নিউজ ডেস্ক:
সম্প্রতি ভারতের সীমান্ত অঞ্চলগুলোর সঙ্গে সড়ক ও শুল্ক স্টেশনগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং কিছুটা অবকাঠামো উন্নয়নের ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল, নেপাল ও ভুটানের পুনঃ রপ্তানি বাড়ছে। এর ফলে ভারত ও অন্য দেশ থেকে আনা পণ্য বাংলাদেশ হয়ে নেপাল ও ভুটান যাচ্ছে। ফলে খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, এই রপ্তানি বৃদ্ধি খুব একটা বেশি না হলেও এটি দেশের পুনঃ রপ্তানির বিপুল সম্ভাবনা তৈরি করছে।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এর মাধ্যমে খুব একটা বাণিজ্য না বাড়লেও প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের বাজারসংক্রান্ত সখ্য বাড়ছে।
ফলে আগামী রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এটা খুবই উৎসাহব্যঞ্জক। তবে সীমান্তবন্দর কাস্টমস স্টেশনগুলোতে উভয় দেশে সমান সুবিধা কার্যকর করতে হবে। এ ছাড়া ভারতের সঙ্গে অশুল্ক বাধা এবং মান সনদ নিয়ে জটিলতা দূর করা গেলে এর সুফল আরো কার্যকর হবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান মার্চ মাসের প্রকাশনায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, বিদায়ি গত ২০২৩ পঞ্জিকা বর্ষের শেষ ছয় মাসে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১২ শতাংশ। এখানে দেখা যায়, বাংলাদেশ থেকে গত ডিসেম্বর মাসে পুনঃ রপ্তানি হয়েছে ৯৪০ কোটি ৪০ লাখ টাকা, যা একই বছরের জুলাইয়ে ছিল ৪৪২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। সেই হিসাবে পুনঃ রপ্তানিতে এ সময়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১২ শতাংশ।
এ ছাড়া একই বছরের নভেম্বর মাসে পুনঃ রপ্তানি হয়েছে ২৩৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা। অক্টোবরে ৮৯৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা, সেপ্টেম্বরে ৫০২ কোটি ১০ লাখ টাকা ও আগস্টে ২৪৬ কোটি ১০ লাখ টাকা।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আরো বলেন, শুধু পুনঃ রপ্তানিই নয়; বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে উৎপাদন খাতে বিশাল কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে। ভারতের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের সীমান্তসংলগ্ন প্রদেশগুলোতে বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি করলে দেশটির সঙ্গে বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসতে পারে। এ জন্য ভারতের জন্য নির্ধারিত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগ করা যেতে পারে।
এ ছাড়া ভারতের দিকে শুল্ক স্টেশনগুলোর স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। পণ্যের শেডগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে খোলা আকাশের নিচে ফেলে না রেখে দ্রুত খালাসের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া বিএসটিআইয়ের মান সনদে গুরুত্ব দেওয়া এবং ব্যাকিং সুবিধাকে আরো সহজ ও গতিশীল করা।
এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থনৈতিকবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. মাশরুর রিয়াজ কালের কণ্ঠকে বলেন, একক পণ্যনির্ভর দেশের রপ্তানি খাত অনেক ঝুঁকি মোকাবেলা করে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখছে। তবে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর ২০২৬ সাল পর্যন্ত প্রচলিত বাজারগুলোতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। এ সময় পুনঃ রপ্তানি বৃদ্ধিসহ পণ্য বহুমুখীকরণ বাজার বহুমুখীকরণ ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
সেই হিসেবে সম্ভবানাময় হবে উদীয়মান অর্থনীতির দেশ নেপাল, ভুটান ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রদেশগুলো। এগুলোকে আরো কার্যকর করতে হবে। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য সহজ হয় এমন উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষ করে পণ্যের মান সনদ জটিলতা এবং উভয় দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন ও শুল্ক স্টেশনগুলোতে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে।
পুনঃ রপ্তানি বাড়লে বাংলাদেশ রপ্তানির হাব হতে পারে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. আমিন হেলালী। তিনি বলেন, এখান থেকে পুনঃ রপ্তানি হচ্ছে। সাউথ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ একটি রপ্তানি তথা বাণিজ্যিক হাব হতে পারে। এখান থেকে ভারতের সেভেন সিস্টারসহ মিয়ানমারের একটি অংশেও রপ্তানি করা সম্ভব।
তিনি আরো বলেন, ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে পুনঃ রপ্তানি একটি সম্ভাবনাময় খাত। এ জন্য দুই দেশের নীতিগত সংকট সমাধানে দুই দেশের আন্তরিক হতে হবে। এ ছাড়া ভুটান ও নেপালের বন্দরগত কিছু দুর্বলতা আছে। এই প্রেক্ষাপটে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন। বাংলাদেশে এনে পুনঃ রপ্তানি হলে দেশে কিছুটা মূল্য সংযোজন হবে।