নিজস্ব প্রতিবেদক, পুঠিয়া:
রাজশাহী পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি প্রাইভেট ক্লিনিক ও ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা প্রতিদিন এদের দ্বারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। রোগীরা চিকিৎসকের কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসামাত্র করিডোরে অবস্থানরত ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা ব্যবস্থাপত্র দেখতে রীতিমতো কাড়াকাড়ি করে এবং প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের দালালেরা রোগীদের হাত ধরে তাদের ক্লিনিকে রক্ত পরীক্ষাসহ নানারকম টেস্ট করানোর জন্য টানাটানি করে বলে অভিযোগ করেছেন বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, সপ্তাহে তিনদিন দুপুর ২টার পর চিকিৎসকদের সাথে ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের দেখা করার অনুমতি রয়েছে। নির্ধারিত এই সময়ের বাইরে অন্য সময় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিক্রয় প্রতিনিধিরা কোনো চিকিৎসকের সাথে দেখা করতে পারবেন না। এমনকি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সীমানার মধ্যেও কোনো বিক্রয় প্রতিনিধি ও প্রাইভেট ক্লিনিক- ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের দালালেরা বা প্রতিনিধিরা অবস্থান করতে পারবেন না। কিন্তু নিয়ম মানছেন না কেউই।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা বলেন, হাসপাতালের সামনে প্রায় ১ ডজন প্যাথলজি সেন্টার ও ক্লিনিক রয়েছে। প্রতিটি ক্লিনিক ও ডায়াগনোষ্টিক
সেন্টারের দালালরা এখানে কাজ করেন। যে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে সেখান থেকে ডাক্তার ৪০ শতাংশ কমিশন ভোগ করেন। প্রতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ডাক্তারদের এ কমিশন দেয়া হয়। দেখা যায়, একজন ডাক্তার ৩০ থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত কমিশন পেয়ে থাকেন।
এদিকে সরকারি হাসপাতালটি ঘিরে শুধু পুঠিয়া সদরে ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে প্রায় ডজন খানেক ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক। সেগুলোর অধিকাংশই অনুমোদনবিহীন। তা ছাড়াও সেগুলোতে নেই পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি, নেই কোনো টেকনিশিয়ান। শুধু অনুমানের ভিত্তিতে দেওয়া হচ্ছে পরীক্ষার রিপোর্ট। এ ছাড়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর পরিবেশ অত্যন্ত নোংরা, একই রুমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, খাওয়া-দাওয়া ও টয়লেট ব্যবহার করা হচ্ছে। পুঠিয়া উপজেলা সদরে অবস্থিত ১২টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এক বা একাধিক দালাল ও কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া আছে। এর মধ্যে অধিকাংশই নারী, মাসিক ছয়-সাত হাজার টাকা বেতন ও ৪০ শতাংশ কমিশনের ভিত্তিতে কাজ করেন তারা।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুল মতিন বলেন, বিষয়টি তিনি অবগত আছেন। শিগগিরই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল হাই মোহাস্মদ আনাছ পিএএ বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলবো। তবে ভুক্তভোগী রোগী বা তাদের স্বজনদের কেউ অভিযোগ করলে মোবাইল কোর্ট করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।