েছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ, ঋণসুবিধা এবং সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের ব্যাপকতা বাড়ানোর কথাও তিনি সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন। আমরা জানি, বিশ্ববাসী এখন করোনা সংক্রমণ এবং বিপুল মানুষের মৃতু্যতে বিপর্যস্ত। রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘একলা চলো’ নীতি গ্রহণ এবং দেশের শিল্প-কল-কারখানা বন্ধ রেখেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে বিদ্যমান এ পরিস্থিতিতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও তা যথাযথভাবে বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
আমরা বলতে চাই, সরকার ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য স্বল্পসুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা, প্রি-শিপমেন্ট সুবিধা, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রবর্তিত এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের (ইডিএফ) সুবিধা, ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পসহ মাঝারি শিল্পের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা এবং রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য আপৎকালীন ঋণসহ যেসব সুবিধার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে তা তদারকির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবা এক সময় থাকবে না, তখন অর্থনীতিকে গতিশীল করতে সরকারকেই চালকের আসনে বসতে হবে। সুতরাং সরকার এখন থেকে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি যে পাঁচটি প্যাকেজ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, তা দূরদর্শী সিদ্ধান্ত বললেও অতু্যক্তি হয় না।
সর্বোপরি বলতে চাই, বিদ্যমান এ পরিস্থিতিতে অর্থনীতির ক্ষেত্রগুলোকে যেমন বাঁচিয়ে রাখা প্রয়োজন, তেমনইভাবে দেশের সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘবেও যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। যারা ঝুঁকিপূর্ণ জরুরি সেবায় নিয়োজিত তাদের বিষয়টিও গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নেওয়া অপরিহার্য। ভয়াল এই সময়ে দাঁড়িয়ে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানাই। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সফল হয়ে দেশ ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।