নিজস্ব প্রতিবেদক:
মুজিববর্ষ পালন উপলক্ষে গোপালগঞ্জে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত পাঁচুড়িয়া খাল পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড গত বছরের ডিসেম্বর মাসে এই খালের খননকাজ শুরু করেছে। আর এ বছরের মধ্যেই খননসহ সব কাজ শেষ করবে। এরপরই নদীপথে গোপালগঞ্জ থেকে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার মাজারে যাওয়া-আসার সুযোগ পাবেন দর্শনার্থীসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষ। জেলা সদরের পাঁচুড়িয়া ঘাট থেকে প্রতিদিন সকালে ও বিকালে যাত্রী নিয়ে সুদৃশ্য ট্রলার ছেড়ে যাবে ও ফিরে আসবে। যানবাহনের ব্যস্ততার ভিড় এড়িয়ে মানুষ নিরাপদ, গ্রাম্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশে এবং স্বল্প ব্যয়ে গোপালগঞ্জ-টুঙ্গিপাড়া যাওয়া-আসা করতে পারবে। তবে পাঁচুড়িয়া খাল পুনরুজ্জীবিত করে সচল রাখতে হলে এই নৌ-রুটটির আশপাশে অবৈধ ও অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা স্থাপনা ভেঙে শহরের মধুমতি লেকের সঙ্গে সংযোগ করা ব্যতীত এই রুটটি নৌ-চলাচলের উপযোগী রাখা আদৌ সম্ভব নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস সূত্রে জানা গেছে, গোপালগঞ্জ সদরের পাঁচুড়িয়া থেকে টুঙ্গিপাড়া জাতির পিতার মাজার সংলগ্ন হিজলতলার দূরত্ব ১৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে বাগিয়ার নদীর অংশ ৬ কিলোমিটার, বর্নি বাঁওড় ২ কিলোমিটার ও পাঁচুড়িয়া খাল ৮ কিলোমিটার। এই নৌপথ দিয়েই জাতির পিতা টুঙ্গিপাড়া থেকে গোপালগঞ্জ আসা-যাওয়া করতেন। ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই নৌ-রুটের বাগিয়ার নদীর ৬ কিলোমিটার খনন করা রয়েছে। বর্নি বাঁওড়ের ২ কিলোমিটার খনন করছে ড্রেজিং বিভাগ এবং পাঁচুড়িয়া খালের ৮ কিলোমিটার খনন করছে গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড। এসব কাজের ৪৫ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। মুজিববর্ষের মধ্যেই খাল খনন, বৃক্ষরোপণ, তীর সংরক্ষণ কাজ শেষ করে গোপালগঞ্জ থেকে টুঙ্গিপাড়া নৌ-রুট সচল করা হবে।
মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ লুৎফার রহমান বাচ্চু বলেন, বঙ্গবন্ধু টুঙ্গিপাড়া থেকে স্টিমারে করে, নৌকায় করে এসে পাঁচুড়িয়ায় নামতেন। এখান থেকেই আবার তিনি নৌ-পথে টুঙ্গিপাড়া যেতেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড সত্যিকার অর্থে যদি জাতির পিতার স্মৃতি ধরে রাখার জন্য পাঁচুড়িয়া খাল পুনরুজ্জীবিত করতে চায় তাহলে অবশ্যই খালটির অবৈধ স্থাপনা ও অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত সরকারি অবকাঠামোগুলো ভেঙে ফেলতে হবে। রাস্তার নিচ দিয়ে টানেল নির্মাণ করে মধুমতি লেকের সঙ্গে সংযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হালিম সালেহী বলেছেন, মুজিববর্ষের মধ্যেই খাল খনন, বৃক্ষরোপণ, তীর সংরক্ষণ কাজ শেষ করে গোপালগঞ্জ থেকে টুঙ্গিপাড়া নৌ-রুট সচল করা হবে। তবে জাতির পিতার স্মৃতিবিজড়িত এই খালটির ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমরা স্থানীয়রা কতটা যত্নবান থাকব তার উপরই নির্ভর করবে খাল খননের সার্থকতা।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ওয়াহেদ উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, গোপালগঞ্জ-টুঙ্গিপাড়ার এই নৌ-রুটটি সচল রাখতে শহরের পাঁচুড়িয়ায় একটি টানেল নির্মাণ করে মধুমতি লেকের সঙ্গে সংযোগ সৃষ্টি করা হবে। মধুমতির পানি এই খালে ঢুকতে পারলে খালটিতে কচুরিপানা জমতে পারবে না, নির্বিঘ্নে নৌযান চলাচল করতে পারবে।