বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন এবার ৭৫ লাখ টন সক্ষমতার পেট্রোলিয়াম রিফাইনারি স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে। এজন্য ফিজিবিলিটি স্টাডির উদ্যোগ নিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটি। নির্মিত হলে এটি হবে দেশের সর্ববৃহৎ রিফাইনারি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ইতোমধ্যে এক হাজার একর জায়গা অধিগ্রহণের সিদ্ধান্তও নেয় বিপিসি।
জানা গেছে, ইস্টার্ন রিফাইনারি বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানাধীন পেট্রোলিয়াম রিফাইনারি। ১৯৬৬ সালে নগরীর গুপ্তখাল এলাকায় ইস্টার্ন রিফাইনারি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬৮ সালের ৭ মে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করে। ইস্টার্ন রিফাইনারির এই ইউনিটটির সক্ষমতা ১৫ লাখ মেট্রিক টন। এখান থেকে দেশের মোট চাহিদার ২৫ শতাংশ জ্বালানি চাহিদা পূরণ করা হয়। জ্বালানি সক্ষমতা ও নিরাপত্তা বাড়াতে ইস্টার্ন রিফাইনারির বর্তমান স্থাপনার পাশেই ৩০ লাখ মেট্রিক টন সক্ষমতার আরেকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বিপিসি। ‘ইনস্টলেশন অব ইআরএল ইউনিট-২’ নামের প্রকল্পটির প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা।
২০২০ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা থাকলেও এখনো রিফাইনারির মূল কাজ শুরু করতে পারেনি নির্মাতা সংস্থা। বিপিসির নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটিতে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন অর্থাৎ ইউরো-৫ মানের পেট্রোলিয়াম পণ্য উৎপাদিত হবে। নির্মাণাধীন ইউনিট-টু প্রকল্পটি চালু হলে ইআরএলের ক্রুড অয়েল পরিশোধন ক্ষমতা প্রতি বছর ৪৫ লাখ মেট্রিক টনে দাঁড়াবে। এতে মোট চাহিদার ৭৫ ভাগ চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে।
দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতিতে সময়ের সাথে বাড়ছে জ্বালানির চাহিদা। ভবিষ্যতে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি পরিশোধিত জ্বালানি রপ্তানির লক্ষ্যে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শোধনাগার স্থাপনের পরিকল্পনা নেয় সরকার। পটুয়াখালীর পায়রা বন্দর এলাকায় পরিকল্পনাধীন ৭৫ লাখ মেট্রিক টন পরিশোধন ক্ষমতার রিফাইনারি স্থাপন করা হবে। পাশাপাশি দুই লাখ মেট্রিক টন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি এলপিজি ইম্পোর্ট, স্টোরেজ ও বটলিং প্ল্যান্ট স্থাপনের পরিকল্পনাও নেওয়া হয়।
বিপিসি জানিয়েছে, পায়রা বন্দর এলাকায় পেট্রোলিয়াম রিফাইনারি স্থাপনের জন্য ফিজিবিলিটি স্টাডির জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের জন্য দরখাস্ত আহ্বান করে। এতে ১৭টি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান ফিজিবিলিটি স্টাডি করার অভিপ্রায় প্রকাশ করে। এর মধ্যে ৭টি প্রতিষ্ঠানকে প্রাথমিকভাবে যোগ্য বিবেচিত করে বিপিসি।
লেটার অব ইন্ডেন্ট পাওয়া ৭ প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে ফিজিবিলিটি স্টাডির জন্য নিজেদের স্বপক্ষে রেফারেন্স ডকুমেন্ট জমা দিয়েছে। এর মধ্যে বিপিসির কারিগরি ও আর্থিক মূল্যায়ন কমিটির মূল্যায়নে সর্বোচ্চ স্কোর পাওয়া প্রতিষ্ঠানকে নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড (এনওএ) প্রদানের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে বিপিসি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিপিসির এক কর্মকর্তা বলেন, পায়রায় ৭৫ লাখ টন সক্ষমতার রিফাইনারির প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
বিপিসির পরিচালক (অপারেশন ও পরিকল্পন) সৈয়দ মেহদী হাসান বলেন, আমাদের বর্তমানে ১৫ লাখ টনের রিফাইনারি রয়েছে। জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে ৩০ লাখ টন সক্ষমতার ইআরএল ইউনিট টু নির্মাণ করা হচ্ছে। বর্তমানে চাহিদার প্রায় ৭৫ ভাগ জ্বালানি আমদানি করতে হয়। ইআরএল ইউনিট টু নির্মিত হলে ৭৫-৮০ শতাংশ চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদার কারণে এবং জ্বালানি খাতে স্বনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যে পায়রায় একটি কম্পোজিট পেট্রোলিয়াম রিফাইনারি স্থাপনের জন্য ফিজিবিলিটি স্টাডি করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ফিজিবিলিটি স্টাডির প্রতিবেদন পাওয়ার পর সুপারিশ অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।