নিউজ ডেস্ক:
দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে অপেক্ষার পর পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্তরা তাদের প্লট বুঝে পাচ্ছেন। ‘মূল অধিবাসী ও সাধারণ ক্ষতিগ্রস্ত’ এ দুটি ক্যাটাগরিতে মোট ১ হাজার ৪৪০টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। রাজউকের এ প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্লট দেওয়ার কথা থাকলেও গত দুই যুগেও তা বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। কিন্তু সম্প্রতি সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে এ বিষয়ে নির্দেশনা আসার পর নতুন করে এসব প্লট সৃজন করে তা বরাদ্দ উপযোগী করে সংশ্লিষ্টরা। ৯ মে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে এসব প্লট বরাদ্দ অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই মধ্যে সব ধরনের আয়োজন সম্পন্ন করেছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও রাজউক। এ কাজটি শেষ করা গেলে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হবে রূপগঞ্জ ও গাজীপুরের সংশ্লিষ্ট বাসিন্দাদের।
জানতে চাইলে রাজউকের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী গতকাল সোমবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পূর্বাচল নতুন শহরে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বরাদ্দ দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে রাজউকের বোর্ড সভা থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ১ হাজার ৪৪০টি প্লট পাচ্ছেন গাজীপুর ও রূপগঞ্জ অংশে ক্ষতিগ্রস্তরা। আগামী ৯ মে প্রধানমন্ত্রী এ সংক্রান্ত একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তা বরাদ্দপ্রাপ্তদের মাঝে হস্তান্তর করবেন। এ অনুষ্ঠান এক বা একাধিক স্থানে হতে পারে। এ কাজটি করা গেলে সংশ্লিষ্টদের দীর্ঘ সময়ের অপেক্ষার অবসান হবে।’
পূর্বাচল শহরের জন্য গত শতাব্দীর শেষ দশকে ভূমি অধিগ্রহণ শুরু হয়। ১৯৯১-১৯৯৬ সময়কালে সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী থাকার সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি ক্ষমতায় গেলে তাদের প্লট দেবেন এখানে।
কর্মকর্তারা জানান, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) মালিকানাধীন সব ধরনের প্রকল্পের প্লট সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে গত বছর ২৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিবের কাছে চিঠি দেন। এরপরই মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে রাজউক কর্তৃপক্ষ পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের সব প্লটের বিস্তারিত প্রস্তুত করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠায়। সেখানে মোট প্লটের সংখ্যা, বরাদ্দকৃত প্লটের সংখ্যা, খালি প্লটের সংখ্যা, ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বরাদ্দকৃত প্লটের সংখ্যাসহ বিস্তারিত সব তথ্যই ছিল।
রাজউকের নথি ঘেঁটে দেখা যায়, চলতি বছর ২৬ জানুয়ারি একটি বিশেষ বোর্ড সভা করে রাজউক। সেখানে পূর্বাচল প্রকল্পের বহুতল ভবন নির্মাণ ব্লক থেকে ৮৯ দশমিক ৬৩ একর জমি নিয়ে ১ হাজার ১৯৭টি প্লট নতুন করে তৈরি করা হয়। সেখানে তিন কাঠা আয়তনের এ প্লটগুলো মূলত ‘মূল অধিবাসী ও সাধারণ ক্ষতিগ্রস্ত’ ক্যাটাগরিতে বরাদ্দ দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়। এর মধ্যে এ প্রকল্পের ক্ষতিগ্রস্ত সংক্রান্ত যাচাই-বাছাই কমিটির একটি প্রতিবেদনও বোর্ড সভায় উপস্থাপন করলে তা অনুমোদন করা হয়। সেখানে বলা হয়, ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্য থেকে মোট ৩ হাজার ৫৫৪টি আবেদন পড়ে রাজউকে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ অংশে মূল অধিবাসী ক্যাটাগরিতে ২২৪টির মধ্যে ১০০টি, গাজীপুর অংশে ক্ষতিগ্রস্ত ক্যাটাগরিতে ১ হাজার ৪৭০টির মধ্যে ৪৪১টি ও গাজীপুর মূল অদিবাসী হিসেবে ১ হাজার ৮৬০টির মধ্যে ৯১২টি আবেদন বৈধ বলে উল্লেখ করা হয়। সেখান থেকে আবেদনের ঘরে ক্রমিক উল্লেখ না থাকায় ১১টি, মূল অ্যাওয়ার্ডে তথ্যের সঙ্গে মিল না থাকায় একটি ও একই ব্যক্তির দুই আবেদন থাকায় একটিসহ মোট ১৩টি আবেদন বাতিল করে ১ হাজার ৪৪০টি আবেদনকে বৈধ হিসেবে অনুমোদন দেওয়া হয়। এ প্লটগুলোর তালিকা প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে পাঠিয়ে তা অনুমোদনও করিয়ে নেওয়া হয়।
পূর্বাচল প্রকল্প নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে পাঠানো চিঠি হতে দেখা যায়, গাজীপুর অংশে ক্ষতিগ্রস্তদেরও তালিকা তৈরি করেছে রাজউক। রাজউক সূত্রে জানা যায়, পূর্বাচল নতুন শহর এ প্রকল্পে বিভিন্ন আয়তনের আবাসিক প্লট বরাদ্দের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, তিন কাঠা আয়তনের ১০ হাজার ১২টি প্লটের মধ্যে ৯ হাজার ৮৬২টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তিন কাঠা আয়তনের ১৫০টি প্লট এখনো খালি রয়েছে। প্রকল্পটিতে পাঁচ কাঠা আয়তনের মোট ১০ হাজার ৩৬১টি প্লটের সব কয়টি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ফলে পাঁচ কাঠা আয়তনের খালি কোনো প্লট নেই সংস্থাটির হাতে। সাড়ে সাত কাঠা আয়তনের মোট ২ হাজার ৬১৮টি প্লটের মধ্যে ২ হাজার ৫৯৮টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেই হিসাবে সাড়ে সাত কাঠার ২০ প্লট রাজউকের হাতে আছে। ১০ কাঠা আয়তনের ২ হাজার ২৫টি প্লটের মধ্যে ২ হাজার ২১টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ দেওয়া বাকি আছে চারটি প্লট। সব মিলিয়ে ২৫ হাজার ১৬টি প্লটের মধ্যে ২৪ হাজার ৮৪২টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া সম্পন্ন হয়েছে। ফলে পূর্বাচল প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া বাকি আছে এমন প্লটের সংখ্যা ১৭৪টি।
জানতে চাইলে গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দুটি ক্যাটাগরিতে আমরা ইতিমধ্যে ১ হাজার ৪৪০টি প্লট ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বরাদ্দ দেওয়ার সব ধরনের দাপ্তরিক কাজ শেষ করেছি। প্রধানমন্ত্রী ৯ মে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পূর্বাচলে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে এ প্লটগুলো বিতরণ করবেন। গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে বরাদ্দপত্র তুলে দেবেন।’