নিজস্ব প্রতিবেদক:
চট্টগ্রাম অঞ্চলের পর্যটনশিল্পের দ্রুত সমৃদ্ধি ও বিকাশ ঘটছে বেসরকারিভাবেই। সরকারি পর্যায়ে তেমন কোনো উদ্যোগ না থাকলেও পর্যটনকে এগিয়ে নিতে পাহাড় এবং সমতলের নতুন নতুন পর্যটন স্পটে বৈচিত্র্যময় ও দৃষ্টিনন্দন রিসোর্ট ও কটেজ তৈরি হচ্ছে ব্যক্তি উদ্যোগে। পাহাড়ে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য প্রথমবারের মতো তৈরি হচ্ছে পাঁচতারকা হোটেল। নীলগিরিতে পর্যটকদের আসা-যাওয়ার সুবিধার্থে বান্দরবানে বিশেষ বাস সার্ভিস চালু হয়েছে। রাঙামাটিতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের হাত ধরে খুলছে পর্যটনের দুয়ার। সরকারি সংস্থা পর্যটন করপোরেশন পাহাড়ে একাধিক প্রকল্প নিলেও তার অগ্রগতি চলছে কচ্ছপগতিতে।
পরিবেশবিদ ও পর্যটন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইদ্রিস আলী বলেন, পাহাড় প্রকৃতির দান। প্রকৃতি সবসময়ই মানুষের মনপ্রাণ সতেজ করে দেয়। তাই পাহাড়ে ক্রমেই পর্যটন বিকশিত হচ্ছে। পরিবেশ ও প্রকৃতি ঠিক রেখেই পর্যটনশিল্পের বিকাশ করতে হবে। সাজেক কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি সুপর্ণ দেব বর্মণ জানান, প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক সাজেক ভ্রমণে আসছেন। পাঁচ-ছয় বছরে প্রায় শতকোটি টাকা বিনিয়োগ করে সাজেকে ব্যক্তি উদ্যোগে পর্যটকদের জন্য শতাধিক কটেজ ও রিসোর্ট তৈরি হয়েছে।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৭০০ ফুট উঁচুতে ‘মেঘের রাজ্য’ এবং বাংলাদেশের ‘দার্জিলিং’খ্যাত সাজেক ভ্যালির রুইলুইপাড়া থেকে কংলাক পাহাড় পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার এলাকা বছরজুড়ে পর্যটকের আনাগোনায় মুখর থাকে।
২০১৫ সালে এখানে শুধু সেনাবাহিনীর একটি রিসোর্ট থাকলেও এর পর থেকেই দিন দিন একের পর এক বৈচিত্র্যময় রিসোর্ট ও কটেজ তৈরি হয়েছে। সাজেকে ২০১৬ সালে ৩৯টি কটেজ ও রিসোর্ট থাকলেও ২০২০ সালে তা শতাধিকে উন্নীত হয়েছে। আদিবাসী বসতঘরের আদলে কটেজের পাশাপাশি তৈরি হয়েছে ইটপাথরের দালানও। প্রথম ‘সাজেক রিসোর্ট’ ছাড়াও এখন আলো রিসোর্ট, রুন্ময়, মেঘ মাচাং, লুসাই, মেঘপুঞ্জি, ঝিঁঝিঁ পোকার বাড়ি, ম্যাডভেঞ্চার, আদিবাসী ঘর, জুমঘর ইকো রিসোর্ট, রক প্যারাডাইজ, অবকাশ ইকো, মেঘালয়, রুলুই, সারা নীল কুঠির, দার্জিলিং, এভারেস্ট, রয়েল সাজেক, সাগ্রাই, সাজেক হিল ভিউ, মৈত্রী, মেঘ বিলাস, জলবুক রিসোর্টসহ বহু রিসোর্ট ও কটেজ গড়ে উঠেছে।
পাহাড়ে প্রথম পাঁচতারকা হোটেল :পাহাড়ে প্রথম পাঁচতারকা হোটেল হচ্ছে বান্দরবানে। বান্দরবান থেকে ৪৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে নীলগিরিতে তৈরি হচ্ছে ‘ম্যারিয়ট হোটেল’। হোটেলের পাশাপাশি সিঙ্গাপুরের আদলে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে ভ্রমণের জন্য কেবল কার, ১২টি পৃথক ভিলাসহ পরিকল্পিত বিনোদন কেন্দ্রও গড়ে তুলছে সিকদার গ্রুপ। এ ব্যাপারে গত ১২ সেপ্টেম্বর সিকদার গ্রুপ ও সেনাকল্যাণ ট্রাস্টের মধ্যে ৩৫ বছরের একটি চুক্তি হয়েছে। হোটেলটি বাস্তবায়িত হলে পাহাড়ে পর্যটনশিল্পের বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে সংশ্নিষ্টরা মনে করছেন। অন্যদিকে নীলগিরি ভ্রমণের সুবিধার্থে বান্দরবান-নীলগিরি রুটে বিশেষ বাস সার্ভিসও চালু হয়েছে। হোটেল হিলভিউর কর্ণধার কাজল কান্তি দাশ বলেন, ২৭ ফেব্রুয়ারি বিশেষ বাস সার্ভিস চালু হওয়ায় পর্যটকদের ভোগান্তি কমে এসেছে। প্রতিদিন সকালে পর্যটকরা দুটি বাসে শৈলপ্রপাত, চিম্বুক হয়ে নীলগিরি ঘুরে বিকেলে ফিরে আসতে পারছেন।
পারকি সিবিচ ও খৈয়াছড়া ঝরনা :পর্যটনশিল্পের বিকাশে এগিয়ে এসেছেন আনোয়ারা ও মিরসরাই উপজেলার দুই ইউপি চেয়ারম্যান। ১৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য আনোয়ারার পারকি সিবিচের পাশেই ‘পারকি বিচ লুসাই পার্ক’ নামে সাত একর জায়গার ওপর তিনটি কটেজ ও একটি রিসোর্ট তৈরি করেছেন স্থানীয় বারশত ইউপি চেয়ারম্যান কাইয়ুম শাহ। এ রিসোর্টের ভেতর পিকনিক পার্টির পাশাপাশি বারবিকিউ, ফায়ারক্যাম্প ও তাঁবুবাস করার সুযোগ পাচ্ছেন পর্যটকরা। অন্যদিকে মিরসরাইয়ের অপরূপ খৈয়াছড়া ঝরনায় আসা পর্যটকের জন্য ‘চেয়ারম্যান পাহাড়েও’ তৈরি হচ্ছে রিসোর্ট।
প্রতিদিন শত শত পর্যটক ঝরনায় ভ্রমণে আসায় তাদের প্রাকৃতিক পরিবেশে থাকা, খাওয়া ও বিনোদন দিতে চেয়ারম্যান পাহাড় ঘিরে ঢাকার কোম্পানি একটি পরিকল্পিত পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান খৈয়াছড়া ইউপি চেয়ারম্যান জাহেদ ইকবাল চৌধুরী। চেয়ারম্যান কাইয়ুম শাহ বলেন, কয়েক কোটি টাকা ব্যয় করে ‘পারকি বিচ লুসাই পার্ক’ রিসোর্ট তৈরি করা হয়েছে। পারকি সিবিচকে এগিয়ে নিতে এ রিসোর্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। অন্যদিকে খাগড়াছড়িতে স্থানীয় এমপি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা পর্যটকদের সেবা দিতে একটি বিনোদন কেন্দ্র ও রিসোর্ট তৈরি করেছেন।