নিউজ ডেস্ক:
তিস্তা সেচ প্রকল্পের উন্নয়নে সরকার প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটতে চলেছে দেশের উত্তরাঞ্চলের চাষাবাদে। প্রতি বছর অতিরিক্ত এক হাজার কোটি টাকার ফসল উৎপাদনসহ খরা ও ভূগর্ভস্থ পানির সংকট মোকাবিলায় এ প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, দেশের সবচেয়ে বড় সেচ প্রকল্প ‘তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের’ প্রায় ৭৪০ কি.মি. সেচ খাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার ১২টি উপজেলায় বর্তমানে প্রতি বছর শুস্ক মৌসুমে প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে নিরবচ্ছিন্ন সেচের পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া আমন মৌসুমেও সম্পূরক সেচ প্রদান কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
তবে সময়ের পরিক্রমায় মাটি দিয়ে বানানো সেচ খালগুলো বিশেষ করে ভাটির দিকে অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এতে সেচযোগ্য এলাকা ৮৪ হাজার হেক্টর থেকে প্রায় ৫০ হাজার হেক্টরে নেমে এসেছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) চাইছে সেচ খালগুলোর ডাইক পুনর্বাসন ও শক্তিশালী করতে। পাশাপাশি আরও প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর নতুন এলাকা সেচের আওতায় এনে মোট সেচযোগ্য এলাকাকে প্রায় এক লাখ চার হাজার হেক্টরে উন্নীত করতে। এ জন্য পাউবো একটি প্রকল্প প্রণয়ন করেছে।
পাউবো সূত্র জানাচ্ছে, এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ফসলের নিবিড়তা বাড়বে শতকরা হিসাবে ২৩১ থেকে ২৬৮ ভাগ। এর ফলে প্রতি বছর আরও এক লাখ টন ধান ও পাঁচ লাখ ২৭ হাজার টন খাদ্যশস্য উৎপাদন করা সম্ভব। যার বাজারমূল্য প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। এতে কর্মসংস্থান হবে ৮৬ লাখ মানুষের। ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে এলাকার পরিবেশ ও ভূগর্ভস্থ পানির স্তরে এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষার ক্ষেত্রে। আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটবে প্রকল্প এলাকার ৩০ লাখের বেশি মানুষের।
সম্প্রতি একনেকের বৈঠকে তিস্তা সেচ প্রকল্পের কমান্ড এলাকার সম্প্রসারণ ও পুনর্বাসন প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এ প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে এক হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে চলতি বছর থেকে ২০২৪ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে নীলফামারী সদর, সৈয়দপুর, কিশোরগঞ্জ, ডিমলা ও জলঢাকা; দিনাজপুরের পার্বতীপুর, খানসামা ও চিরিরবন্দর এবং রংপুর সদর, গঙ্গাচড়া, তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জে।
খলেয়া গঞ্জিপুরের কৃষক আব্দুল মোত্তালেব বলেন, ‘তিস্তার সেচ ক্যানালের পানি দিয়া হামরা বোরো আবাদ করছি। এর পরও বৃষ্টি না হইলে ক্যানালের পানি দিয়া আমন লাগামো। সারাবছর হামরা ক্যানালের পানি দিয়াই আবাদ করি। আবাদও ভালো হয়, টাকা খরচও কম। এই ক্যানালের পানি আরও দূরে নিয়া যাওয়ার পাইলে হামরা আরও বেশি বেশি আবাদ করবার পারমো।’
অপর কৃষক মফিজার রহমান বলেন, ক্যানেলের পানি দিয়ে হাঁস ও মাছ চাষ করছি। ক্যানেল থেকে একবার খামারের পুকুরে পানি দিলে থাকেও অনেক সময়। হাঁস ও মাছ চাষ করে আমার ভাগ্য বদলে গেছে।
মমিনপুরের বাসিন্দা কৃষক আব্দুর রহিম বলেন, অনেক জায়গায় সেচ ক্যানেল নষ্ট হয়ে গেছে। সেগুলো মেরামত করা দরকার। সারাবছর ক্যানেলগুলোতে যেন পানি থাকে, সে ব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছি।
পাউবো উত্তরাঞ্চলপ্রধান জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ সমকালকে বলেন, তিস্তা সেচ প্রকল্পের কমান্ড এলাকার সম্প্রসারণ ও পুনর্বাসন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এখানকার কৃষি অর্থনীতি পাল্টে যাবে। এ অঞ্চলে দরিদ্রতা কমবে। মূল পরিকল্পনা অনুসারে তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের সর্বমোট এলাকা সাড়ে সাত লাখ হেক্টর এবং সেচযোগ্য এলাকা পাঁচ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর। প্রথম পর্যায়ে সেচ কাঠামোসহ এক লাখ ২৬ হাজার হেক্টর কমান্ড এলাকায় সেচ নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছে। প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের আওতায় পাঁচ লাখ ৯৬ হাজার হেক্টর কমান্ড এলাকায় আরও চার লাখ ২৮ হাজার ৯৪ হেক্টর সেচযোগ্য এলাকা সেচ সুবিধার আওতায় আনার সুযোগ রয়েছে।