নিজস্ব প্রতিবেদক, পুঠিয়া:
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী আমের হাট বানেশ্বর বাজারে আম কেনাবেচা ও পরিবহনে ১১টি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে৷ নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
আজ (১৯ মে) বুধবার দুপুরে বানেশ্বর হাট কাঁচারি মাঠে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সভায় আম চাষী ও ব্যবসায়ী এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে এ নির্দেশনা জারি করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল হাই মোহাম্মদ আনাস পিএএ’র সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া দুর্গাপুর) আসনের সংসদ সদস্য প্রফেসর ডাঃ মনসুর রহমান।
মতবিনিমিয় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান জি এম হিরা বাচ্চু, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামসুন্নাহার ভূইয়া, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহরাওয়ার্দী হোসেন, ট্রাফিক পুলিশ ইনচার্জ ইন্সপেক্টর জাহিদুল ইসলাম, হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর লুৎফর রহমান, রাজশাহী জেলা আ.লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আহসান উল হক মাসুদ, পৌর আ.লীগের সাধারন সম্পাদক শাহরিয়ার রহিম কনক, বানেশ্বর ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারন সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, বানেশ্বর হাট ইজারাদার ওসমান আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
নির্দেশগুলো হলো:
১। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আম পরিবহনের ক্ষেত্রে অর্ডার নেয়ার পর প্যাকেট থেকে আম চুরি বা অন্য কোন ভাবে আম খোয়া গেলে সংশ্লিষ্ট কুরিয়ার সার্ভিসকে এর দায়ভার বহন করতে হবে ও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
২। ওজন ও পরিমাপ মানদন্ড আইন, ২০১৮ এর ২৮ধারাঃ ‘ব্যবসা বা বাণিজ্য, কোনো লেনদেন বা মালামাল সরবরাহের কাজে মেট্রিক পদ্ধতির অনুসরণ ব্যতীত অন্য কোনো পদ্ধতির ওজন বা পরিমাপন ব্যবহার করা যাইবে না।’ ২৮ ধারার ব্যত্যয় হলে ৪৫ ধারায় শাস্তির বিধানে বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি যদি ওজন বা পরিমাপ বা, ক্ষেত্রমত, সংখ্যামানের মানদন্ড ব্যতীত, অন্য কোনো ওজন বা পরিমাপ বা সংখ্যামান ব্যবহার করেন, তাহা হইলে তিনি অনূর্ধ্ব ৬(ছয়) মাসের কারাদন্ড অথবা অনূর্ধ্ব ৫০(পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডেদন্ডিত হইবেন।’
উক্ত আইন অনুযায়ী মেট্রিক পদ্ধতিতে ০১ মণে ৪০ কেজি হয়। মণে কেনাবেচা হলে ৪০ কেজির বেশি দাবি করা আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ। যদি ৪০ কেজির বেশি কেনাবেচা করতে হয়, সেক্ষেত্রে, কেজিতে ক্রয়-বিক্রয় করার জন্য বলা হলো। কেজিতে ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রতি কেজির দাম প্রথমে নির্ধারণ করতে হবে।
৩। শোলা প্রথা বাতিল করা হলো।
৪। নির্ধারিত খাজনার অতিরিক্ত টাকা আদায় করা যাবেনা।
৫। মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে হাটের নির্ধারিত স্থানে কেনাবেচা করতে হবে।
৬। বানেশ্বর বাজারের আম ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা, সার্বিক সহযোগিতা ও সুষ্ঠুভাবে বাজার পরিচালনার স্বার্থে প্রত্যেক আম ব্যবসায়ীকে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে নিবন্ধিত হতে হবে। বিগত সময়ে দেখা গিয়েছে, অনেক আম ব্যবসায়ী হঠাৎ বাজারে এসে আম ক্রয় করে চাষীদের টাকা পরিশোধ না করে উধাও হয়ে গেছে।
৭। আম ব্যবসায়ীগণ আমের গায়ে আমের মূল্য লিখতে পারবেন না। আমের মূল্য সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী তার নির্ধারিত /কাগজে/ চিরকোটে লিখে স্বাক্ষর করতে হবে।
৮। ব্যবসায়ীগণ আমের গুণগত মান ও দর কষাকষি বাজারে শেষ করবেন। আড়তে গিয়ে নতুনভাবে দর কষাকষি ও চাষীকে হয়রানি করা যাবে না।
৯। ভ্যান বা ছোট গাড়িতে আম বানেশ্বর বাজারে আনা যাবে, কিন্তু উক্ত গাড়িগুলোতে মানুষ পরিবহন করা যাবে না।
১০। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, এমন কোন ধরনের ক্যামিকেল আমে ব্যবহার করা যাবে না।
১১। আম ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানা ও মাস্ক পরিধান করা বাধ্যতামূলক।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ, পিএএ জানান, উপজেলা প্রশাসন, থানা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ এমনকি হাট কমিটি এসমস্ত নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবেন। উক্ত নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।